রাজধানীর অলিতে গলিতে শীতের পিঠা
নাম - ছবি : সংগ্রহীত
গ্রামের প্রচণ্ড শীতের পাশাপাশি ঢাকা শহরেও শীত ছুঁয়েছে। তবে শহরেই যাদের নিত্য বাস তাঁরা হয়তো কনকনে শীতে মায়ের হাতের খেঁজুরের রস কিংবা গুড়ের পিঠার স্বাদ এখনো নিতে পারেননি। কিন্তু পিঠাপুলির এই দেশে থেকে শীতের ঐতিহ্যবাহী পিঠা-মাঠা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না। শহরের অলিতে-গলিতে কিংবা রাস্তার মোড়ে শীতের বিকেল-সন্ধ্যায় গন্ধ ছড়ায় ধোঁয়া উড়া নানা স্বাদের বাহারি পদের পিঠা। আর তাই রাস্তা কিংবা গলিতে যুগল, বন্ধুরা বা পরিবারের সবাই একসঙ্গে মেতে উঠে পিঠা খাওয়ার উৎসবে। শীতকে ঘিরেই শহরের চরদিকে চলছে এখন পিঠা উৎসব।
রাজধানী ঢাকাতে শীতের রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা খাওয়ার সুযোগ না থাকলেও হাতের নাগালেই মিলবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে গরম গরম চিতই, ভাপা আর তেলের পিঠা। খেজুর বা আখের গুড় দিয়ে ভাপা আর তেলের পিঠা তৈরি করে বিক্রি করে বিক্রেতারা। ঢাকার রাস্তায় চিতই আর ভাপা পিঠাই বেশি বিক্রি হয়। কয়েক বছর ধরে এই পিঠার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভর্তার বৈচিত্র্যতা। যে দোকানে নানা পদের বৈচিত্র্যময় ভর্তা পাওয়া যায় সেই দোকানেই বিক্রি বেশি।
শীতের মৌসুমে গড়ে উঠা এসব পিঠার দোকানিরা পিঠা বিক্রির ওপর নির্ভর করেই বহু পরিবার চালাচ্ছে তাদের সংসার। অনেকে আবার অন্য কাজের পাশাপাশি করেন পিঠা বিক্রি। কোনো কোনো দোকানি প্রতিদিন দুই থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে। যেদিন খুব কম বিক্রি হয় সেদিনও এক হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয়। বিকেল থেকে শুরু হয় বেচাকেনা, চলতে থাকে রাত ১১টা পর্যন্ত। এসব তথ্য উঠে এসেছে কয়েকজন দোকানির মুখ থেকেই।
ফাস্টফুড সংস্কৃতির এই যুগেও শীতের গরম পিঠার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নগরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে গড়ে ওঠা মৌসুমি পিঠাপুলির দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ই তার বড় প্রমাণ। বিকেল হতেই দোকানিরা তাঁদের পিঠার পসরা বসান ফুটপাথে কিংবা অলি-গলিতে। উনুনে আগুন জ্বেলে একের পর এক পিঠা বানাতে ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। অন্যদিকে ক্রেতারা গরম গরম পিঠা সাবাড় করতে থাকেন। মহানগরে বসেও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খাবার উপভোগ করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না অনেকে। এসব দোকানে পাঁচ টাকায় চিতই, তেলের পিঠা ও পাঁচ থেকে ১০ টাকায় ভাপা পিঠা পাওয়া যায়। চিতই পিঠার সঙ্গে সর্ষে, ঝাল ও শুঁটকি ভর্তার পাশাপাশি আট থেকে ১০ ধরনের ভর্তা মেলে ফ্রিতে। মৌসুমি এই পিঠা তৈরি ও বিক্রি করতে দোকানিরা বেশ উপভোগ করেন।
রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২, সোবাহানবাগ, কলাবাগান, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, কাজীপাড়া, মিরপুর, মহাখালী, বাংলামোটর, শাহাবাগ, টিএসসির মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ফুটপাতে প্রায় মোড়ে শীতের সন্ধ্যায় মানুষ আয়েশ করে পিঠা খেতে যান। এ ছাড়া পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারেও রয়েছে বেশ কিছু পিঠাপুলির দোকান। মৌসুমি চিতই ভাপা ছাড়াও বিভিন্ন রকমের নারিকল পুলি পাওয়া যায় এখানকার দোকানগুলোতে।
শাহাবাগের মোড়ে পাবলিক লাইব্রেরির ঠিক গেটের মুখে পিঠা খেতে খেতে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সজিব নামে একজন ছাত্রের সাথে। তিনি বলেন, ‘যখন গ্রামে ছিলাম তখন শীতের সকালে আম্মু প্রায়ই খেঁজুরের রস বা গুড় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করতেন। সকালের নাস্তা হিসেবে শীতের পিঠার সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। কিন্তু ঢাকাতে এসে সেই সুযোগ তো আর পাই না। তাই রাস্তার মোড়ে এসে সন্ধ্যার সময় গুড়ের তৈরি ভাপা পিঠা থেয়ে ওই স্বাধ নেওয়ার চেষ্টা করছি। আসলে পিঠা তো আমাদের ঐতিহ্য, এটাকে রক্ষা করা উচিত আমাদের।‘
পিঠা থেতে আসা শহরের আরো অনেক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের প্রতিটি অলিতে গলিতে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিকেল থেকেই বসছে পিঠার দোকান। নগরীর কমবেশি সবাই দোকানে তৈরি হওয়া শীতের পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন। অনেকে পিঠা থেয়ে সন্ধ্যার নাস্তা সারছেন। একটা উৎসব মুখর পরিবেশে সবাই এক সাথে পিঠা খেতে ভালোই লাগে।
রাজধানীর সোবাহানবাগ এলাকায় ছয় বছর ধরে পিঠা বিক্রি করে আসা ফাতেমা বেগম নামের বিক্রেতার সাথে কথা হয়। তিনি জানান, বাসা-বাড়িতে রান্নার কাজ করি। সাথে ঠয় বছর ধরে পিঠা বিক্রি করি। প্রতিদিন পাঁচ শত টাকার মতো লাভ হয়, বেশিও হয় কখনো কখনো। তবে শুধু ভর্তা বানাতে অনেক বেশি খরচ হয়ে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার টিএসসি মোড়ের রহিম হোসেন নামের এক বিক্রেতার সাথে কথা হয় পিঠা খেতে খেতে। তাঁর দোকানে বেশ ভিড়। প্রতিদিন বিক্রি করেন দুই থেকে টার হাজার টাকা। প্রতিদিন হাজার টাকার বেশি লাভ হয় বলেও জানান এই বিক্রেতা। তিনি আরো বলেন, ‘এই যে দেখছেন কয়েক ধনের ভর্তা আছে এখানে, যত বেশি ভর্তা থাকে বেচাকেনা তত বেশি হয়। বিশেষ করে চিতই পিঠার সাথে ভর্তা না হলে সস্তি করে খেতে চায় না খদ্দেররা।”ড
স্টাফ রিপোর্টার:
মন্তব্য করুন