দক্ষমানবসম্পদ গঠনের দায়ভারকার?
নাম - ছবি : সংগ্রহীত
হিসাব বিজ্ঞানের সমীকরনে অ=খ বলাহয়। অ= Asset বা সম্পদ অপরদিকে খ= Liabilities বা দায়কেবুঝায়। একজনশিক্ষিত ছেলে/মেয়ে পরিবারের জন্য যেমন আর্থিক ও সামাজিক সুনাম ও সুখ্যাতি বয়ে আনে অপরদিকে যদি তিনি/সে নিদিষ্ট শিক্ষাজীবন শেষ করে বেকারজীবন কাঁটায় তবে তিনি/সে হবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝাবা দায়। ঐ ব্যক্তিটি পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরত আনাতো দুরের কথা পুরো পরিবারটিকে হতাশা ও নানা ধাননের সমস্যার মধ্যে নিপাতিত হতে হয়। তখন সে হয় পরিবারের, সমাজের তথা রাষ্ট্রের জন্য দায়বা বোঝা। তাই দায় কাটিয়ে আমাদের মানব ও মানবীদের যথা উপযুক্ত শিক্ষা প্রশিক্ষন মানবিক ও মানবোতা বোধের শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করতে পারলে তারা হবে দেশের জন্য সম্পদ। আমরা পাব দায় থেকে মুক্তি অর্থ্যাৎ বৃদ্ধি পাবে সম্পদ আর সেই সম্পদের নাম হবে মানবসম্পদ। সময় এসেছে এই বিশাল আকারের মানব গোষ্টিকে মানবসম্পদে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতির গতিমুখ পরিবর্তনের। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে সিঙ্গাপুর, জাপান, চীন, তাইওয়ান ও কোরিয়াসহ অনেক দেশ সমুহ। এই সকল দেশসমূহ অতি অল্পসময়ে তাদের উন্নয়নের মূল অংশিদার হিসাবে কাজ করেছে তাদের দেশের যুবমানব সম্পদ।
নদীমাতৃক বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীন হবার পর সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য ছিল মাত্র ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গাণিতিক সূত্রে হিসাব করলে ১৬ কোটি মানুষের জন্য আনুমানিক ১৪/১৫টি পাবলিকবিশ্ববিদ্যালয় হলেও হত। কিন্তু এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষের জন্য শিক্ষাপদ্বতি, শিক্ষারউপকরণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গড়ে উঠেছে সরকারী পর্যায়ে ৩৮টি পাবলিকবিশ্ববিদ্যালয় ও ৯৬টি প্রাইভেটবিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ইন্সটিটিউট, চাটার্ড এ্যাকাউন্টেন্সিফার্ম, কস্ট ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্টেন্সিফার্মসহ শিক্ষালাভের অনেক সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। তার পরেও কি আমরা পেরেছি স্বশিক্ষিত, সুশিক্ষিত ও দক্ষ মানব সম্পদে নিজেদের পরিনত করতে? ১৯৯২ সালের অনুমোদিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আজ তার বেড়েছে আকার ও ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা, বেড়েছে অবকাঠামোর উন্নয়ন ও পরিবর্তন।
কিন্তু দুঃখজনকহলেও সত্য আমাদের দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মান অনেক ক্ষেত্রে উন্নত নয়। পাশাপাশি আর্ন্তজাতিকমানের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা কি পৌছাতে পেরেছি? কারণ শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থাকে সেশনজট, রাজনীতি, স্বজনপ্রীতি, গবেষণা ও শিক্ষায় মনোযোগী নাহওয়া, কতগুলি কারণ। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকে শিক্ষাকেপন্য বানিয়ে আর্কষনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে, মুনাফা লোভী চিন্তাকরে, স্বজনপ্রীতি নিয়োগ প্রদান করে, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাদানের কর্মাশিয়াল নীতি গ্রহণকরে, কম টাকায় শিক্ষক নিয়োগসহ অবকাঠামোর উন্নতি সাধন নাকরে, গবেষনার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা থেকে শিক্ষকদের বিরত রেখে আইনের ফাঁক দিয়ে নিজেদেরকে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ও মনোভাব থেকে বিরত হয়ে ব্যবসায়ী মনোভাবেরুপান্তরিতকরণ অন্যতম কিছু কারণহতে পারে। যা পত্রিকায় অনেক সময় প্রতীয়মান হয়ে থাকে। দেশ আজ ক্ষুধা, দারিদ্র ও অর্থনৈতিক মঙ্গা থেকে নিজেদেরকে বিশ্বেরমান চিত্রে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে ও উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হতে কাজ করছে।
রপকল্প -২০২১ বাস্তবায়নে যদি এই শিক্ষিত ও যুব সমাজকে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত করা না যায় তবে দেশের অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগতে পারে। ১৬ কোটি জনসংখ্যার ৫০ লাখ হতদরিদ্র, প্রায় ২ কোটি বেকার। তাদেরকে কর্মমূখী ও বাস্তব জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। করতেহবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও অর্থনীতির ব্যবস্থা। যেমন- আধুনিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষনপদ্বতি, প্রযুক্তি ও ইংরেজি শিক্ষায় পারদর্শীতা, নিত্য নতুন গবেষনা ও উদ্ভাবনীধর্মী পড়াশোনা ও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা। পাশাপাশি থাকতেহবে আধুনিক সভ্যতার অন্যত মহাতিয়ার ই সার্ভিস ও ডিজিটালাইজেশনের জ্ঞানগ্রহণে অগ্রাধিকার প্রদানকরে শিক্ষাব্যবস্থায় চালুকরতেহবে জাতিরপ্রতি সহানুভুতি ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টিতে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আর্দশিকজ্ঞান পাঠদানের বিষয়সমূহ। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে নতুন নতুন কোর্স ও গবেষনা উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিতকরতে হবে। শুধুমাত্র সমাজ ও দেশের মানুষকে দেখানোর জন্য নিজেকে সমাজ সেবক ও শিক্ষাবিদের তালিকায় নাম লেখানোর জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে হবেনা। সেটার উন্নয়ন, অগ্রগতি ও আর্ন্তজাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করতে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রনে আপনার দায়িত্বের মধ্যে আনতে হবে।
শিক্ষা একটি গতিশীল ও চলমান প্রক্রিয়া। তাই এই খাতে গতিশীলতা আনতে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষাপদ্বতি ও পাঠদানের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। শুধুমাত্র সরকারী নিয়মনীতি ও আইনের ফাঁক রোধ নাকরে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্বমানের শিক্ষা, জ্ঞান প্রযুক্তি ও দক্ষতার সমন্বয় সাধন করতে হবে। আমাদের প্রজন্মকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত ও জ্ঞান দান করতে হবে। যাতে তারা বিশ্বের যেকোন দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে প্রতিযোগীতা করে লালসবুজের পতাকা সমুজ্জল রাখতে পারে। পাশা পাশি তাদেরকে সততা, নিষ্ঠা, দেশেরপ্রতি দায়বদ্বতা, নৈতিকমূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উৎজীবিতকরতে পারলে আমরা দেশের কাংখিতচূড়ায় পৌছাতে পারব। আমরাও হব বিশ্বের দরবারে উন্নয়ন ও শিক্ষাযাত্রায় এক রোলমডেল। আর এ কাজে সহযোগীতায় প্রথম ও প্রধান শক্তি শিক্ষকসমাজকে হতেহবে আরোযত্নশীল ও দায়িত্ববান। শিক্ষকদের জন্যও করতেহবে চাকুরী নীতিমালা, নিরাপত্তা, পেনশনসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা। দিতেহবে গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ ও পরিবেশ। কিন্তু আমরাকি সেটা করতে পেরেছি? সময় এসেছে দেশকে কাঁধে কাঁধমিলিয়ে এগিয়েনিতে রূপকল্প- ২০২১ বাস্তবায়নের।
সাংবিধানের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে একটি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে দেশ ও দেশের সুনামরক্ষার মধ্যে দিয়ে‘‘জাতীয়শিক্ষানীতি ২০১০” এর বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে সোনারবাংলাকে আরোও সমৃদ্ব ও উন্নত রাষ্ট্রেরদিকে পরিচালিত করতে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক, পরিচালনা পর্ষদ, বুদ্বিজীবি, শিক্ষাবিদসহ সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ ও সহযোগীতা নিশ্চিতকরণ। আর একাজে সর্বাত্বকসহযোগীতা ও নিয়ন্ত্রণ করবে আমাদের দেশের অভিভাবক ও প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখহাসিনা ও তার সরকারের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ‘‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০” এর মূললক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ও উন্নতবাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছেতা যেন বাস্তবায়িত হয়। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই ধরনের ক্ষমতা ও চিন্তাকরার মনোভাব প্রদান করুণ। আমরা যেন একটি দক্ষ মানবসম্পদ সম্পন্ন সোনার বাংলা তৈরি করতে পারি।
সৈয়দ নাজমুলহুদা
মন্তব্য করুন