ছবি : সংগৃহীত
বার্ধক্য ও অসুস্থতা কোনোইটা আটকে রাখতে পারেনি তাকে। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে দিয়ে ৭৩ বছর বয়সে পবিত্র কুরআনে কারিম মুখস্থ করেছেন ফিলিস্তিনি নারী খাদিজা আলবারবারাবি।
বৃহস্পতিবার আলজাজিরা জানায়, তিনি চলমান জুনেই সম্পূর্ণ কুরআন হিফজ সম্পন্ন করলেন। এর আগে ২০১৩ সালে কুরআন মুখস্তকরণের তার এই যাত্রা শুরু হয়েছিল।
খাদিজা আলবারবারাবি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবস্থিত প্রাচীন নগরী খলিলের (হেবরন) বাসিন্দা। সম্প্রতি তিনি তার জীবন সায়াহ্নে অর্জিত এই অনন্য কীর্তি নিয়ে আলজাজিরা মুবাশিরের মুখোমুখি হন।
ওই সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এই অসামান্য কীর্তিতে তার সন্তান ও নাতি-নাতনিরা বেশ পুলকিত ও উচ্ছ্বসিত। তারা খাদিজার কুরআন হিফজ উপলক্ষে বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান উদযাপনেরও আয়োজন করেন। যা আলজাজিরার ক্যামেরায়ও উঠে এসেছে।
কুরআন হিফজের শুরুর দিনগুলো প্রসঙ্গে খাদিজা আলবারবারাবি বলেন, আমি সহিহ-শুদ্ধরূপে পবিত্র কুরআন পাঠ করব- এই স্বপ্ন দেখতাম। এ লক্ষ্যে বাড়িতে একা একা পড়াও শুরু করি কিন্তু উপলব্ধি করলাম- পড়া শুদ্ধ হচ্ছে না।
সাক্ষাৎকারের সময় খাদিজার চোখেমুখে মহাআনন্দের হাসি ঝরে পড়ছিল যেন। তিনি বলেন, এরপর আমি স্থানীয় একটি মসজিদে গিয়ে প্রতি শুক্রবার কুরআন শেখা শুরু করি। তবে বয়স বেশি হওয়ায় কোনো মাদরাসা থেকে উপকৃত হতে পারিনি।
তবে তিনি যখন মসজিদে যাওয়া শুরু করেন, তখন তার সহপাঠীরা কোর্সের প্রায় অর্ধেক শেষ করে ফেলেছেন। খাদিজা বলেন, আল্লাহর অনুগ্রহে আমি তাদের ছুঁয়ে ফেলি এবং যখন শুদ্ধরূপে কুরআন পড়া শিখলাম, তখনই হিফজের সূচনা। এরপর প্রতিবছর ৪-৫ পারা করে হিফজ সম্পন্ন করি এবং একসময় আমার সম্পূর্ণ কুরআন হিফজ সম্পন্ন হয়।
খাদিজার হিফজে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব তার বাবার বলেও জানান বৃদ্ধা খাদিজা। ‘এটিতে আল্লাহর অনুগ্রহের পর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আমার বাবার, যিনি আমাকে কুরআন মুখস্থ করার জন্য আমাকে লেখাপড়া শেখানোর প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন।’
খাদিজা জানান, শুরুতে তিনি তাফসির ছাড়াই শুধু মুখস্থ করতেন। এরমধ্যে তার হাতে একটি তাফসিরগ্রন্থ আসে। পরে হিফজের পাশাপাশি তাফসির পাঠে তার বেশ উপকার হয়েছে। এই পদ্ধতিতে নাকি খুব দ্রুত পড়া মুখস্থ হয়ে যেত।
দীর্ঘ এই যাত্রায় যেই সবচেয়ে যেই কঠিন বিষয়টির মুখোমুখি হয়েছেন এবং তা খুব শিগগির-ই ভুলে যেতে চান, তা হলো- মুখস্থের পর ভুলে যাওয়া। মুখস্থ হওয়া পড়া ইয়াদ (স্মরণ) রাখতে খাদিজার বেশ বেগ পেতে হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওই সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, আমার বেশিরভাগ সময় ব্যায় হয়েছে পেছনের পড়া পড়তে। আমি রান্না ও অন্যান্য কাজকর্মের মধ্যেও পেছনের পড়া পড়তাম।
যারা এখন জীবনের পড়ন্তবেলায়। মনে করছেন- তাদের আর পবিত্র কুরআন হিফজের বয়স নেই। তাদেরও দারুণ একটি পরামর্শ দিয়েছেন খাদিজা আলবারবারাবি। তিনি বলেন, যারা মনে করছেন তাদের আর কুরআনে কারিম হিফজের সময় নেই- তাদের এই চিন্তা ভুল; বরং সবাইকে আমি আল্লাহর কিতাব হিফজ করতে উৎসাহ দিচ্ছি।
ফিলিস্তিনি নারী খাদিজা আলবারবারাবি এখানেই থামতে চান না। তার লক্ষ্য আরো সামনে। তিনি আরো বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান। তার মতে- যারা একবার পবিত্র কুরআনের মিষ্টতার স্বাদ অনুভব করেছেন, তারা আর সেটা ছাড়তে পারেন না নিশ্চয়ই।
সাক্ষাৎকারের শেষে খাদিজা তার বাবা, স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য যারা শহীদ হয়েছেন এবং তার হিফজে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার প্রতি নিজের কুরআন হিফজ উৎসর্গ করলেন।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মন্তব্য করুন