সংগৃহীত
গুমের শিকার ব্যক্তি, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সরকারি, বেসরকারি ও পারিবারিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের উপর গুরত্বারোপ করেছেন বক্তারা।
শুক্রবার ঢাকার পর্যটন ভবনে কমিটি ফর অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সিএডিএফ) ও যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ ফর সাইকিয়াট্রিস্টস এর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় বক্তারা এই দাবি জানান।
আকিজ বেকার্সের পৃষ্টপোষকতায় আয়োজিত কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন সরকারি প্রতিনিধি, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক দলের নেতা, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম কর্মী, জুলাই যোদ্ধা, ছাত্র ও তরুণ প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রায় ২০০ জন দেশি-বিদেশি অতিথি।।
গুমের শিকার ব্যক্তিরা মানসিক ও সামাজিক চাপের কারণে নিজেরা চিকিৎসা নিতে আসেন না। তাই তাদের পরিবারের কাছেই সরাসরি ও প্রযুক্তিনির্ভর চিকিৎসা পৌঁছাতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় পুলিশ কাস্টডিতে থাকা আহতদের ন্যূনতম চিকিৎসা দেয়া হয় নাই। আবার গুমের শিকার ব্যক্তি এবং জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসা প্রদানে ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুগত চিকিৎসকরা অপারগতা প্রকাশ করেছিল। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জমি-জমার ভাগ কিংবা টাকা উত্তোলন করতে পারেন না। কারণ, নিখোঁজ ব্যক্তি জীবিত কিনা মৃত তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ শুম তদন্ত কমিশনের সদস্য ডা. নাবিলা ইদ্রিস বলেন, গুমের প্রকৃত চিত্র এখনো উঠে আসেনি। গুমের শিকার মানুষেরা এখনো ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। তারা সাহস করে তাদের গুমের কথা বলতে পারছেন না।
রয়েল কলেজ অব সাইকিয়াট্টির চেয়ারম্যান ডা. আনিস আহমেদ বলেন, রাষ্ট্র যখন নিপীড়ন করে তখন তার প্রভাব শুধু ব্যক্তির উপরও সীমাবদ্ধ থাকে না। তার পরিবার ও তার আশেপাশের মানুষের উপর প্রভাব পরে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে শিশুরা নানা ধরনের ট্রমায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের চিকিৎসায় আর্ট থেরাপি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জালাল উদ্দিন বলেন, গুমের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যেন তাদের পরিবার ও সমাজে বোঝা না হয়ে উঠে, তার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহস যোগাতে হবে এবং মানসিক ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
গুম হতে বেঁচে ফিরে আসা মাইকেল চাকমা, লেফট্যানেন্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমান তাদের গুমের অশ্রুসিক্ত ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ননা করেন। গুমের শিকার ব্যক্তির জন্য পরিবারের মা, বাবা, স্ত্রী ও সন্তানের অপেক্ষার যন্ত্রণা অপরিসীম। অনিশ্চিত জীবন-যাপনে পরিবারের সম্পর্কগুলো চরম মানসিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হয়েছে। স্রষ্টার উপর বিশ্বাস ও ধর্মীয় চর্চা গুমের শিকার ব্যক্তিকে আয়নাঘরে বেঁচে থাকার আশা জুগিয়েছিল। গুম থেকে ফিরে এসে পরিবারের সাথে খাপ খাওয়ানো অন্যতম চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে গুমের শিকার ব্যক্তির স্ত্রী ও সন্তানের সাথে পুনঃসম্পর্ক স্থাপন ও পারিবারিক বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন। গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবার এখনো ভয় এবং শঙ্কার মধ্যে বাস করছে। গুমের সাথে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের চরম হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দালাল, সহযোগী সুযোগসন্ধানীদের বর্তমানে ভোল পাল্টে দেশপ্রেমিক বা মানবাধিকারকর্মী হতে দেখা জাতির জন্য উপহাসমূলক। গুমের শিকার ব্যক্তিবর্গ ৫ই আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আয়নাঘরের থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিবর্গ এখনো মামলার জন্য হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গুমের বিচার হওয়া ও গুমের শিকার ব্যক্তির পূনর্বাসন কোনোভাবেই বিলম্বিত হওয়া উচিত না। জুলাই বিপ্লব এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের ঘটনা পাঠ্যপুস্তকে সংযুক্ত করার ও সবাইকে সোচ্চার হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
সেন্টার ফর অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইউকের চেয়ারম্যান ডা. মুসলেউদ্দিন ফরিদ বলেন, সিএডিএফ দেশ ও জাতি গঠনে
স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, গবেষণাসহ গুমের শিকার ব্যক্তি, পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটসহ সিলেট ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বিদেশি চিকিৎসক দ্বারা বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করেছে এবং এধরণের কার্যক্রম চলমান থাকবে।
এনএনবিডি ডেস্ক:
মন্তব্য করুন