ছবি-সংগৃহীত
সম্প্রতি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সামাজিক ও গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, যে শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কোটায় ভর্তি হওয়া ও কোটায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন। কোটায় নিয়োগের কারণে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে।
কোটায় নিয়োগ হলে যা হয়, তার একটি নজির পেশ করে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির উপর মন্তব্য করতে চাই। গত ১৫ই জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক দিন। বিশ্ব ইতিহাসে এমন নির্মমতা ও অমানবিক আচরণ বিরল। দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক উত্থান ও আন্দোলনের ইতিহাস স্মরণীয় হয়ে থাকলেও সেটা একদম ভিন্নধর্মী। ছাত্রআন্দোলন ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দাবি-দাওয়া নিয়ে যেকোনো সময় কথা বলতেই পারে। বর্তমান সরকার যেসব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শিক্ষার মধ্যে জড়িয়ে দিয়েছে তার সমাধান সহজে হবার না। বিশেষ করে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার যে ব্যাপারটি রয়েছে, তা দেশে স্বাধীনের পর থেকে হয়ে আসছে।
কোটা প্রথা বাতিলের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের কোটার পদ্ধতিগত সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে যে নিয়োগ প্রথা রয়েছে তাতে মেধা লালন-পালন মূল্যায়ন কোনটাই হচ্ছে না। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের এবং ন্যায্য অধিকারের কথা শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে তুলে ধরেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে যে আন্দোলন রাজধানীসহ মহানগরী পর্যায়ে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঐকতার মধ্যে রাজপথে নেমেছে।
যখনই কোটাবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে, তখনই সরকারের বিভিন্ন বিভাগে, অফিসে প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডের নানাদিক মিডিয়ায় ও সাধারণ জনতার সামনে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে প্রশ্ন ফাঁস উল্লেখযোগ্য। একথা বলা দরকার যে, বিভিন্ন নিয়োগে ৬০% কোটায় চলে যায়। বাকি ৪০%, এখানে রাজনৈতিক কোটার পাশাপাশি প্রশ্নফাঁস, কোটা, নিয়োগ বাণিজ্যের কথাতো আছেই। বাস্তবে সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থী তাহলে কত ভাগ অবশিষ্ট থাকলো? বাস্তব কারণে আজ লক্ষ লক্ষ বঞ্চিত মেধাবীরা রাজপথে নেমে পড়েছে তাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে।
মোদ্দাকথা হলো, কোনো ঝামেলা ছাড়াই রাজপথে যখন শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। আন্দোলনো সাধারণ জনতার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ আন্দোলন থামানোর জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। প্রশাসন কোনো সহযোগিতা না করে বরং তাদের হেলমেট পার্টি দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হলো।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে আহত ছাত্র-ছাত্রীদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সারারাত দফায় দফায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো শব্দ উচ্চারণ করে নি। কিন্তু কেন এই নৃশংসতা, কেন এ নির্মমতা। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা কী আমাদের সন্তান নয়, তারা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে অধ্যায়নরত মেধাবী শিক্ষার্থী।
ব্যাপারটা সবচেয়ে দুঃখজনক ও অমানবিক যে প্রশাসনের হাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিজিবি, আর্মি থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভাড়াকরা গুন্ডাবাহিনী ও টোকাইদের দিয়ে আমাদের মেধাবীদের অন্যায়ভাবে পরিকল্পিত বেদম প্রহারে আহত করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারপর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া অবস্থায়ও হামলা করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ। হায়রে বাংলাদেশ! পুলিশের সামনে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা জিম্মি, অথচ পুলিশ কোনো সহযোগিতা তো দূরের কথা, কথাও বলেনি। একই হলে বাস, একই বিভাগে অধ্যয়ন, অথচ তাদের বন্ধুরাই ভাড়া করা পেটোয়া বাহিনী টোকাই দ্বারা আমাদের সন্তান মেধাবী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। অন্যায়ভাবে এই নারকীয় আক্রমান ছাত্রছাত্রীরা রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাতের এক সাক্ষাৎকার লক্ষণীয় যে, কিছু যুবক এসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সাথে অ্যাকশনে ছিলো একসঙ্গে ছিল লাঠি-হকস্টিক নিয়ে, তারা নাকি ভারতীয়।
ক্ষমতার বড়াই আর অন্যয়ভাবে মানুষের মুখ বন্ধ করার কৌশল বেশিদিন টিকে থাকে না। দেশের কোটি কোটি মানুষ সরকার ও প্রশাসনে ভূমিকা অবলোকন করছে। ১৫ জুলাই এর ঘটনা ২৫ মার্চ ’৭১ এর চেয়েও মর্মান্তিক ও ভয়াবহ। তবে মনে রাখা দরকার যে মানুষের মুখ বন্ধ করলেও হৃদয়ের আকুতি আর দোয়া লাঠি দিয়ে বন্ধ করা যায় না। রাষ্ট্রীয় যন্ত্র আজ অচল। দলীয় সকল চাওয়া পাওয়া হয়ত আপাত দৃষ্টিতে সব পেলেও সাধারণ মানুষের হৃদয় থেকে পাওয়া যাবে না। তবে এখানে স্বাধীন দেশের মানুষের কথা বলতে না দেয়াটা কোন ধরনের ধারায় পড়ে বোধগম্য নয়, এ লজ্জা রাখি কোথায়। ৭৩ সালের সেই কবিতা দিয়েই শেষ করছি -
“ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না,
বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার
এ কি স্বাধীনতা।”
অধ্যক্ষ আবুল কালাম আযাদ
মন্তব্য করুন