সংগৃহীত ছবি
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধনের যে ধারা অব্যাহত আছে তা আসলে কোনদিকে যাচ্ছে, তা নির্ণয় করা কঠিন। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুনভাবে দেশের সকল পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে উপদেষ্টাদের দপ্তর বিন্যাসে পরিবর্তনও করা হয়েছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনও উন্নয়নের ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তা অবশ্যই দেশের জন্য মঙ্গল। কিন্তু দেশের কোন কাজ কাদের দিয়ে সম্ভব এ ব্যাপারেও দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বাস্তবতার আলোকে উপদেষ্টাদের সময়ের উপযোগিতা দেখা দরকার।
দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর একটি ধারায় দেশ পরিচালিত হয়েছে। সেখানে উন্নয়ন মানেই মোটা অংক আত্মসাৎ করার একটা আওয়ামী কালচার প্রচলিত হয়ে গিয়েছিলো। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে গ্রামের একজন মেম্বার, চৌকিদার-দফাদার পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মহাসমুদ্র ও সামাজিক ক্যান্সারে পরিণত করেই দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ৫ আগস্টের পর নতুন দেশের পরিবেশ গড়ার কাজে দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন নতুন দেশের স্বপ্নে লালিত হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ মনে করেছিল সত্যিকারে দেশ স্বাধীন হয়েছে নতুনভাবে। এবার হয়তো মানুষ দ্বিধাহীন সংকোচে চলতে পারবে। পথ চলতে গিয়ে হয়তো দুর্বৃত্তদের হাতে হয়তো প্রাণ হারাতে হবে না। প্রাণ দিতে হবে না অবলীলায়। কিন্তু বাস্তবতার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি বেড়ে ওঠা আর সামাজিক শিকড় অনেক গভীরে গ্রথিত হয়েছে। যার ফলে সে শিকড় একদিনে নিঃশেষ করে নতুনত্ব গতি আনার ক্ষেত্রে বেশ অন্তরায়। তবে এই কথা বলা দরকার যে দেশ পরিবর্তন করতে হলে আগে দরকার দেশের প্রশাসনিক পরিবর্তন ও চিন্তার পুনর্গঠন। দেশের এ পরিবর্তন ও উন্নয়নের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ যে হোমওয়ার্ক করে যাচ্ছেন তা অনেকটা আপেক্ষিক। জনগণ এখনো আস্থা ও বিশ্বাসের ব্যাপারে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন।
বিশেষ করে নিত্যপণ্যের বাজার ও সিন্ডিকেট প্রথা আগের মতই আছে। রাজনৈতিকভাবে তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে চেষ্টা অব্যাহত আছে দীর্ঘদিনের জঞ্জাল এত অল্প সময়ে পরিষ্কার করা সম্ভব না। প্রশাসনিকভাবে যে পরিবর্তন করা হয়েছে, তার টেবিল চেয়ার পরিবর্তন হয়েছে। ব্যক্তি ও চিন্তার কোন পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ আগে আর পরে তেমন পরিবর্তন নয়। সবকিছু আগের ধারায় অব্যাহত আছে।
দেশের উন্নয়ন খাত হলো পোশাক শিল্পের অবস্থার ও খারাপ। তুই তো মধ্যে বেশ কিছু পোশাক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার শ্রমিক আজ রাস্তায় বসা। আন্দোলন চলছে। আর বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ধ্বংসের জন্য প্রতিবেশী যা করার সব করে যাচ্ছে। তবে ৫ আগস্টের পর ভারত আরো উঠে পড়ে লেগেছে বাংলাদেশের উপর। ভারত শুধু পোশাক শিল্প নয়, বাংলাদেশের অস্তিত্বেরও হুমকি স্বরূপ।
বেশ কিছুদিন পত্রিকান্তরে জানা গেছে, সীমান্তের ব্যাপারে ভারত নানা জল্পনা-কল্পনা করে নতুনভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জনসংখ্যার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ ও ভারত মিয়ানমারকে উস্কানি দিয়ে নানাভাবে ষড়যন্ত্রের অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে আরো একটু বাড়িয়ে বলা দরকার যে বাজার নিয়ন্ত্রণেও ভারত সিন্ডিকেট চক্রকে সক্রিয় করে কাজ করে যাচ্ছে। যে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য যথেষ্ট হুমকি স্বরূপ। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ ঘাড়ে করে দেশের মানুষ অশান্তির কালো আঁধার দেখতে চায় না। মাথা ব্যাথা বাঙালি আর নির্ঘুম রাত যাপন করতে চায় না। ষড়যন্ত্রের কালোহার দেশের সকল পর্যায়ে এবং সেটা ত্রিমুখী। এভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরো সতর্ক ও কৌশলী হওয়া দরকার বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। উপদেষ্টা নিয়োগেও আরেক প্রশ্নের সম্মুখীন সরকার। সামনের দিনগুলি দেশের মানুষের কাছে অস্বস্তিকর। এ ব্যাপারে সরকারকে এগিয়ে আসা দরকার।
অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ
মন্তব্য করুন