• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* দেড় বছর পর নিউজিল্যান্ডের পাইলটকে মুক্তি দিল পাপুয়ার আদিবাসীরা * ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনের পতনের শংকা রাশিয়ার বিরোধী নেতা কারা মুর্জার * মধ্যপ্রাচ্যকে বড় যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন নেতানিয়াহু: ম্যাক্রোঁ * খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি পরিদর্শনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল * হিজবুল্লাহ কমান্ডার ইব্রাহিমের মাথার দাম ছিল ৭০ লাখ ডলার * বিচার বিভাগ থেকে যেন কোনো অবিচার না হয় : আইন উপদেষ্টা * পার্বত্য চট্টগ্রামে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি : তথ্য উপদেষ্টা * দিনাজপুর শহর জামায়াতের উদ্যোগে ওলামা মাশায়েখদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত * শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু * রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট

বার বার কেন শিক্ষকরা রাস্তায় নামেন

news

নাম - ছবি : সংগ্রহীত


বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আছেন টানা আন্দোলনে। দাবি আদায় না করে তারা ঘরে ফিরে যাবেননা। টানা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে আমরন অনশন কর্মসূচীতে।কিন্তু দাবি মানার কোন লক্ষণ নেই। শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসকে বিশ্বাস করছেননা তারা। তারা চান প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা। তবেই তারা পাঠদানে ফিরে যাবেন।কিন্তু প্রশ্ন দাড়িয়েছে,মানুষ গড়ার এই কারিগরদের কেন বার বার রাস্তায় নামতে হয়। অন্তর্নিহিত সমস্যাই বা কি ? আর তার সমাধানই বা কি? আমরা জাতি হিসেবে আমাদের এই মহান কারিগরদের কি একটু স্বস্তিতে বা সম্মানের সাথে রাখতে পারিনা?কিংবদন্তি শিক্ষক নেতা কাজি ফারুক আহমেদ জানান,গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাই একমুখী ও জাতীয়করণ করা প্রয়োজন। তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে থাকবেনা বৈষম্য। দেশের প্রতিটি শিশুই সমান সুযোগ পাবে শিক্ষার মত মৌলিক প্রশ্নে।

এমপিওভুক্তির (মন্থলি পেমেন্ট অর্ডার) দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সামনে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে চলছে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আন্দোলন। প্রথমে অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে  আন্দোলন শুরু হলেও ৩১ ডিসেম্বর থেকে তা আমরণ অনশনে রুপ নিয়েছে দাবি না মানার কারনে।অব্যাহত রয়েছে এই আমরন কর্মসূচী। তীব্র শীতের মধ্যে দিনের পর দিন অনশনে থেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন আন্দোলনরত  শিক্ষকরা।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ২০০৬ সালে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন নন-এমপিও (সরকারি বেতন-ভাতা না পাওয়া) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষরা। প্রাথমিক পর্যায়ে বিচ্ছিন্নভাবে মানববন্ধন এবং আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল আন্দোলন। তাদের এ আন্দোলনের মধ্যে ২০১০ সালে এক হাজার ৬০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। কিন্তু শিক্ষকদের দাবি ছিল, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় আনা। কিন্তু সরকার শিক্ষদের এ দাবিতে সাড়া না দেয়ায় ২০১১ সালে ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন করেন নন-এমপিও শিক্ষকরা। মূলত তখনই শিক্ষকদের এ আন্দোলন একটি সম্মিলিত রূপ পায়। কিন্তু তখন পর্যন্ত সব জেলায় শিক্ষকদের কমিটি ছিল না।

২০১২ সালে গঠন করা হয় জেলা কমিটি। সেই সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় কমিটি সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করে। ২০১২ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিতে যান শিক্ষকরা। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে ব্যর্থ হন তারা। সেই সময় পুলিশি হামলায় আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষক।এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে সুবিধাজনক সময়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার জন্য শিক্ষকদের চিঠি দেয়া হয়। আলোচনার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১১ ডিসেম্বর। কিন্তু হঠাৎ করেই স্থগিত করা হয় সেই আলোচনা। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়নি শিক্ষকদের নির্ধারিত বৈঠকটি।২০১৩ সালে সংসদ সদস্যদের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান নন-এমপিও শিক্ষকরা। কিন্তু তাদের ওপর পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে মারাত্মক আহত হন পটুয়াখালীর দুমকীর শিক্ষক সিকেন্দার আলী। পরে তিনি আহত অবস্থায় বাড়ি ফেরার পর মার যান। সিকেন্দার আলী মারা যাওয়ার পরই আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে শিক্ষকদের মধ্যে।সহকর্মী হারানোর বেদনা শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়ক ভ’মিকা পালন করে। এরপর তারা একের পর এক সভা-সমাবেশ করতে থাকেন।

শিক্ষকরা জানান,আন্দোলনের ধারাবাহিততায় ২০১৩ সালের শেষের দিকে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। তাদের দাবির বিষয়ে ৩ মাসের সময় চান তিনি। কিন্তু মাস পেরিয়ে বছর গড়ালেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি-আশ্বাসবাণীতেই কেটে যায় সে বছরটিও।২০১৪ সালে নির্বাচনের কারণে শিক্ষক আন্দোলনে কিছুটা ভাটা পড়ে। দেশে রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে চাপা পড়ে তাদের দাবি-দাওয়াও। ২০১৪ সালে বর্তমান সরকার আবার ক্ষমতায় এসেও তাদের দাবির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নেন আমরণ অনশনে যাওয়ার। ২০১৫ সালের অক্টোবরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে যান শিক্ষকরা। টানা ২৮ দিন অনশনের পর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপদস্থরা আশ্বাস দেন তাদের দাবি মেনে নেয়ার। সেই সময় নন-এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভূক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়।

বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা হবে এমপিওভূক্তির বিষয়টি। কিন্তু সেই ঘোষণা কার্যকর না হওয়ায় ২০১৭ সালের ১১ মে শহিদ মিনারে হাজার হাজার শিক্ষকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ। সেই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক। মহাসমাবেশে শিক্ষক নেতারা তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা। কিন্তু সরকার বারবার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন শিক্ষকরা। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারা। আর এরই প্রকাশ ঘটে গত ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। প্রথমে সংখ্যায় অল্প কয়েকজন শিক্ষক আন্দোলন শুরু করলেও দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গতি পায় সেই আন্দোলন। বর্তমানে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে এই শিক্ষক আন্দোলন।

নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপাতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না তারা। তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষকদের মধ্যে নানা ধরনের হতাশা কাজ করছে। তারা ক্ষুব্ধ ও হতাশায় ভুগছেন। অনশনের কারণে প্রতিদিন বহু শিক্ষক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে আমাদের জীবন গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা বাড়ি ফিরব না। নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় ভূষণ রায় বলেন, ২০০১ সালে আমি যখন শিক্ষকতা শুরু করি তখন প্রতিষ্ঠানের পারফরমেন্সের ওপর ভিত্তি করে এমপিওভুক্ত করা হতো। আর শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। সেই হিসেবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই সরকারি বরাদ্দ পাওয়ার দাবি রাখে। আর এ কারণেই আমি মনে করি চলমান আন্দোলনে দাবি যথাযথ যৌক্তিক।’

বর্তমানে আন্দোলনরত শিক্ষকরা তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন ২০০৬ সাল থেকে। কিন্ত এদেশে শিক্ষক আন্দোলনের ইতিহাস অনেক পুরনো।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যের সূত্র ধরে।অভিজ্ঞ শিক্ষক নেতারা বলছেন,শিক্ষা যেহেতু মৌলিক অধিকার তাই শিক্ষাব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন সার্বজনিন। জাতির প্রতিটি সন্তানই সমান সুযোগ পেয়ে বেড়ে উঠবে। সেইসাথে এই মহান পেশায় যারা জড়িত সেই শিক্ষকদের মধ্যেই বা কেন থাকবে বেতন এবং সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য?এটা নিরসন প্রয়োজন। এদেশে শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই রয়েছে বহুবিধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি,বেসরকারি,কিন্ডার গার্টেন,প্রি ক্যাডেট ইত্যাদি।

মাধ্যমিক স্তরে রয়েছে সরকারি,বেসরকারি বৈষম্য। আবার বেসরকারির মধ্যে এমপিও,নন এমপিও সহ বহু প্রকারভেদ।আবার রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা। তার মধ্যেও রয়েছে তা তরিকা।মাদ্রাসা শিক্ষা মূল শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার উদ্যোগের কথা শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া মন্থর।কেন এসব কি এক জায়গায় আনা যায়না?সদিচ্ছা থাকলে সেটা অবশ্যই সম্ভব বলে উল্লেখ করেন অভিজ্ঞ শিক্ষক নেতারা। তাহলে মানুষ গড়ার এই কারিগরদের হয়তো বার বার রাস্তায় নামতে হবেনা।

শহীদুল ইসলাম

মন্তব্য করুন