পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়া রংপুরের আবু সাঈদ
দুঃসময়ের মুখোমুখি আমরা। দেশে যে অস্থিরতা দানা বেঁধেছে তাতে কবে সুস্থ-সুন্দর পরিবেশ আসবে তা বলা কঠিন! পরিস্থিতির শিকার হয়ে দেশের মানুষ মানসিক নানান যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন। অবশেষে কোটার ব্যাপারে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেছিল। পরে আবার লিভ টু আপিলের শুনানিতে আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে সরকারের ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে দিয়েছেন। এবারে আপিল বিভাগ ৯৩ শতাংশ সরকারি চাকরি মেধার ভিত্তিতে এবং বাকি ৭ শতাংশ কোটাভিত্তিক করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এখানে একটা বিষয় হলো কোটা কমানো বাড়ানো বা বাতিল করার বিষয়টি সরকারের হাতে রয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায়ে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্রজাতি গোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে এটাও বলা হয়েছে যে, নির্ধারিত কোটায় যোগ্যপ্রার্থী না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার জন্য পদগুলোর বিপরীতে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে। আদালত এ ব্যাপারে চূড়ান্ত পরিপত্র (গেজেট বা প্রজ্ঞাপন) জারি করতে বলেছেন। তবে একথা বলা দরকার যে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোটা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া পুরোপুরি সরকারের নীতি নির্ধারণীর বিষয়। আদালত বিশেষ বিবেচনায় ৭ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করলেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘অত্র নির্দেশনা ও আদেশ প্রদান সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় এই আদালত কর্তৃক নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন ও সংস্কার করতে পারবে।’
আগের ৫৬ শতাংশ এবার ৭ শতাংশ কোটায় দাঁড়ালো। আর ২০১৮ সালে সেটা কোন কোটায় কার্যকর ছিল না। অবশ্য আগে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য যে কোটা ছিল, তাও এখন থেকে বাতিল করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনে কোটা পদ্ধতি সংস্কার, সংশোধন, পরিমার্জন করতে পারবে সরকার সেক্ষেত্রে এই রায় বাধা হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। মোটকথা সরকারের হাতে কোটা সংক্রান্ত ক্ষমতা রয়েই গেছে। এর অর্থ হলো বিচার মানি, কিন্তু তালগাছ আমার, এরকমই অবস্থা কোটা রায়ের সর্বশেষ অবস্থা।
কোটা আন্দোলনের ঊষালগ্ন ছিল ২০১৮ সাল। সেখানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষার্থীদের দ্বারা শুরু হয়েছিল। তখনও মাঠে থাকা ছাত্রদের দমন করতে সরকার দলীয় ছাত্র হেলমেট বাহিনীকে পথে নামতে দেখা গেছে। ঐ বছরই শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দমনে ও হেলমেট বাহিনী তৎপর ছিল। সে বছরও ছাত্র-সাংবাদিকদের বেধড়ক মারধর করেছিল। সেখানে কারা কিভাবে ভূমিকা রেখেছিল, তা সাধারণ জনতা জানে। ঠিক একইভাবে এবারের ভূমিকাও অনুরূপ। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রথম কয়েকদিনের আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য যে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে একটি অপ্রত্যাশিত উক্তিকে কেন্দ্র করে ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়। মধ্যরাতে হলগুলো থেকে ছাত্ররা বেরিয়ে এলো এবং বিক্ষোভ করল। এরপর আওয়ামী লীগের দলীয় সাধরণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ প্রস্তুত বলে ঘোষণা দিলেন। এরপরই দেখা গেল যে ছাত্রলীগ, যুবলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে থাকে। শুধু তাই নয়, ক্যাম্পাসে ভাড়াটিয়া পেটুয়াবাহিনী দিয়ে শুরু হয় বেদম মারপিট ও নানান অস্ত্রের ঝনঝনানি।
সরকারের এ বাহিনী তারা, যাদের অনেকেই ছাত্র নন। তারা জোর করে ক্যান্টিনে খাবার খায়, তারা রুম দখল করে রাখে। সাধারণ ছাত্রদের গণরুম নামের একটা জেলখানায় অবস্থান করতে বাধ্য করে। মিছিল-মিটিংয়ে না গেলে ইচ্ছামতো পেটায়। আর এমন সব ঘটনা একদিনের নয়, বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। তবে বলতে হবে কোটা আন্দোলন তো একটা উপলক্ষমাত্র যার মাধ্যমে ছাত্রদের ক্ষোভের কারণেই সাধারণ ছাত্রছাত্রী বেরিয়ে এসেছে। আর হেলমেট বাহিনী তাদের পেটানোর কারণেই আন্দোলন ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যায়। সাথে সাথে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সেখানে সাধারণ ছাত্রছাত্রীর সাথে শামিল হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বহর বেড়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুটা যেভাবে হয়েছে শেষ দিকে এসেও সহজে সমাধান করা যেতো। কিন্তু কোন অপকৌশলের কারণে শত শত তাজাপ্রাণকে রাজপথে আত্মহুতি দিতে হলো সেটাই এখন প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও সমালোচনা এবং ওবায়দুল কাদেরের উস্কানি, আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে। সে কারণে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের ছাত্র-ছাত্রীরা পাগলপারা হয়ে পুলিশ সাথে রনভঙ্গীতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। যা সামাল দিতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। সাপের লেজে পা রাখলে নিজেকে বাঁচানোর জন্য সে ছোবল মারবে, এটাই বাস্তবতা। একথা না বলে পারা যায়না, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীদের গণধর্ষনের হুমকি ও দিয়েছে শিক্ষার্থী নামধারী সরকার দলীয় নেত্রীরা। যা মুখে উচ্চারণ করতে কষ্ট হয়।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার আগ থেকে ৫২ ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান সহ পরবর্তী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও ছাত্ররাই নেতৃত্ব দিয়েছে, কিন্তু এতো অল্প সময়ে সারাদেশে সুসংগঠিত হতে দেখা যায়নি। পাশাপাশি ৪-৫ দিনের মধ্যে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী গুলির আঘাতে প্রাণ দিয়েছে, সেই ভয়াবহতা স্বাধীনতা যুদ্ধকেও হার মানিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে কি এমন হয়েছিল ভাড়াটিয়া গুন্ডা টোকাইদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদেরকে পেটাতে হবে। কি এমন অপরাধ সাঈদ করেছে , যে তাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করতে হবে। তবে একথা সত্য যে দীর্ঘদিন তারা সে মিনি ক্যান্টনমেন্ট ও অস্ত্রাগার ক্যাম্পাসে রেখেছিল, যা প্রকাশ হয়েছে। সাধারণ মানুষ সে সব অবলোকন করেছে।
সম্মুখ সমরে কেন মোরা: দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক সময় মাঠে-ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ে। বিশেষ করে যখন ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বাইরের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের যৌথ টর্চার শুরু হয়, পরের দিন ১৮ জুলাই সকাল হতে রাজধানী ঢাকা, ছয় বিভাগীয় শহরসহ দেশের প্রত্যেকটি জেলা শহর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা ব্লকেড শীর্ষক আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিজিবি, ছাত্র পেটোয়া বাহিনীসহ রাজনৈতিক কর্মীরা ও আগ্নেয় অস্ত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এ দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগের মোড়, সাইন্সল্যাব, মিরপুর-১০, মিরপুর-২, মিরপুর-১১ ও ১২, উত্তরা, রামপুরা, কুড়িল বিশ্বরোড, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, চিটাগাংরোড সহ বিভিন্ন জেলা শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা জীবনবাজি রেখে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। যার যা সম্ভব ইটপাটকেল, লাঠিসোটা দিয়ে সরকারি বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে যায়। খালি হাতে এসব ছাত্ররা গুলির মুখোমুখি পাখির মতো ঝাকে ঝাকে লাশ হয়। শুধু মুখোমুখি নয়, যাত্রাবাড়ী-উত্তরা ও মহাখালীতে হেলিকপ্টার হতে গুলি ও গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দমন করে, অনেকে খুনও হয়। এভাবে ইতিহাস ব্রেক করে ১৮ জুলাই। মারমুখি পরিবেশ যখন উত্তাপ বাড়িয়ে দেয় তখন সাধারণ ছাত্ররা পিছনে দেয়াল মনে করে সামনে যা পেয়েছে তা নিয়েই অগ্রসর হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম আর সম্মুখ সমোরে দীর্ঘ সময় পার না হতেই শতাধিক লাশের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আরো উত্তপ্ত হয় পরিবেশ। এক পর্যায়ে প্রশাসন ইন্টারনেট সংযোগ সারাদেশে বন্ধ করে দেয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মন্তব্য যে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের যুদ্ধে এত ছাত্র আত্মহুতি দেয়নি। কিন্তু কেন এ ছাত্র হত্যা? কেন এত লাশের মিছিল? দেশের মানব সম্পদ ও মায়ের কোল খালি করে কিসের আন্দোলন আর সফলতা?
যে মানব সম্পদ হারালো দেশ: যারা মেধাকে লালন-পালন করে কর্মসংস্থানের প্রচেষ্টায় মত্ত! তারাই ন্যায্য দাবি সরকারের কাছে চেয়েছিল। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত; কেউ বা অধ্যয়ন শেষ করে চাকরির আশায় ব্যস্ত ছিল। এদের মধ্যে যারা সর্বোচ্চ ভাল করার মতো মেধার শীর্ষে তারাই আবার জীবন দিয়েছে। রংপুরের আবু সাঈদ ইংরেজী সাহিত্যের মেধাবী ছাত্র। গরীব মা-বাবার একমাত্র শিক্ষিত সন্তান সে। অর্থের অভাবে অন্যরা লেখাপড়া করতে পারেনি। এভাবে শত শত সাঈদ লাশ হয়ে বাবা মায়ের কাছে ফিরেছে। হাজার হাজার ছাত্র জনতা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেকে জীবনের মতো পঙ্গু হয়ে সংসারের বোঝা হয়ে নিজের বাড়িতে ফিরছে। দেশের একটা সাধারণ নীতিগত সিদ্ধান্তের দাবিতে রাজপথে নামার অপরাধে গুলি তার প্রতিদিন। এটাই হলো স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চর্চা। যেখানে কথা বলা যাবেনা সেখানে বিচারে বাণী নিভৃতে কাঁদে। যেখানে মেধার মূল্যায়ন না করে ক্ষমতার বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে দেশের সম্পদ ও মা-বাবার আশা ও ভরসার স্থল ও ভবিষ্যৎকে চিরদিনের জন্য নিঃশেষ করার এ হিম্মত কেন?
যাদের জন্য এত কষ্ট, যাদের জন্য অগাধ ধৈর্য্য যাদের জন্য অনাগত দিনের স্বপ্ন বোনা তাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হলো কেন! এ ক্ষতির জবাব কে দেবে? কে নেবে এসব অসহায় বাবা মায়ের দায়ভার? দেশ-জাতির মানব সম্পদকে কেন অপকৌশলের ফাঁদে ফেলে নিঃশেষ করতে হবে। দেশের মানুষের কাছে এর কি জবাব আছে? আর কত মায়ের আহাজারি আর শোকের মাতম শুনতে হবে!
দেশের অর্থনীতিতে আরেকটি আঘাত: দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আবারও ক্ষতির সম্মুখীন হলো। দেশে আন্দোলন সংগ্রামে জটিলতায় মারাত্মক অস্তিরতার সৃষ্টি হলো। কয়েকদিন দেশের অর্থনীতির চাকা একেবারে অচল। অফিস আদালত, শিল্পকারখানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের উন্নয়নের চাকা সর্বোপরি বন্ধ থাকায় মানুষের মানসিক অস্বস্থির সৃষ্টি হয়ে গেছে। সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ যারা দিন আনে দিন খায় নিত্যদিনের আহার জোগাড় হয় প্রত্যহ আয় থেকে। অথচ সপ্তাহব্যাপি দেশ অচল। নিত্য পণ্যের বাজার যেমন চড়া, তেমনি নিম্নবিত্তের পোয়া বারো। শিল্পকারাখানার চাকা ঘুরছে না। কোটি কোটি খেটে খাওয়া মানুষ আজ মাথায় হাত নিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করছে। যাদের কম রোজগার তারা নিত্য পণ্যে দাম চড়া হবার কারণে কষ্টে জীবন যাপন করছে। এরপর আর সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা আয় বঞ্চিত হয়েছে মানুষ। মানুষের স্বাভাবিক জীবন এখন অচল প্রায়। রাজধানী সহ সারাদেশে আয় ইনকামের পথ বন্ধ হয়ে রয়েছে। রাজধনী ঢাকায় যারা রিকশা-ভ্যান চালিয়ে জীবন চালায় তাদের অবস্থা আরও খারাপ। কেন অন্যদিকে ব্যবসা বাণিজ্য অমদানি রফতানি সবই বন্ধ। দেশের জিডিপির হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে, এ আন্দোলনে। কিন্তু কেন সরকার ইতিবাচক নির্দেশনা দিচ্ছে না। যার ফলে দেশের অর্থনীতি আরেকটা চরম ধাক্কা লাগল। যা সহজে কাটিয়ে ওঠার মতো নয়।
সবখানে ক্ষমতা নয়: একজন অসহায় মানুষের উপর ক্ষমতা দেখানোটা বোকামি বটে। সাধারণ ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়ে ক্ষমতা দেখানো এটা কোন দেশের প্রশাসনিক নীতি নৈতিকতা হতে পারেনা। তাদেরকে দমন করার অনেক পথ আছে। বাঁচিয়ে রেখে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারতো। কিন্তু হত্যা করে লাশ বানিয়ে ক্ষমতা দেখানো কোন যোগ্য ব্যক্তির কাজ নয়। ছাত্রদের আন্দোলন একান্ত সাধারণ ও শান্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সরকারের অপকৌশল তাদের মাঝে উত্তাপ বাড়িয়েছে, সবশেষে ক্ষমতার ব্যারোমিটারে তারা আটকিয়ে গুলি করল। যা একটি দেশ ও জাতির জন্য ন্যাক্কারজনক ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। এবং ক্ষমতার অপব্যবহার মাত্র।
একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে দেশের বিরোধী দলকে জড়িয়ে সরকার নানা বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে আরও অশান্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে। এমন ভ্রান্ত ধারণা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ন্যায় স্বাধীন দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করা সমীচীন নয়। এ ব্যপারে সরকার ও প্রশাসনকে আরো কৌশলি হয়ে দেশ জাতির কল্যাণমুখী চিন্তা করা দরকার। তাহলে দেশ তার গতিতে সামনে এগোতে পারবে। দেশের সকল মানুষ মিলেমিশে দক্ষ যোগ্যতার পরিচয় দিতে হলে দেশের পরিবেশ শান্ত ও শান্তিময় হওয়া দরকার। সর্বোপরি প্রতিপক্ষকে সর্বদা শত্রু ভেবে দেখা কোন দেশ জাতির জন্য কল্যাণময় নয়।
বাস্তবতা থেকে মানুষকে ভাল চিন্তার সুযোগ খুঁজে নেয়া দরকার। আজ সাধারণ রাজনীতির মধ্যে বারুদের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। যা একটি দেশের ও শিক্ষা গণতন্ত্রের চর্চা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে বিষয়টি সরকার সহজে সুন্দর সমাধান করার মতো পরিবেশ থাকতে কোন আশার বাণীও শোনায়নি। বরং লেজে গোবরে পরিবেশ জটিল করে বিরোধীদের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেদের ক্ষমতার মসনদ আরো দৃঢ় করার এ অপকৌশল জনগণ যথেষ্ট অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ব্যাপারে নতুন করে দেশের মানুষকে বোঝানো বাব বক্তব্য বিবৃতি দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। সেই কোটার সমাধানটা হলো বিচারমানি কিন্তু তালগাছ আমার। হাজার দরজা খোলা রেখে মূল ফটক বন্ধ করা নীতির কোন মূল্য নেই। এ আন্দোলনে যারা জীবন দিলো তাদের ব্যাপারে দেশের মানুষের করণীয় থাকলে সেটা সচেতন জনতাকে দেখা উচিত।
সর্বোপরি বাংলাদেশ জুড়ে এখন রণক্ষেত্র। প্রতিটি সভ্যদেশে যুদ্ধ হয় দেশের সীমান্তে বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে। আর বাংলাদেশে যুদ্ধ হচ্ছে দেশের ভিতরে। এবং সেটি নিজ দেশের সেনাবাহিনীর দ্বারা। সে যুদ্ধটি চলছে বাংলাদেশের প্রতিটি নগরে-বন্দরে। ফলে প্রতিটি জনপদে গুলি চলছে লাশ পড়ছে এবং বারুদের গন্ধে একাকার। সেই সাথে চলছে লাশ গায়েবের ষড়যন্ত্র। যুদ্ধক্ষেত্রের ন্যায় এখন বাংলাদেশের ভিতরে রাজপথ দিয়ে ট্যাংক ও সাজোয়া যান চলছে। রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে অস্ত্রধারী সেনা সদস্য এবং বিজিবির সিপাহীরা। তাদের ছত্রছায়ায় পুলিশ এবং র্যাব ঘরে ঘরে ঢুকে ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করছে। তাদের উপর নির্মম নির্যাতন করছে, অনেককে গুম ও হত্যা করছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী এখন জেলে। বাংলাদেশের আকাশে এখন অসংখ্য হেলিকপ্টার গানশিপ। সরকার তার বর্বরতাকে গোপন করতে গিয়ে বিগত কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছিল। বন্ধ রেখেছিল ইন্টারনেট, ইউটিউব, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ। কিন্তু বেশিদিন বন্ধ রাখতে পারেনি। ইন্টারনেট নির্ভর বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান না থাকায় কোটি কোটি টাকা খোয়া যাচ্ছে। বাস্তবতা অনুধাবন করে সেটা অল্প অল্প করে খুলে দিচ্ছে। মূলতঃ সরকারি উস্কানিতে আজ বাংলাদেশে এতো লাশের মিছিল ও বারুদের গন্ধ। যেমন দেশের নানা স্থাপনার ক্ষতি সাধন করে হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে দেশের তরুণ প্রজন্মের মেধাবীদের নিঃশেষ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো যে বিষয়টি সহজে মীমাংসা করা যেতো সংলাপে বসলেই। কিন্তু উসকানি দিয়ে তাদের যুদ্ধে নামিয়ে যদি দোষারোপ করা হয় তাহলে কিভাবে এদেশের মেধার মূল্যায়ন করা সম্ভব! শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত যে লাশ হয়েছে তার সঠিকহিসাব কেউ দিতে পারছে না, তবে হাজারের উপরে হবে। প্রশাসন এখন বিলাপ বকছে। উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। যা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে কেউ কখনো আশা করেনি।
অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ
মন্তব্য করুন