• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
ব্রেকিং নিউজ
সর্বশেষ নিউজ
* পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা * কাশ্মীর হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় পাকিস্তান * মেঘনা গ্রুপের পণ্য বয়কটের ডাক মাসুদ সাঈদীর * দ্রুত ডাকসু নির্বাচন চান ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী:পরামর্শক কমিটির জরীপ * পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়, নিহত ৬ * ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক শুরু * রোমে বাংলাদেশ হাউস পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা * রাঙ্গামাটিতে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫ * সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে মেধাসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে * সমালোচনা কখনো অসভ্য ভাষায় হওয়া উচিত নয়: রেজাউল করিম

বাংলাদেশি পর্যটক কমে যাওয়ায় ভারতের অর্থনীতিতে মন্দা

news-details

ছবি: সংগৃহীত


বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিক প্রতি বছর ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতে যাতায়াত করে। ফলে বাংলাদেশিদের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল ভারতের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতাল, বিপণীবিতান ও মার্কেটগুলো। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে মহাস্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে মেডিকেল ও পর্যটন ভিসায় ভারতে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভারতের চিকিৎসা ও পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। 

বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটরদের মতে, ভারতে বাংলাদেশি পর্যটক কমতে শুরু করে মূলত পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের পর থেকে। পাতানো ওই একদলীয় নির্বাচনে হাসিনা সরকারকে প্রকাশ্যে নগ্নভাবে সমর্থন দেয় ভারতের মোদি সরকার। এরপর থেকে প্রতিবাদস্বরূপ বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্লগার, ইউটিউবার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশিদের ভারত ভ্রমণেও অনুৎসাহিত করে বিভিন্ন রকম পোস্ট দেন।  ফলে ভারতের সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করে। তখন দুই দেশের সরকারের উচ্চ পর্য

সর্বশেষ বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই থেকে দেশজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে সেটি রূপ নেয় সরকারবিরোধী আন্দোলনে। শেষ পর্যন্ত গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান মহাস্বৈরাচার হাসিনা।

এ অবস্থায় ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতির’ কারণ দেখিয়ে গত ৭ আগস্ট বাংলাদেশের সব ভারতীয় ভিসা সেন্টার (আইভিএসিএস) বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। এর চারদিন পরেই অবশ্য কয়েকটি ভিসা সেন্টার ফের খুলে দেওয়া হয়।

১১ আগস্ট ভারতীয় ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইটে এক বার্তায় বলা হয়, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামের ভিসা সেন্টারগুলো থেকে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হবে। তবে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটররা বলছেন, গত ১ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে পর্যটন ব্যবসায়ে প্রভাব পড়তে শুরু করে।

এরপর যত সময় গেছে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে থাকে। ব্যবসায়ীরা বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর তাদের ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে।

বর্তমানে পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে আছে। স্থানীয় অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ভারত ভ্রমণকারী পর্যটকের সংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের যাওয়া পর্যটকদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই পর্যটকরা মূলত মেডিকেল ট্যুরিজম বা কেনাকাটার জন্য যান, বিশেষ করে দুর্গাপূজা ও বিয়ের মৌসুমে।

অপারেটররা বলছেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কারণ সাময়িকভাবে ফ্লাইট বিঘ্নিত হয় এবং মেডিকেল ভিসা বাদে বেশিরভাগ ভিসা স্থগিত করা হয়।

২০২২ সালে ভারতে বেড়াতে যাওয়া বিদেশি পর্যটকের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন বাংলাদেশিরা। তাদের ওপরে ছিল কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছিল ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২২ সালে ভারতে ভ্রমণকারী বিদেশি পর্যটকদের শীর্ষ তিন উৎস ছিল যুক্তরাষ্ট্র (২২ দশমিক ১৯ শতাংশ), বাংলাদেশ (২০ দশমিক ২৯ শতাংশ) ও যুক্তরাজ্য (৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ)। ওই বছর পর্যটন খাত থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৩ কোটি রুপি আয় করেছিল ভারত।

ফলে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, ভারতের পর্যটন শিল্প বাংলাদেশিদের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে বাংলাদেশি পর্যটকদের অবদান উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটরদের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস বলেছে, গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে পর্যটন ব্যবসায় তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। এরপর যত সময় গেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর তাদের ব্যবসা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। স্থানীয় অপারেটরদের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ভারত ভ্রমণকারী পর্যটকের সংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি কমেছে।

গত ১৮ আগস্ট দ্য ইকোনমিক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে যাওয়া পর্যটকদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশি নাগরিক। এই পর্যটকরা মূলত মেডিকেল ট্যুরিজম (চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন) বা কেনাকাটার জন্য যান, বিশেষ করে দুর্গাপূজা ও বিয়ের মৌসুমে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, মেডিকেল ট্যুরিজমে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের একটি হলো ভারত। মূলত দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকান দেশগুলো থেকে মানুষ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যায়।

ভারত সরকারের তথ্যমতে, দেশটিতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বিদেশিদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। ২০২২ সালে ৪ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ মেডিকেল ভিসায় ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানে, ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসেই যান পাঁচ লক্ষাধিক বিদেশি। এর অধিকাংশিই বাংলাদেশি নাগরিক।

ভারতীয় সংস্থা কেয়ার এজ রেটিংসের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যায়। ভারতে যাওয়া মেডিকেল পর্যটকদের মধ্যে ৫০-৬০ শতাংশই হলেন বাংলাদেশি। এমনকি, ভারতের হাসপাতালগুলোতে সর্বমোট যত রোগী সেবা নেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অংশ প্রায় তিন শতাংশ।

কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজমের এই চিত্র পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।

কেয়ার এজ রেটিংস বলছে, কেবল আগস্ট মাসেই ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আর পুরো বছরের হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম (২০২৩ সালের তুলনায়)।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রভাব এরই মধ্যে টের পেতে শুরু করেছে ভারতের হাসপাতালগুলো।

দেশটির বৃহৎ হাসপাতাল চেইন ফোর্টিস হেলথকেয়ারের একজন মুখপাত্র দ্য ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। অনেক রোগী ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল অথবা স্থগিত করেছেন। কোনো কোনো হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভারতীয় হাসপাতাল কর্মকর্তা জানান, এতদিন বাংলাদেশি রোগীদের ভারতে যাওয়া ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। সেখানকার অনেক হাসপাতালেই অধিকাংশ রোগী থাকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এ ধরনের হাসপাতালগুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের আরেকটি প্রধান হাসপাতাল চেইনের আন্তর্জাতিক মার্কেটিং টিমের এক নির্বাহী বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের হাসপাতালগুলোতেও বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমতে দেখছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে অস্থিরতা শুরুর পর থেকে এই সংখ্যা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।

অন্য একটি হাসপাতাল চেইনের নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমাদের আয় এরই মধ্যে পাঁচ শতাংশ কমে গেছে। রোগী কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। তাছাড়া, নতুন কোনো রোগীও আসছেন না।

কলকাতার মেডিকেল ট্যুরিজম কোম্পানি Indiatreatments.com-এর প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা সামিত বেজ জানান, তার প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫০ জন রোগীর চিকিৎসা নিতে আসত। এই সংখ্যা এখন মাসে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় জনের মধ্যে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে কলকাতায় আগস্টের শুরুতে হোটেল ও লজগুলো অর্ধেক খালি হয়ে গেছে।

সেন্ট্রাল কলকাতা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারমিত সিং টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘গত কয়েক দিনে হোটেলগুলো ৫০ শতাংশ খালি হয়ে গেছে।’

মার্কুইস স্ট্রিটের নবাব রেস্তোরাঁর মালিক আরশাদ আলম বলেন, ‘ আমাদের ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশি পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল যারা এই আশেপাশের হোটেলগুলোতে থাকেন। এমনকি আমরা শুধু তাদের স্বাদের জন্য ভিন্ন খাবার তৈরি করি। গত কয়েকদিন ধরে নৈশভোজের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।’

ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভারতের মেডিকেল ও পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।


আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মন্তব্য করুন