সংগৃহীত ছবি
দেশের রাজনৈতিক আকাশে হঠাৎ যেন বিবর্তনের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দের আপেক্ষিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ সহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর দেশের মানুষ বিশাল স্বপ্ন নির্ভর প্রত্যাশায় বিভোর। মানুষ যে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে বিপ্লাবোত্তর এগিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু কোথায় যেন বেশ চিন্তার অমিল বা সরকারের গতি প্রকৃতিতে অদৃশ্য শক্তির হানা ও ছন্দপতন মনে হচ্ছে।
প্রশাসনের পরতে পরতে লেজে-গবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় ও নব দিগন্তের ধারা অব্যাহত থাকার কথা, সেটা কিন্তু ভিন্ন গতি বহমান। এদিকে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ভয়াবহ। মানুষ নানাভাবে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। কোথাও কোন শৃঙ্খলিত পরিবেশ নেই। যদি নিত্যপণ্যের বাজারের দিকে তাকায় তাহলে সেখানকার অবস্থা আরো খারাপ। কোন নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় নেই। সবজি, চাল, ডাল, মাছ, গোস্ত, চিনিসহ খাদ্য পণ্য সকল জিনিসের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাজার একদম নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। সাধারণ মানুষ কখনো এমন আশা করেনি যে দেশের একটা পট পরিবর্তনের মধ্যে সমাজে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের উপর এমন একটা পরিবেশের সৃষ্টি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।
নিত্যপণ্যের ব্যাপারে অভিজ্ঞজনদের ধারণা বাংলাদেশের যে সিন্ডিকেট কালচার অনেক আগে থেকে জারি রয়েছে, তাদের তৎপরতা নতুনভাবে আছর করেছে। বিশেষ করে দীর্ঘ ২যুগ যাদের হস্তক্ষেপে সিন্ডিকেট পরিচালনতা হতো। তারা সবাই জায়গামতো পাতার আড়ালে থেকে লাগাম ধরে বসে আছে। দেশে উৎপাদিত পণ্য মজুদ কম নয়। যে সমস্ত পণ্য দেশের বাইরে থেকে আনা হয়, সেগুলো যথেষ্ট পরিমাণ থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দেশের সার্বিক পরিবেশ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি অপকৌশল ও ষড়যন্ত্র। যেটা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মানুষের কাছে বিতর্কিত করা ছাড়া। এদেশে যে পরিমাণ ডিম উৎপাদিত হয়, তা দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব। অবশ্য গত ১মাস আগে দেশে ডিমের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলেন কয়েকজন সিন্ডিকেট যাদের সাবেক সরকারের দোসর এদেশের কুলাঙ্গার বলে ধরা হয়। যা তাদের আশেপাশের বলি হয়ে ভারত থেকে ডিম কিনতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
এভাবে সরকারের প্রতি পদক্ষেপ যেটা মানুষের প্রত্যাশিত উন্নয়ন বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে দেশের অদৃশ্য শক্তি বার বার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সম্প্রতিকালে মোহাম্মদপুর এলাকায় যে ডাকাতি-রাহজানী ও খুনের সচিত্র প্রতিবেদন পত্রিকার পাতা দেখা গেছে, তা দুঃখজনক ছাড়া কিছু নয়। সম্প্রতী একজন পথচারী মহিলার কানের দুল হাইজ্যাক করতে কানই ছিঁড়ে ফেলেছে। বিভিন্ন জায়গায় আগের মতো আবারো খুন-ডাকাতি, রাহাজানি হত্যার মতো নিকৃষ্টতা আবার নতুন করে শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে এমন নৃশংসতার ছবি ও প্রতিবেদন নিত্যদিনের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিজ্ঞজনদের আলাপচারিতা ও মন্তব্যে জানা গেছে যে পরাজিত শক্তির একটা গ্রুপ এ জাতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে দেশকে আবার প্রশ্নের মুখোমুখি করতে চায়।
দেশের এহেন পরিস্থিতিতে প্রশাসন অনেকটা নীরব। একদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। পথে-ঘাটে মানুষের আবারো সেই ভয়-ভীতির মধ্যে চলতে হচ্ছে। সড়কে নিরাপত্তার বালাই নেই। যার যা ইচ্ছা মত চলছে। দেশের নিরাপত্তার জন্য কোথাও কোথাও আর্মি টহল জারি রাখলেও তাতে বাস্তবতা কম। একটা শ্রেণি তাদের আগের সেই অপতৎপরতা শুরু করেছে। আর সেটা সচিবালয় থেকে গ্রাম পর্যন্ত নতুন পথ পরিক্রমা দেখা মিলছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে দায়িত্বপ্রাপ্তরা রয়েছেন, তাদের ভূমিকা নিয়ে জনগণ একদম সন্তুষ্ট হতে পারছে না। এদেশের হাজারো তরুনের রক্তে ভেজা বাংলায় সবুজ প্রান্তর। যেখান থেকে এখনো স্লোগান শোনা যায় বৈষম্যহীন নতুন বাংলার। শুধুই স্লোগান রয়ে যাবে না বাস্তবে পরিলক্ষিত হবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে নিয়োগকৃত উপদেষ্টাদের খতিয়ে দেখা দরকার। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে গণবিপ্লবের যে চাওয়া, সে ব্যাপারে তৃণমূল পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপার যদি প্রশাসন যদি কচ্ছপ গতিতে চলে, তাহলে জনগণের কাছে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।
অপরদিকে যদি মিডিয়ার দিকে তাকায় তাহলে দেখা যাচ্ছে ফ্যাসিবাদের ধারক-বাহক খ্যাত সিনিয়র সাংবাদিক-কলামিস্ট যারা এদেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত বিপদের মুখে ফেলে দেয়ার জন্য মিডিয়ায় অপপ্রচারে মগ্ন থাকতো, যারা এদেশের ইসলামী আদর্শকে ধ্বংসের জন্য নানা প্রচার-প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে সরকারের কাছে বাহবা কুড়াতো, তাদের অনেকে আবার স্ব স্ব অবস্থানে ফিরে এসেছে।
ষড়যন্ত্রের জাল আবারও বিস্তার করতে তৎপর হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়ার সমন্বয়ে আওয়ামী দোসরদের চেয়ারকে পাকাপোক্ত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে আদাজল খেয়ে ষড়যন্ত্রের সব কাজ শুরু করে দিয়েছে। আওয়ামী বি টিম খ্যাত দলের ব্যানারে সমাবেশ ও পথসভার আয়োজন করেছে। যা দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। সাধারণ জনতা এদেশে শান্তি চায়, শুয়ে শান্তিতে ঘুমাতে চায়। কিন্তু মানুষের চাওয়া থেকে অনেক বিচ্যুতি ঘটেছে। এব্যাপারে দেশের রাজনৈতিক দল, সচেতন মহল ও প্রশাসনকে আরো তৎপরতা সম্পন্ন হওয়া দরকার। কারো রক্ত চক্ষু দেখে পিছিয়ে থাকা দিন শেষ। নতুনভাবে এগিয়ে আসা সকলের এখনই সময়। দেশের মানুষ প্রত্যাশার জায়গা থেকে যেন আরো মানসিক চেতনাবোধ থেকে নতুন দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পারে। সাহসের ধারা গতিশীল করার মধ্য দিয়ে শহীদের সে রেখে যাওয়া কাজের মধ্য দিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে সক্ষমতা অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকা দরকার। সে প্রাপ্তির আশা সকলের।
অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ
মন্তব্য করুন