ছবি-প্রতীকী
আমাদের দেশের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্নটা একেবারে সর্বসাম্প্রতিক নয়। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই প্রশ্নটা অনাকাক্সিক্ষতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীনতাত্তোর কালে দেশে প্রভূত সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হলেও এসব প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য অর্জনে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। ফলে আমাদের শিক্ষার মানহীনতার প্রশ্নটা দূর করা সম্ভব হয়নি বরং দীর্ঘকালের পরিক্রমায় এই প্রশ্নের মাত্রাটা আরো বেড়েছে। আর এ থেকে মুক্ত থাকে নি দেশের উচ্চশিক্ষাও। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও নতুন প্রজন্মের বিশ^মানের শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে দেশে বিপুল সংখ্যক পাবলিক ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও অপ্রাপ্তিটা আমাদের মোটেই পিছু ছাড়েনি। গাণিতিকহারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়লেও মানহীনতা আমাদের শিক্ষাকে প্রায় প্রাণহীন কওে তুলেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নি¤œমানের ও লক্ষ্যহীন শিক্ষার কারণেই একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দৌড়ে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি। যা আমাদের জাতিস্বত্ত¡ার ভিত্তিমূলকেই ক্রমেই দুর্বল করে দিচ্ছে।
শিক্ষা মানুষের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। জাতিসংঘ সনদেও শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কারণ, শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোন ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য যে সকল দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলো অর্জনে সহায়তা করা হয়। সাধারণ অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা। ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞানলাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলে। তবে শিক্ষা হল সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। বাংলা শিক্ষা শব্দটি এসেছে ‘শাস’ ধাতু থেকে। যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। অন্যদিকে শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ এডুকেশন এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘এডুকেয়ার’ বা ‘এডুকাতুম’ থেকে। যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা। আর দার্শনিক সক্রেটিসের ভাষায়, ‘শিক্ষা হল মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের বিকাশ।’ এরিস্টটল বলেন ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হল শিক্ষা’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, ‘শিক্ষা হল তাই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না বরং বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।’ তাই শিক্ষা ছাড়া মানবস্বত্ত¡ার স্ফুরণ ঘটানো কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা রীতিমত চোখে পড়ার মত।
আমাদের দেশের শিক্ষার সকল স্তরেই মানহীনতার প্রশ্ন থাকলেও সাম্প্রতিক সময় দেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ে মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর উচ্চশিক্ষা বলতে বিদ্যমান বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষাকেই মনে করা হয়। বস্তুত, বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে উচ্চশিক্ষা প্রদান করা সহ বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজকর্ম করা হয়ে থাকে এবং সাধারণত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয় সম্মান প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের চর্চার পাশাপাশি জ্ঞানের উৎপত্তিও ঘটে থাকে।
মূলত, যে দেশের শিক্ষা যত উন্নত সে দেশ জ্ঞান-মেধায় তত সমৃদ্ধ। আর জাতিকে জ্ঞান ও মেধায় সমৃদ্ধ করার কথা বলে এবং দেশে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে প্রভূত সংখক বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সে ইতিবাচক ধারা এখনো অব্যাহতই রয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় দেশে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬৯টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা গবেষণা। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের অর্জন খুব একটা ইতিবাচক নয়। কিউএস বিষয়ভিত্তিক আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে মাত্র দু’টি এবং এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে মাত্র ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। দেশের এতো বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে যাচ্ছেন উচ্চশিক্ষা নিতে। কেউ কেউ এটাকে মেধা পাচার হিসেবে অবিহিত করে থাকেন। কিন্তু এই বিষয়ে কেউ দায় নিতে রাজী নয়। আর এটিই হচ্ছে আমাদের শিক্ষার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
১৯৯২ সালে ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক আসন না থাকায় এবং দেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করার জন্য অনুমোদন দেয়া শুরু হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এরপর বিগত তিন দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৩টি। এই সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৬টিতে। অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে হাতেগোনা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা, পাঠদান, গবেষণায় অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু বেশিরভাগই পরিণত হয়েছে নাম ও সাইন বোর্ড সর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে গ্রহণযোগ্য ও শিক্ষানুরাগী উদ্যোক্তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সময়ের পরিক্রময়ায় এখন রাজনৈতিক বিবেচনা ও তদবিরের ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়ার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মুখ থুবরে পড়েছে শিক্ষার মান। কিন্তু তারপরও থেমে নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ার প্রবণতা। প্রতিবছরই একের পর এক বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হচ্ছে তাতে রাজধানীর ধানমÐি, বনানী, মিরপুর, উত্তরা, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতিমত হাট-বাজারে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানানিয়েছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আরো বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন রয়েছে অনুমোদনের অপেক্ষায়।
এদিকে দেশে এতোগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও সম্প্রতি প্রকাশিত কিউএস বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে দেশের শুধু বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। তবে এ তালিকায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ভারতের ৪১টি ও পাকিস্তানের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। কিন্তু ন্যূনতম মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় খুবই কম। নতুন করে যেগুলো অনুমোদন দেয়া হচ্ছে সেগুলোর সম্ভাব্যতা কতটুকু এবং অনুমোদন দেয়া যুক্তিসঙ্গত কিনা-তা নিয়েও জোরালো প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করলেও অনেকগুলো না চলার মতোই চলছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মান নিয়ে সব সময় প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং শিক্ষাবিদসহ সবমহলের পক্ষ থেকেই। ইউজিসির তদন্তেও নানা ধরনের অভিযোগ উঠে এসেছে। হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলো সাইনবোর্ডসর্বস্ব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক কিংবা গলি পথে কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম। এসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে। নিজস্ব জমি নেই, নেই পূর্ণকালীন শিক্ষক (প্রফেসর, সহযোগী অধ্যাপক), পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, লাইব্রেরী, ল্যাবরেটরি ও গবেষণা খাতে ব্যয়। যেখানে আগে অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরই বেহলা দশা সেখানে প্রতিবছরই নতুন করে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
জানা গেছে, গত তিন মাসে নতুন তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যার সর্বশেষ ‘লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি হবে কুষ্টিয়ায়। কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র মৈত্রী ইউনিভার্সিটি নামের আরও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নামের পুরোনো একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর আগে ঢাকায় কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইসলামি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বাংলাদেশ’, রংপুরে আশরাফুল আলম আল-আমিনকে ‘তিস্তা ইউনিভার্সিটি’, রাজশাহীতে ‘শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি’ এবং বান্দরবানে ‘বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়’, খুলনায় খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহীতে আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকলেও নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছে ইউজিসি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বলছে, এটি মন্ত্রণালয়ের না, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার চাইলে মন্ত্রণালয়ের কিছুই করার থাকে না। ফলে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের নামে সারাদেশেই চলছে রমরমা শিক্ষা বাণিজ্য।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, যেভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে তাতে এক সময় হয়তো বাড়ি বাড়িই বিশ্ববিদ্যালয় দেখা যাবে। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ¯œাতকদের শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত নয় বলে স্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত কারিকুলাম প্রণয়ন, আধুনিক গবেষণাগার, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, লিখিত ও মৌখিকভাবে নিজস্ব চিন্তা উপস্থাপন এবং তথ্য-প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জনের জন্য কারিকুলামে প্রয়োজনীয় উপাদান সংযোজন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১২ সালের পর অনুমোদন পাওয়া বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের অনেকে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬টিতে। আর লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন ১১৩টি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায়। রাজধানীতে ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেসনালস, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়।
আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে-৫৭টি। এর মধ্যে নর্থ সাউথ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, সেন্ট্রাল উইমেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট, এশিয়া প্যাসিফিক, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, পিপলস ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল, ব্র্যাক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনটিভ, সাউথইস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল, স্ট্যামফোর্ড, স্টেট, প্রাইম, নর্দান, গ্রিন, ওয়ার্ল্ড, শান্ত-মারিয়াম ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, মিলেনিয়াম, ইস্টার্ন, উত্তরা, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল, সাউথ এশিয়া, ভিক্টোরিয়া, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি, প্রেসিডেন্সি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সেস, প্রাইম এশিয়া, রয়েল, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইসলামিক, আশা, ইউরোপিয়ান, সোনারগাঁও, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, নটরডেম, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, কানাডিয়ান, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ঠাকুর ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ আর্টস, আনোয়ার খান মডার্ন, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজম্যান্ট সায়েন্সেস, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড, ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, মাইক্রোল্যান্ড, ইন্টারন্যাশনালন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ইবাইস ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি।
চট্টগ্রামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৪টি-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ১০টি- ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট, প্রিমিয়ার, সাউদার্ন, ইস্ট ডেল্টা, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল, চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি।
রাজশাহীতে সরকারি ৩টি-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাইভেট ৪টি- বরেন্দ্র নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল, আহসানিয়া মিশন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শাহ মাখদুম ম্যানেজম্যান্ট ইউনিভার্সিটি। ময়মনসিংহে ২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। কুষ্টিয়ায় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আর প্রাইভেট দুটি- রবীন্দ্র মৈত্রী, লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়।
সিলেটে ৩টি সরকারি-শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি আছে ৫টি। লিডিং, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল, মেট্রোপলিটন, নর্থ ইস্ট, আরটিএম আল-কাদির টেকনিকাল ইউনিভার্সিটি। খুলনায় সরকারি ৪টি-খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), খুলনা কৃষি, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। আর বেসরকারি ৪টি-নর্থ ওয়েস্টার্ন, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি, খুলনা খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি।
গাজীপুরে ৫টি সরকারি-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি দুটি-বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি, জার্মান ইউনিভার্সিটি। কুমিল্লায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৩টি- ব্রিটানিয়া, সিসিএন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি। রংপুরে ১টি করে সরকারি বেসরকারি- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও তিস্তা ইউনিভার্সিটি।
বরিশালে সরকারি ১টি, বেসরকারি ২টি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও গেøাবাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব গেøাবাল ভিলেজ, ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি। সিরাজগঞ্জে রবিন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি খাজা ইউনুস আলী ইউনিভার্সিটি। জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ইউনিভার্সিটি। কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি ঈশাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল, শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি।
এ ছাড়াও দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোণায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
সর্বোপরি বগুড়ায় পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, মুন্সিগঞ্জে হামদর্দ ইউনিভার্সিটি, চুয়াডাঙ্গায় ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি, চাঁপাইনবাগঞ্জে এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ফেনীতে ফেনী ইউনিভার্সিটি, ফরিদপুরে টাইমস ইউনিভার্সিটি, নাটোরে রাজশাহী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি, কক্সবাজারে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নারায়ণগঞ্জে আর.পি সাহা ইউনিভার্সিটি, রূপায়ণ একেএম শামসুজ্জোহা, ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট এন্ড টেকনোলজি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, মানিকগঞ্জে এনপিআই ইউনিভার্সিটি, বান্দরবানে বান্দরবান ইউনিভার্সিটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এছাড়া ইবাইস ইউনিভার্সিটি ও কুইন্স ইউনিভার্সিটিও রয়েছে।
এর মধ্যে প্রায় সাত বছর আগে অনুমোদন পাওয়া রূপায়ণ এ কে এম শামসুজ্জোহা এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি। একই দশা ২০১৮ সালের এপ্রিলে অনুমোদন পাওয়া রাজশাহীর শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট নামে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করেছে, সেগুলোর বেশ কয়েকটি নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ। এ কারণে ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এর মধ্যে ৮টিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নেই, ৭০টিতে নেই প্রোভিসি-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ নেই ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ তিনটি পদই শূন্য থাকে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু নাম বা সাইনবোর্ড লাগালেই বিশ^বিদ্যালয় হয় না বরং বিশ্ববিদ্যালয় হতে গেলে যা যা বৈশিষ্ট থাকা দরকার তার সবই থাকবে হবে। আর এসব হতে হবে অবশ্যই বৈশি^ক মানের। তারা আরো বলছেন, নামমাত্র বেতন, গবেষণা না থাকাসহ এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু ইস্যু আছে। আর্থিক সক্ষমতা না থাকার কারণে তারা দাঁড়াতে পারবে না। এটি না থাকলে অনুমোদন দেয়াই উচিত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আর্থিক সক্ষমতা ও ন্যূনতম মান নিশ্চিত করাও খুবই জরুরি। এছাড়া রাজনৈতিক মনোভাব এবং বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকাও মোটেই কাক্সিক্ষত নয়।
আমাদের দেশে বিশ^বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশ সমৃদ্ধ হলেও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে মান নিশ্চত করা দরকার তা থেকে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সরকারি-বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠা ও অনুমোদনের কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে মানসম্মত শিক্ষা উপহার ও যোগ্য নাগরিক তৈরিতে কাক্সিক্ষতভাবে সহায়ক হচ্ছে না। মূলত, শিক্ষা এখন বাণিজ্যিকরণ ও রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অনেকটাই ব্যর্থ হচ্ছে।
এমতাবস্থায় দেশের উচ্চ শিক্ষার মানকে বৈশি^ক মানে উন্নীত করার জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষা কমিশন গঠন করে উচ্চ শিক্ষাকে নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার। পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া দরকার মানহীন বেসরকারি বিশ^বিদ্যায়। নতুৃন বিশ^বিদ্যালয়ের অনুমোদনের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করাও সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ শিক্ষার্থীদের উচ্চতর গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য সরকারিভাবে প্রণোদনাও দেয়া দরকার। একই উচ্চশিক্ষিতদের জন্য যথোপযুক্ত কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা জরুরি। কোন প্রতিষ্ঠানের নাম দিলেই বা সাইন বোর্ড ঝোলালেই তা বিশ^বিদ্যালয় হয়ে যায় না বরং এজন্য যথোপযুক্ত মান থাকাও জরুরি!
সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা
মন্তব্য করুন