• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৩৯ * সরকার কি চাইলে এখন রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিতে পারে? * রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনের রাস্তা অবরোধ * পদত্যাগ করতে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম * ১০১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিন শেষ করল বাংলাদেশ * জামায়াত আমিরের সাথে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কের সাক্ষাৎ * পুলিশের ২৫২ এসআইকে অব্যাহতিতে রাজনৈতিক কারণ নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * মাহফুজ আনামের কাছে প্রশ্ন: হাসিনা-মুজিবের দুঃশাসনের পার্থক্য কোথায়? * ইরানকে গোপন তথ্য দেয়ায় ৭ ইসরাইলি আটক * নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই শীর্ষ নেতার নাম ঘোষণা করছে না হামাস

জামায়াত-বিএনপি রাজনৈতিক সমীকরণ

news-details

প্রতিকী ছবি


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন নিষ্ক্রিয় আওয়ামী লীগ। এমন অবস্থায় দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির মাঠে সরব হওয়ার পর দল দুটির মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তৃণমূল থেকে শুরু করে দল দুটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য ও কথাবার্তায়ও এই মতবিরোধ স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে।

যেটি প্রকাশ্যে আসে গত অগাস্টের মাঝামাঝি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন আয়োজনে সময় দেয়া নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে।

শেখ হাসিনার পতনের পর দীর্ঘ ২৫ বছরের রাজনৈতিক মিত্রদের মধ্যে হঠাৎ কেন এমন বৈরি সম্পর্ক তৈরি হলো, সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

সপ্তাহ তিনেক আগে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবেন না এমন একটি বক্তব্য দিয়েছেন। সেই বক্তব্য নিয়েও বিএনপির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

তবে জামায়াত আমিরের বক্তব্য মিডিয়ায় বিক্রিতভাবে পরিবেশন করা হয়েছে বলে অভিযোগ দলটির।তিনি বিজয় সরনিতে আয়োজিত ওই অনুষ্টানে কি বলেছেন তার পুরো ভিডিও জামায়াতের পক্ষ থেকে মিডিয়ায় সরবরাহ করে জামায়াত প্রতিবাদ জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ ও ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা যায়,তিনি বলেছেন,বিগত ১৫ বছরে আওয়ামীলীগ সরকার জামায়াতে ইসলামী এবং আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের উপর যে জুলুম নিপিড়ন করেছে সে ব্যাপারে দল হিসেবে আমরা কোন প্রতিশোধ নিবনা। তবে কোন ভিকটিম ফ্যামিলি বা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার যদি আইনের আশ্রয় নেয় সেক্ষেত্রে আমরা ওই পরিবারের পাশে থাকব।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হাসিনা সরকার যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে সে ব্যাপারে ক্ষমা করা বা প্রতিশোধ না নেয়ার মত কোন কথা ডা.শফিকুর রহমান বলেননি।বরং তিনি সব সময় সুস্পষ্ট বলেছেন,যার যা পাওনা তা সঠিকভাবেই বুঝে নিতে হবে। প্রতিটা হত্যা এবং হত্যা প্রচেষ্ঠার উপযুক্ত বিচার করতে হবে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়,জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অবশ্য বলেছেন, এ ধরনের প্রতিক্রিয়া থাকলেও বিএনপির সাথে তাদের বোঝাপড়ায় কোনো সংকট নেই।

আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জামায়াত অন্য রাজনৈতিক দলের মতোই একটা দল। বিএনপির সাথে জামায়াতের বিরোধের প্রশ্ন আসবে কেন?

গত ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিমিয় সভায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গত ১৫ বছরে জামায়াতে ইসলামীর ওপর আওয়ামী লীগ সরকার যে ‘নির্যাতন’ করেছে তার জন্য প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। জামায়াতের আমিরের এই বক্তব্যের পর এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় রাজনীতির মাঠে।

যদিও একদিন পরে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেন, প্রতিশোধ না নেয়ার মানে হচ্ছে আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অপরাধ যিনি করেছেন তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। শাস্তিও হতে হবে।

এর আগে ভারতের সাথে সম্পর্ক নিয়ে গত ২৮ অগাস্ট ঢাকায় সাংবাদিকদের সাথে আলাদা এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন জামায়াতের আমির। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা সবার সাথে বন্ধুত্ব চাই। বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগী দেশ আমাদের খুবই প্রয়োজন। প্রতিবেশী বদলানো যায় না। আপনারা বদলানোর চিন্তা করেন কেন।

জামায়াত আমিরের এসব বক্তব্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় বিএনপিতে।

সাতক্ষীরায় বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সরাসরি জামায়াতে ইসলামীর নাম উল্লেখ না করলেও তিনি জামায়াত আমিরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টানেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গত কয়েকদিনে দেখেছি কিছু রাজনৈতিক দল একটি প্রতিবেশী দেশের ফাঁদে পা দিয়েছে। সে কারণে তারা বিভ্রান্ত ছড়ায় এরকম কিছু কথাবার্তা বলছে। এমন অবস্থায় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতা তারেক রহমান।

জামায়াত আমিরের এসব বক্তব্যের জবাব দিতে দেখা গেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকেও।

দু’টি দলের শীর্ষ পর্যায়ে এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের বিষয়টিকে অবশ্য রাজনৈতিক দূরত্ব বলে মনে করছে না জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, কেন বিএনপি এ কথা বলছে সে জবাব বিএনপি দেবে। এ দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামীর না। আমাদের দিক থেকে আমরা মনে করি আমাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব নাই।

যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরি বলেন, অনেক নেতা বক্তব্য দিতে পারে, আমাদের অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকার দরকার হয় নেই, আমরা আমাদের মতো করে পলিটিক্স করছি।

গত ৮ অগাস্ট দায়িত্ব নেয়ার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেই ভাষণে জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, কিংবা নির্বাচন কতদিন পর হতে পারে এমন কোনো বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা ছিল না।

যে কারণে এই বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় অসন্তোষ জানান। তিনি যখন এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তখন ফেনী-নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল।

এমন অবস্থায় বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করে জামায়াতের আমীর বলেন, এখনও শত শত মানুষ হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। রক্তের দাগ মোছেনি। বন্যায় দেশ আক্রান্ত। এই সময়ে কেউ নির্বাচন নির্বাচন জিকির তুললে জাতি তা গ্রহণ করবে না।

জামায়াত নেতার এই বক্তব্য ভালভাবে নেয়নি বিএনপি। পরে এর জবাবে দলটির মহাসচিব বলেন, যাদের জনসমর্থন নেই, তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তাভাবনা করে, আমি কোনো দলের নাম বলছি না। যাদের ভোটে জয়ের সামর্থ্য নেই, তারাই নির্বাচনের বিরুদ্ধে।

নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতের বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিভিন্ন সংশোধন ও সংস্কারে মিনিমাম একটা সময় লাগবে সরকারের। এজন্য আমরা বলেছি একেবারে অল্প সময় দিলেও তারা পেরে উঠবে না, একটা যৌক্তিক সময় দেয়ার কথাই জামায়াত বলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে দল দুটির মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে।

রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ যখন প্রতিপক্ষ ছিল, তখন বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে একটা জোট ছিল। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ না থাকায় এখন ভিন্ন সমীকরণে এই মত পার্থক্য থাকা অস্বাভাবিক নয়।

জামায়াত সংশ্লিষ্টরা বলছেন,স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৩ বছর শুধুই নেতিবাচক প্রচারনার শিকার হয়েছে দলটি। তাদের দলীয় কিছু নিজস্ব কর্মসূচী রয়েছে যা নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার অবাধ সুযোগ তারা কখনো পায়নি। আর বিগত ১৭ বছর তো প্রকাশ্যে কথাই বলতে পারেরি। কার্যত জামায়াত ছিল নিষিদ্ধ।ফলে সাধারণ জনগণ একপেশে মিডিয়ার মাধ্যমে ভুল বার্তাটিই পেয়েছে। ৫ আগষ্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পাল্টে গেছে সেই দৃশ্যপট। অনুকূল পরিবেশের সুযোগ নিয়ে জামায়াত তার নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে এখন মানুষের ঘরে ঘরে পৌছোনোর চেষ্টা করছে। যার কিছু মিডিয়াতেও আসছে। সাধারণ মানুষ বলছে সব দলকে দেখা হয়ে গেছে , এখন জামায়াতকে আমরা একবার ক্ষমতায় দিয়ে দেখতে চাই,তারা একটি বৈষম্যহীন মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্র মানুষকে উপহার দিতে পারে কিনা। জনগনের সামনে এই উদাহরণও রয়েছে যে,৪দলীয় জোট সরকারে জামায়াতের ২জন মন্ত্রী ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ২ টাকার দূর্নীতির অভিযোগও কেউ আনতে পারেনি।

 বিএনপির মাথাব্যাথার কারণ এখানেই। জামায়াত যখন ঘরে ঘরে পৌছে গেছে তখন বিএনপির হাইকমান্ডকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজিসহ নানান নেতিবাচক কর্মকান্ড দমন করতে বহিস্কারসহ নানা সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে।অভিযোগ এসছে যে,বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে অন্যতম অর্থযোগানদাতা ব্যবসায়ি গ্রুপ ইতোমধ্যে এই দলের হাইকমান্ডের সাথে হাত মিলিয়েছে।তাদের ধারনা নির্বাচন দেরি হলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের এসব নেতিবাচক কর্মকান্ড দলকে আরো অজনপ্রিয় করতে পারে। তাই দ্রুত নির্বাচন চায় দলটি।


শহীদুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

2 মন্তব্য

  • মহররম আলী (চেয়ারম্যান), 14 October, 2024 12:29 PM

    বাস্তবতার আলোকেই এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে। ধন্যবাদ জানাই কর্তৃপক্ষকে। দল যার যার দেশ সবার। আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বিশ্বের মানচিত্রে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে।

  • , 14 October, 2024 12:26 PM

    ভালো গ্রহণযোগ্য রিপোর্ট হয়েছে। তবে মূল কথা হতে হবে ফ্যাসিবাদ উত্থানের সুযোগ নিচ্ছিদ্র করা। বিভাজনের সুযোগ যেন পতিত স্বৈরাচার গ্রহণ করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকা।