• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে কেন বাংলাদেশের ওপর নজর রাখতে বলছেন মন্ত্রী রাজনাথ সিং? * বিরোধীদের কর্মসূচিতে বোমা মারতেন যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতারাই, দাবি শ্রমিক ফেডারেশনের * ধর্ম-বর্ণ ও দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাউফলের উন্নয়নে ভুমিকা রাখব: ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ * বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অর্জিত বিজয় সংরক্ষণে ইসলামী সমাজব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই: আ ন ম শামসুল ইসলাম * ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৪০৩ * নিম্ন আদালত মনিটরিংয়ের দায়িত্বে হাইকোর্টের ১৩ বিচারপতি * সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ * আমিরাতে ক্ষমা পাওয়া ১৪ বাংলাদেশী দেশে ফিরবেন আজ * গণভবনে নির্মিতব্য স্মৃতি জাদুঘরে তুলে ১৬ বছরের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হবে: তথ্য উপদেষ্টা * নতুন সম্পদের খোঁজ পেল পাকিস্তান, বদলে দিতে পারে দেশের অর্থনীতিকে

ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার বাসনা ও বাস্তবতা

news-details

ছবি: সংগৃহীত


বাংলাদেশে ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিদ্যমান সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বললেও আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। তারা বলছে, স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। অতএব তাদের সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে বাধ্য। কিন্তু এ বক্তব্য হালে পানি পাচ্ছে না। কারণ তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটো নির্বাচনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ্ আছে। ফলে তাদের এ বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গ্রহণ করছে না।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ রয়েছে। তারা বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা, অবাধ নির্বাচনের কথা জোর দিয়েই বলছেন। তবে শাসকদল নির্বাচনকে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই বলে মনে করছে। একথা বারবার উচ্চারিত হচ্ছে দলটির নেতাদের মুখ থেকে। একটি সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী বলেছেন, ‘ক্ষমতা বেশি দিন থাকে না। তাই ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। এটা ভালো নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকা-পয়সা নিয়ে পালাতে হবে। কী, সেটা কি ভাবেন না? পার্টি যদি ক্ষমতায় থাকে, এখন যে টাকা-পয়সা রোজগার করছেন, এই টাকা নিয়ে তখন পালিয়ে বেড়াতে হবে।’

মূলত সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে দেশে যে আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি, বাক স্বাধীনতা হরণ, বিরোধী মত দলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথেচ্ছ ব্যবহার তাদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। ফলে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক কাজ করছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

বাংলাদেশের সংবিধানে বাক-স্বাধীনতা, দল গঠনের ষ্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যেমন সংবিধানের ৩৩ নং অনুচ্ছেদের ২ এ বলা হয়েছে, ‘গ্রেপ্তারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে গ্রেপ্তারের ঘন্টার মধ্যে হাজির করা হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাকে তদরিক্তিকাল প্রহরায় আটক রাখা যাবে না।’ অথচ দেশে বিরোধী দলের বহু নেতা দীর্ঘ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। যেখানে সরকার সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছে।

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণায় ২৫টি অধিকারের উল্লেখ আছে। তার মধ্য থেকে ১৮টি বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত আছে। জাতিসংঘের Universal Declaration of Human Right এর প্রথ অনুচ্ছেদেও বলা হয়েছে, All human beings are born free and equal in dignity and rights. এ সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হয়েও দেশের সংবিধানের ২৭ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদে যে অধিকারগুলোর উল্লেখ আছে তার সবকটিকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।

আসকের ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তৈরি করা একটি প্রতিবেদনে, ৬১৪ জনকে অপহরণের পর গুম করার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।  এর মধ্যে ৭৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ৯৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া ফিরে এসেছেন ৫৭ জন। অন্যদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়নি। সরকারের গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও দমন পীড়ন এখন আর দেশীয় ইস্যু নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরেশোরে প্রতিবাদ চলছে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের একটি বিশেষ বাহিনীর (র‌্যাব) কিছু সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার উপর এসেছে নিষেধাজ্ঞা।

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম বিবিসি, ডয়চে ভেলে, আল-জাজিরাতে তথ্যপ্রমাণবহুল বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ প্রণয়ন করে জাতিসংঘ। এর মাধ্যমে গুমের হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারটি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আসে এবং কাউকে গুম করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃতি পায়। সনদ অনুযায়ী, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির কোনো প্রকার হদিস না পাওয়া গেলে এবং সরকার, প্রশাসন বা প্রভাবশালীরা হত্যা করে লাশ লুকিয়ে ফেললে সেটি গুম বলে বিবেচিত হবে।

২০২১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের ৮৬ টি গুমের তথ্য তুলে ধরেছিল নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। হংকং-ভিত্তিক এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের ২০০৯ সালে থেকে অর্থাৎ বর্তমান আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এবছর জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬১৯ জন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটকের পর নিখোঁজ  হয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, কমপক্ষে দুই হাজার ৬৫৮ জন মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এরপরের পরিসংখ্যান আরো বড় হয়েছে।

যারা গুমের শিকার হয়েছেন তাদের অধিকাংশ বিরোধি দলের নেতাকর্মী। সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন দিলে বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে এসকল কর্মের বিচার হবে তখন দলটি পড়বে মহাসঙ্কটে।

এরই মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়াম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আওয়ামী লীগ কখনোই তৈরি করতে দেবে না। সেই পরিবেশ তৈরি হলে আওয়ামী লীগ তো নির্বাচনেই যাবে না। যদি আদর্শ পরিবেশে নির্বাচন হয়, তাহলে এমনিতেই সরকারের পতন হয়ে যাবে। অর্থনীতির প্রভাব লাগবে না।’

একারণে তারা কোনক্রমেই ক্ষমতা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। বিএনপির ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, ‘তাদের মুখে মধু অন্তরে বিষ। তারা বলে ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি হবে না। কী সুন্দর কথা। এমনিতেই তারা আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। ক্ষমতায় এলে বাকিটা এক রাতের মধ্যেই শেষ করে দেবে।’

গত ১৫ বছরের অপকর্ম ঢাকতে তারা নিয়েছে ভিন্ন কৌশল। সরকারের স্তুতি গাওয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে একদল ভাড়াটে লেখক।

 নিউয়র্ক টাইমস তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ‘নীরবে ধ্বংস করা হচ্ছে একটি গণতন্ত্র। সেখানে তারা বলছে, ‘১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশের জনবহুল আদালত কক্ষে বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শ্বাসরোধ করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার বিরোধী দলের নেতা, সদস্য ও সমর্থক বিচারকের সামনে দাঁড়ান। অভিযোগগুলো সাধারণত অস্পষ্ট এবং প্রমাণগুলো সর্বোত্তমভাবে দুর্বল। নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্থিরতার প্রভাব স্পষ্ট। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ৫০ লাখ লোকের প্রায় অর্ধেকই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আদালতে মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন।

সবচেয়ে সক্রিয় নেতা এবং সংগঠকরা কয়েক ডজন, এমনকি শত শত মামলার মুখোমুখী হন। এবার আন্দোলন দমাতে নেতাদের বেছে বেছে সাজা দেওয়ার কাজটা বেগবান করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ঢাকা দক্ষিণের আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আমানুল্লাহ আমানকে জেলে ঢুকানো হয়েছে। মহাসচিবসহ প্রায় সকল নেতাদের মামলার রায় প্রদানের জন্য রোডম্যাপ হাতে নিয়েছে সরকার যা তাদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হচ্ছে। নির্বাচনের আগেই বিরোধী দলকে বাগে আনতে প্রশাসনসহ সকল সেক্টরকে কাজে নামানো হয়েছে।

 অপরদিকে মিডিয়াকে সরকারের উন্নয়ন বন্দনার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। গত ১৫ বছরের অপকর্ম ঢাকতে তারা নিয়েছে ভিন্ন কৌশল। সরকারের স্তুতি গাওয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে একদল ভাড়াটে লেখক। এএফপির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য বের হয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক এ গণমাধ্যম তাদের রিপোর্টে বলছে, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণমাধ্যমে অনেক নিবন্ধ প্রকাশ হচ্ছে। বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এসব নিবন্ধ প্রকাশ করা হচ্ছে। এসব নিবন্ধের লেখকদের পরিচয় এমনকি ব্যবহৃত ছবি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যেসকল লেখকরা এ কাজের সাথে জড়িত এবং তারা যে পরিচয় দিয়ে নিবন্ধ লিখছেন তার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণ সাধারণত সহজ সরল। মূলত তাদেরকে বোকা বানানোর উদ্দেশ্যে এ সকল লেখা দেশি  বিদেশি লেখকদের নামে চালানো হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ছক। জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা ছড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রচার সেল। যেমন তার নিকৃষ্ট উদাহরণ হলো, সরকারের অনুদান নিয়ে মির্জা ফখরুলের সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা গ্রহণের খবর।

এর লক্ষ্য জনগণের মাঝে বিএনপিকে নৈতিকভাবে দূর্বল করে দেয়া। বিশ্লেষকরা এ সকল প্রবন্ধ প্রকাশের ব্যাপারে বলছেন, আসন্ন জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন সামনে রেখে টেকসই প্রচারণার প্রমাণ হিসেবে কথিত লেখকরা পরিচয় প্রকাশ না করেই এসব লিখছেন। এ সকল লেখা শুধুমাত্র দেশীয় সংবাদপত্রে প্রচার হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়, এগুলো বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। যেমন এসব লেখা এশিয়ার প্রভাবশালী ও চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার বরাতে ওয়াশিংটনভিত্তিক ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে। এএফপি তাদের অনুসন্ধানে এ ধরনের সাত শতাধিক ‍নিবন্ধের তথ্য তুলে ধরেছেন। এসব নিবন্ধ দেশি-বিদেশি ৬০টি সাইটে ৩৫ জন ব্যক্তির নামে প্রকাশিত হয়েছে। এসব লেখক গত বছরে প্রথমবারের মতো সামনে এসেছেন।

 এসব নিবন্ধে বেশিরভাগ অতি চীনপন্থি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সতর্কবার্তার সমালোচনায় লেখা হয়েছে। সেখানে আছে উন্নয়নের পক্ষে বিস্তর সাফাই। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে মানবতাবাদী, গণতন্ত্রের প্রহরী ও জনগণের কল্যাণকামী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অবশ্য আলবার্টৃ ক্যামু বলেছেন, ‘জনগণের মঙ্গলই’ হলো সর্বকালে সকল স্বৈরাচারের বুলি, এবং এটির আরো সুবিধা এই যে এটি স্বৈরাচারের দাসদেরকে বিবেকের সন্তুষ্টিও দেয়।’ এসব করা হচ্ছে নিজেদের শেষ রক্ষা করার জন্য।

বাংলাদেশে যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে তা সারা বিশ্ব জেনে গেছে। এজন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন বিশ্বের সকল মানবাধিকার সংস্থা এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। র‌্যাবের উপর তারই ধারাবাহিকতায় এসেছে স্যাংশন। এখন বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংসে যারাই ভূমিকা রাখবে তাদেরও এর আওতায় আনা হবে।

আগে ভারতের চোখে আমেরিকার যে বাংলাদেশ দেখার সাধারণ সমীকরণ ছিল সেখান থেকেও সরে এসেছে মার্কিনরা। ফলে ভারতও এখন বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিতে পারছে না। কারণ এ সমীকরণে আওয়ামী লীগ হেরে গেলে বাংলাদেশে তাদের পররাষ্ট্রনীতি হুমকির মুখে পড়বে। এটা সহজেই অনুমেয় আগামীর নির্বাচন এদেশের জন্য টার্নিং পয়েন্ট ।

২০২৪ এর নির্বাচন নির্ধারণ করবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে, কি থাকবে না। সেক্ষেত্রে গণতন্ত্র হেরে গেলে এদেশের জনগণকে আরো জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। বিশ্ব যেভাবে গণতন্ত্র, মনবাধিকার প্রশ্নে তৎপর তাকে উপেক্ষা করে কোন ধরনের ঝুঁকি নেওয়া আওয়ামী লীগেরও উচিত হবে না। কারণ এপথে হোচট খেলে তাদের রাজনীতি গভীর কোমায় চলে যাবে।

ইতিহাস বলছে,  জনগণের ভোটের অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এ উপমহাদেশে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হলো ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য।‘ উপমহাদেশের ইতিহাসেই দেখি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এক সময়ের প্রতাপশালী মুসলিম লীগ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। রাষ্ট্র হচ্ছে খরস্রোতা নদীর ন্যায়। এর মুখে বাধ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা যায় না। স্বৈরাচারের বালির বাঁধ ভেঙে সে তৈরি করে নেয় আপন গন্তব্য। সে পথ রচনায় কত স্বৈরাচার নির্মম পরিণতির শিকার হয়েছে তার উদাহরণ আমরা ইতিহাস থেকে পাই। সে জন্য বলি সময় থাকতে সাধু সাবধান। সর্বশেষ লালন ফকিরের মরমী গানের অংশ বিশেষ  দিয়ে শেষ করব ‘সময় গেলে সাধন হবে না।’ 

লেখক: আব্দুল খালেক

মানবাধিকার কর্মী ও কলামিস্ট

 


আব্দুল খালেক

মন্তব্য করুন