সুবিধামতো সময়ে ভারতে ফিরবেন মাওলানা সাদ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নাম - ছবি : সংগ্রহীত
তাবলিগ জামাতের সাথী ও কওমিপন্থী আলেমদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমির ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ তাঁর নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। তবে তিনি তাঁর সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান মন্ত্রী।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মুরুব্বিদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে তিনি জানান, টঙ্গীর তুরাগতীরের বিশ্ব ইজতেমায় যাওয়া থেকে বিরত থাকছেন মাওলানা সাদ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। সাদ সাহেব তাঁর সুবিধামতো সময়ে কাকরাইল থেকে তাঁর দেশে চলে যাবেন। তিনি বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দেবেন না। ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কাকরাইল মসজিদেই অবস্থান করবেন।’
এ ছাড়া এবারের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত কে পরিচালনা করবেন সেটি তাবলিগের মুরুব্বিরাই ঠিক করবেন বলে জানান আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাওলানা সাদের কিছু বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দিল্লি নিজামুদ্দিনের তাবলিগের কেন্দ্রীয় মারকাজেই বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধের রেশ আমাদের দেশেও এসে গড়ায়। আমরা দফায় দফায় বৈঠক করে এই বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিই। আজকে দীর্ঘ সময় ধরে উভয়পক্ষের মুরুব্বিদের সঙ্গেও আমরা বৈঠক করি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠকে যোগ দেন আন্দোলনকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের সহসভাপতি ও তাবলিগ সুরক্ষা কমিটির আমির আল্লামা আশরাফ আলী, যাত্রাবাড়ী দারুল আরাবিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম ও গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান। মাওলানা সাদের পক্ষে ছিলেন বাংলাদেশ তাবলিগ জামাতের শুরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসেকুল ইসলাম ও কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা মাজহারুল ইসলাম। এ ছাড়া তাবলিগ জামাতের শুরা সদস্য ও মুরুব্বিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ আবদুল্লাহসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের তাবলিগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ সাদের বাংলাদেশে আসা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাওলানা মোহাম্মদ সাদ ইজতেমায় অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন—এমন বক্তব্য দিয়ে গতকাল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচত্বরের পূর্ব পাশে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে বিক্ষুব্ধরা। তারা মাওলানা সাদ ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বিমানবন্দর থেকে দিল্লিতে ফেরত পাঠানোর দাবি জানায়। পরে তারা খবর পায় মাওলানা সাদ বিমানবন্দর থেকে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রস্থল কাকরাইল মসজিদে চলে গেছেন। এরপর আন্দোলনকারীরা মাওলানা সাদকে ভারতে ফেরত না পাঠানো পর্যন্ত কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এর আগে আজ সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কাকরাইলে অনুষ্ঠিত তাবলিগ জামাতের শুরা কমিটির সিদ্ধান্তে মাওলানা সাদ ইজতেমায় যাচ্ছেন না। মাওলানা সাদ সেখানে ইজতেমায় অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।’
‘দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে রাখা হয়েছে’, যোগ করেন ডিএমপি কমিশনার।
আগামীকাল শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে তুরাগতীরে দুই ধাপের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ শুরু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারও দুই পর্বে ইজতেমা হতে যাচ্ছে। প্রথমবার দেশের মোট ১৬টি জেলা অংশ নেবে। চারদিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে আরো ১৬ জেলা অংশ নেবে। আগামী বছরের বিশ্ব ইজতেমা বাকি ৩২ জেলা নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
স্টাফ রিপোর্টার:
মন্তব্য করুন