• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* ঢাবির রাজনীতিবিষয়ক কমিটির কার্যক্রম শুরু * ফার্মগেটে মানসী প্লাজায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট * লাইসেন্সের দাবিতে রবিবার বিক্ষোভ করবে রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক শ্রমিকরা * অক্টোবরে সড়কে ঝরেছে ৪৭৫ প্রাণ * এক বছরের মধ্যে ৬১.১% মানুষ নির্বাচন চান, সব সংস্কার শেষে ৬৫.৯%: জরিপ * চীনা দূতাবাসের আউটস্ট্যান্ডিং প্রমোশনাল পার্টনার অ্যাওয়ার্ড পেল অ্যাবকা * রোববার ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় * বাংলাদেশের জার্সিতে হামজার খেলা নিয়ে শঙ্কা * ঝাড়খণ্ডে জনমুক্তি-কংগ্রেস, মহারাষ্ট্রে বিজেপি জোটের জয় * গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

চট্টগ্রামের হামিদ আবিষ্কার করলেন মশকনিধনের অত্যাধুনিক যন্ত্র

news

নাম - ছবি : সংগ্রহীত


এনএনবিডি ডেস্ক: জিকা ভাইরাস, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ যে কোনো প্রাণঘাতী জিবাণুবাহী মশাকে সহজেই নিধন করার যন্ত্র আবিষ্কার করে সম্প্রতি দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়েছেন তরুণ বিজ্ঞানী এম এ হামিদ। প্রাণঘাতী জিকা ভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্ব যখন উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায়, ঠিক তখন এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকার সহজ পন্থা উদ্ভাবন করেছেন চট্টগ্রামের এই বিজ্ঞানী। সাধারণত জিকা ভাইরাস, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো ভয়ানক ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে মশার মাধ্যমে। এই মশা নিধনে এতদিন বাংলাদেশসহ পৃথিবীর দেশে দেশে তরল ওষুধ, কয়েল, বৈদ্যুতিক জালসহ নানা উপকরণ ব্যবহূত হয়ে আসছে। যা কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান আশ্রিত এবং জনস্বাস্থ্য ক্ষতিকর। তবে বিজ্ঞানী ও গবেষক হামিদ তার উদ্ভাবিত যন্ত্রকে জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ বলে দাবি করছেন। হামিদের উদ্ভাবিত নতুন মশকনিধন যন্ত্রটি গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি পায়। চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ গেজেটে এটি প্রকাশ করা হয়। নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে নতুন এই যন্ত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এইচইসি মসকিটো কিলার’ (হামিদ ইলেকট্রো-কেমিক্যাল মসকিটো কিলার)। শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, হামিদের ইলেকট্রো-কেমিক্যাল মশকনিধন যন্ত্রটি উদ্ভাবনের কথা। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশ এইচইসি মসকিটো কিলার সম্পর্কে জেনেছে।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামের আবদুল হাকিম মেম্বারের বাড়ির সাবেক সরকারি কর্মকর্তা শামসুল হক ও মাহমুদা খাতুনের সন্তান এম এ হামিদ। তিনি ১৯৯৮ সালে হাওলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ২০০০ সালে উপজেলার কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেলিযোগাযোগ বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন তিনি। এ ছাড়া জেনারেল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন হামিদ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হিসেবে ঢাকায় এইচইসি স্টার টেকনোলজির দায়িত্ব পালন করছেন। নিজের এ উদ্ভাবন প্রসঙ্গে হামিদ জানান, ২০১১ সাল থেকে তিনি গবেষণা শুরু করেন। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে একপর্যায়ে সফল হন। ওই বছরের ২ জুন শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্যাটেন্ট বিভাগে আবেদন করেন তিনি। ২৪ জুন তার আবেদন গ্রহণ করা হয়। তার প্যাটেন্ট নম্বর ১৫০/২০১৪। ৩৫ বছর বয়সী হামিদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে মশা নিধনে ইলেকট্রনিক, ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ও রাসায়নিক যেসব উপকরণ-যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করা হয়েছে তার থেকেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হচ্ছে আমার উদ্ভাবিত ইলেকট্রো-কেমিক্যাল মসকিটো কিলার।’ তিনি জানান, সরকার তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটির স্বীকৃতি দেওয়ার আগে প্রায় ১৮ মাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খোঁজখবর নেয়। এরপর কোথাও না থাকায় যন্ত্রটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

এইচইসি মসকিটো কিলার সম্পর্কে এম এ হামিদ জানান, মশা নিধনের এ যন্ত্র এবং ব্যবহূত রাসায়নিক থেকে কোনো বিষক্রিয়া ছড়াবে না। বরং যন্ত্রটি মশাকে আকৃষ্ট করবে। যন্ত্রটির মধ্যে যে রাসায়নিক ব্যবহূত হয়েছে তা এক ধরনের খাদ্য। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে যেভাবে মশা আক্রমণ করে, ঠিক সেভাবে মানুষ মনে করে ওই যন্ত্রটির সংস্পর্শে চলে আসবে মশা। এক ফুট উচ্চতা এবং ছয় ইঞ্চি প্রশস্ত (টেবিল লাইটের আকৃতি) এই যন্ত্রটিতে পাঁচ ওয়াটের একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব আছে। বৈদ্যুতিক সুইচে যন্ত্রটি লাগিয়ে দিলে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে মশা নিধন শুরু হয়ে যাবে। দুই হাজার বর্গফুটের মধ্যে যত মশা থাকবে সব মশা যন্ত্রের ভিতর ঢুকে যাবে। যন্ত্রটি মানবদেহের মতো মশাকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় এ যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুত্ ছাড়াও ব্যাটারি দিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা চলবে। যন্ত্রটির ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম। বিদ্যুত্ খরচ হবে মাত্র সাত ওয়াট। একটি রিফিল দিয়ে (রাসায়নিক দ্রব্য) চার মাস চলবে। এর মূল্য ১০০ টাকা। একটি রিফিলসহ যন্ত্রটির এককালীন মূল্য দুই হাজার টাকা। চার মাস পরপর রিফিল পরিবর্তন করতে হবে। যন্ত্রটির রয়েছে এক বছরের ওয়ারেন্টি। হামিদ বলেন, এ যন্ত্রটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে— এটি ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থমুক্ত, বিষাক্ত ধোঁয়াহীন, শব্দহীন, কয়েল ও স্প্রের মতো বায়ু দূষণ করে না, দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব। সহজে বহনযোগ্য, বিদ্যুত্সাশ্রয়ী ও স্থায়ীভাবে মশা নিধন করে। যন্ত্রটির রয়েছে এক বছরের ওয়ারেন্টি। হামিদ জানান, এর মধ্যে চীনে গিয়ে ওই দেশের সরকারের কাছে তার প্যাটেন্ট জমা দিয়েছেন। সেখানে নিয়মিত যোগাযোগের জন্য হার্মেস সান করপোরেশন লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছেন গত বছরের ১৫ মে। নিজ উদ্ভাবিত যন্ত্র ব্যবহার করে মশকনিধন বিষয়ে ব্রাজিল ও আমেরিকান দূতাবাসের সঙ্গে হামিদ অনলাইনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন বলে জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওই দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ‘অর্থের অভাবে নতুন এই যন্ত্র বাজারজাত করতে পারছি না। আমি গবেষণা করে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছি, কিন্তু আমার পক্ষে বাজারজাত করা সম্ভব নয়। তবে আমি স্বল্প পরিসরে কিছু যন্ত্র বানিয়ে এলাকার আশপাশের মসজিদ ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে সরবরাহ করেছি। এতে যন্ত্রটির আরও চাহিদা তৈরি হয়েছে।

মালয়ে শিয়ায় যন্ত্রটির উদ্বোধন

এইচইসির প্যাটেন্ট স্বীকৃতি
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদফতরের পরীক্ষক (প্যাটেন্ট) মো. হাবিবুর রহমান জানান, ‘এম এ হামিদ যন্ত্রটি আবিষ্কারের কথা জানিয়ে আমাদের কাছে আবেদন করেছিলেন। এরপর আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখেছি, মশকনিধনের অত্যাধুনিক এ যন্ত্র বিশ্বের অন্য কোথাও নেই। তাই আমরা এই আবিষ্কারের প্যাটেন্ট স্বীকৃতি দিয়েছি।’ বাজারজাতকরণ প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সরকার প্রতি বছর শত শত প্যাটেন্ট দেয়। এগুলো প্রচার করতে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে। আমরা উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দিই। এটি বাজারজাতকরণের বিষয়টি আমাদের আওতাধীন নয়।’

এইচইসি নিয়ে মালয়েশিয়া
গত নভেম্বরে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের ভিস্তানা হোটেলের বলরুমে বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধি ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে এইচইসি মশকনিধন যন্ত্র বাজারজাতকরণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। ‘ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্টিফিক ডিসকাশন অ্যান্ড লাউন্সিং অব এ নিউ ইনভেনটেড মসকিউটো কিলিং ডিভাইস, মালয়েশিয়া’ অনুষ্ঠানে যন্ত্রের উপকারিতা তুলে ধরেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. কবিরুল বাশার। ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, প্রাণঘাতী জিকা ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব যখন উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় ভুগছে। ঠিক তখনই এ ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকার পন্থা উদ্ভাবন করেছেন মো. আবদুল হামিদ। ক্ষতিকর মশার কয়েলের পরিবর্তে এটি একই সঙ্গে কার্যকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। বলেন, কয়েলে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করায় জনস্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল উদ্বিগ্ন। অন্য উপকরণগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তবে হামিদের উদ্ভাবিত যন্ত্র জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ।

মশা মারার এ যন্ত্র ও ব্যবহূত রাসায়নিক থেকে কোনো বিষক্রিয়া ছড়াবে না। বরং যন্ত্রটি মশাকে আকৃষ্ট করবে। আমার বিশ্বাস এইচইসি মসকিটো কিলার দিয়ে জিকা ভাইরাসের বাহক এডিস মশা নিধন হবে।


এনএনবিডি ডেস্ক

মন্তব্য করুন