বিমানবন্দরে আমেরিকার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু
আমেরিকার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সফরকে ঘিরে গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন সরকার ও বিএনপি মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা ও বিভিন্ন রকম ব্রিফ করেছেন। ডোনাল্ড লু ও তার নিজস্ব পরিমন্ডলের মন্তব্য ও ভিন্ন ভিন্ন তথ্যে গণমাধ্যম কর্মীদের ব্যস্ত রেখেই তিনি তার কাজ সম্পাদন করেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে যদিও সরকারের শিল্প উপদেষ্টার দেয়া নৈশভোজ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার স্বকীয় চিন্তা ও উদ্দেশ্য লক্ষ্যের ব্যাপারে ভীষণ অনড় অবস্থান দেখিয়েছেন। বিশেষ করে সরকার ধারণা করেছে ডোনাল্ড লু বর্তমান সরকারের সফলতা ও নির্বাচনী নির্দেশনা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেছেন, সেটা নিয়ে খুশির বার্তা নিয়ে এসেছেন। আবার বিএনপি ফুরফুরে মেজাজে সরকারের নানা প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়গুলোকে কঠোরভাবে ধরা ও সমালোচনার জন্য তার আগমন বলে ধরে নিয়েছেন।
বাস্তবে যা দেখা যাচ্ছে তা হলো আমেরিকার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কী জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন তার মনের কথা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে তার যে সাক্ষাৎকারে কিছু মৌলিক কথা ও সফরে আসার কারণ ধোঁয়াশায় পর্যবশিত হয়েছে। এরপর গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সেখানে অত্যন্ত সাবলিলভাবে বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে যে সুসম্পর্ক রয়েছে, সেটা আরো সুদৃঢ় ও হৃদ্যতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে- সে ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথাও বলেছেন। বিশেষ করে সরকারের কোন সমালোচনা বা বিশেষ কোন দিক নির্দিষ্ট করে সংলাপে উপস্থাপন করেনি।
দেশের রাজনৈতিক অবস্থা-বাস্তবতা ও বিরোধী শিবিরের তেমন কোন ইঙ্গিতবহ কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে তার বক্তব্যে বিশেষ বার্তা দিয়েছে সেটা হলো- ‘আমরা বড় দেশ। সারা বিশ্বেই আমরা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। যুক্তরাষ্ট্র কী করবে, সে বিষয়ে কেউ আমাদের পরামর্শ দেয় না। ঠিক তেমনি বাংলাদেশকে কী করতে হবে সেটিও আমরা বলি না।’ কাজেই অন্যদেশ যেভাবে বলেছে, বা যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে আমরা কাজ করছি বলে ধারণা সেটা একেবারেই সত্যি নয়। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের বিষয়ে আমরা অত্যন্ত প্রতিশ্রুতবদ্ধ। একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা আমরাও বলেছিলাম। তাদের উদ্বুদ্ধ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছিলাম।
ডোনাল্ড লু আরো বলেন- ‘নির্বাচনী সহিংসতা ও ভোটারদের উপর বল প্রয়োগ করায় আমরা পুলিশ, সরকারি ও বিরোধী দলের নেতাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি আরোপ করেছিলাম। আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে অর্থপূর্ণ সংলাপ বসতে বলেছিলাম। আমরা সভা-সমাবেশ ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলাম। এটা খুবই স্বাভাবিক। এই অঞ্চলে আমরা এটি করি। বাংলাদেশে এসব মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
এখানে যে কথা বলা দরকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরই এদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সরকারের মধ্যে কোন বিরোধ সৃষ্টি করতে চায়নি। বরং শান্তি-সহনশীল পরিবেশ রক্ষার জন্য তিনি তার বক্তব্যে চমৎকারভাবে আলোকপাত করেছেন- লু আরো কিছু মৌলিক কথা বলেছেন যে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঢাকার সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে অনেক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল-উল্লেখ করে ডোনাল্ডো লু বলেন- এসব বাদ দিয়ে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সামনে তাকাতে চায়, পেছনে নয়। লু আরো বলেন- বাংলদেশে সফরে এসে আমি দুই দেশের জনগনের মধ্যে পুনরায় আস্থা স্থাপনের চেষ্টা করছি। লু আরো বলেন- গত বছর বাংলাদেশের সাথে অনেক উত্তেজনা ছিল, নির্বাচনসহ আরো কিছু বিষয় নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ তৈরি হয়েছিল, তবে এটা খুবই স্বাভাবিক।
ডোনাল্ড লু -এর সংলাপ ও সফরে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, ‘কামার লোহা পিটিয়ে যেটা তৈরি করে, তা মনে মনেই গড়ে।’ লুর এড়িয়ে যাওয়া সফরের মূল উদ্দেশ্য লক্ষ্য সত্যিকারে আপেক্ষিক। কিন্তু প্রকৃত সত্য তিনিই জানেন। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের স্ক্যানারে কি ধরা পড়লো তা বলা বাহুল্য। তারপরও বলতে হবে যে, আমেরিকা কখনো নিজের স্বার্থ ছাড়া নাক গলায় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে মোড়লগিরি করে যাচ্ছে, তার নেপথ্যে রয়েছে তাদের বিরাট স্বার্থ। ডোনাল্ড লু’র বক্তব্যের প্রথম দিকে এ কথা উঠে এসছে যে ‘আমেরিকা তার স্বার্থ ছাড়া কোন কাজ করে না।’
পাশাপাশি আরো একটি তথ্য না দিলে নয়, বর্তমান বিশ্বের বিষফোড়া ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধ ও মুসলিম দেশসমূহের ঐক্যের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে ইসরাইলের পক্ষে পৃথিবীর দেশগুলোর সমর্থন আদায়ের জন্য আমেরিকা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইসরাইলের সকল সামরিক ও মৌনশক্তির কেন্দ্রই হচ্ছে আমেরিকা। বাংলাদেশ মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত শক্তিশালী দেশ। বাংলাদেশে সফরকালে মার্কিন নীতির ব্যাপারে লু কিছু না বললেও চোরের মন পুলিশ পুলিশ অনুধাবন করতে হবে। এতে উপলব্ধি করা যায় যে লু’র সফরটি আপেক্ষিক এবং কেবল তাদের স্বার্থই জড়িত।
আবুল কালাম আজাদ
মন্তব্য করুন