• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪ * ইউনূসকে নিয়ে অযথাই শঙ্কায় নয়াদিল্লি * ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত মানবে না ছাত্রদল * জাবিতে শামীমকে পিটিয়ে হত্যায় ছাত্রলীগ নেতা হাবিব গ্রেফতার * তোফাজ্জল হত্যার দায় স্বীকার করে ৬ ঢাবি শিক্ষার্থীর জবানবন্দি * যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জামায়াতকে প্রস্তুত থাকতে হবে : বুলবুল * ফ্যাসিবাদের দোসর অনেক সচিব নাশকতার চেষ্টা করছেন: রিজভী * তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার অনুরোধ সেনাবাহিনীর * চেন্নাই টেষ্টে দ্বিতীয় দিনে ১৭ উইকেটের পতন, ব্যাকফুটে বাংলাদেশ * পুলিশের সাবেক ডিসি মশিউর রহমান ৭ দিনের রিমান্ডে

রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা সম্প্রসারণ র্কমসূচি

news-details

সংগৃহীত ছবি


শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষাক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর অবদান ও মানবতার জন্য সমাজ কল্যানের জন্য শিক্ষার ক্ষেত্রে যে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন, তা ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে আছে। জাহেলিয়াতের তিমির ভেদ করে সেখানে ইসলামের আলো অত্যন্ত চমৎকারভাবে দীপ্তি লাভ করে আছে। মানুষের মন মগজ ও চিন্তার মাঝে সে আলো এমনভাবে প্রতিভাত হয়েছে যে, সোনার মানুষ গড়ে উঠেছে। নির্মিত হয়েছে সুষম সমাজ ও কোরানের রাজ। রাসূল (সা.)-এর জীবনে একটি সমাজ উপহারের নিমিত্তে যে সব কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাসূলের শিক্ষানীতি। 

মহানবী (সা.) জাতিকে শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করেছেন। কারণ শিক্ষা বিপ্লব হচ্ছে সংগঠনের একমাত্র উপায়। তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর তৈরী একজন আদর্শ শিক্ষক্। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী (সা.)-এর কাছে প্রথম বাণী অবতীর্ণ করেন “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন”। 

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে উৎকৃষ্ট জ্ঞান শিক্ষা দান করার উদ্দেশ্যেই মহান রাব্বুল আলামীন মানবতার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ইসলামের দিকপাল দিশারী রাসূল (সা.) কে এ ধরণীতে পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহর ঘোষণা দিয়েছেন “হে রাসূল (সা.) নিশ্চয় আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের কৃতকর্মের পরিবেশক , সুসংবাদদাতারূপে সতর্ককারীরূপে, আল্লাহর নির্দেশে আল্লাহর দিকে আকর্ষণকারী রূপে এবং আলোক বিচ্ছুরণকারী মশাল রূপে। 

সূর্যের আলোতে যেমন পৃথিবী আলোকিত হয় তাহার শিক্ষার সৌরভ ও তেমনি সমস্ত পৃথিবী জুড়ে অজ্ঞতার অন্ধকার বিচ্ছুরিত  করেছে। রাসূল করীম (সা.) এর শিক্ষায় নিহিত আছে প্রকৃত শান্তি। সর্বকালের সর্বজনের জন্য তিনিই একমাত্র আদর্শ শিক্ষক  সমস্যাসংকুল পৃথিবীতে তার গৃহীত শিক্ষানীতি ও আদর্শ পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে মজলূম ও জালিম উভয়ের অন্তরেই প্রকৃত শান্তি আসতে পারে। 

শিক্ষার উদ্দেশ্য : শিক্ষা হচ্ছে মানসিক বিকাশের প্রক্রিয়া মাত্র। কোন জাতির আদর্শ ও স্বকীয় সংস্কৃতি অর্জনের প্রধান হাতিয়ারই শিক্ষা। শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে সুশিক্ষিত ও মার্জিত পুরুষ ও নারী তৈরী করা , যারা আদর্শ মানুষ এবং রাষ্ট্রের সুযোগ্য নাগরিক রূপে তাদের কর্তব্য পালনে তৎপর থাকবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামীন কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন- “তিনিই উম্মীদের (নিরক্ষর) মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে, যিনি তাদের মধ্য থেকে, যিনি তাদের কাছে তেলাওয়াৎ করেন তার আয়াতসমূহ ; তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত, যদিও ইতোপূর্বে তারা ছিল ঘোরবিভ্রান্তিতে”। (আল কোরআন-৬২:২) অন্য আরেক আয়াতে বলা হয়েছে- “এবং তুমি যা জানতেনা তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, তোমার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে”। (আল কোরআন-৪:১১৩) হাদীসে বলা হয়েছে “যে শিক্ষার মধ্যে কোন কল্যাণ বা উপকারীতা নেই, তিনি তা শিখতে বারণ করেছেন”। 

উপরোক্ত কোরআন হাদীসের আলোকে শিক্ষার উদ্দেশ্য এভাবে বলা যায়-

১. মানুষকে পবিত্র করা।

২. অপকারী জ্ঞান শিক্ষা না দেয়া।

৩. মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় তৈরী করা।

৪. মানুষ যা জানেনা, তা জানানো।

৫. জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া।

৬. আল্লাহর নির্দেশনাবলী শিক্ষা দেয়া।

৭. যে শিক্ষা মানুষের অন্তরকে পরিতৃপ্ত করে, তা শিক্ষা দেয়া।

৮. কর্তব্যবোধ জাগ্রত করে, এমন শিক্ষা দেয়া।

৯. জাতির আদর্শ ও সংস্কৃতির লালন শিক্ষা দেয়া।

শিক্ষার গুরুত্ব : বিদ্যা আলো এবং মূর্খতা অন্ধকার। আলো ও আঁধার একটি অপরটির সম্পুর্ণ বিপরীত্। আল কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন “আঁধার ও আলো কি সমান? তোমরা কি চিন্তা করোনা? আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম ঐ ব্যক্তিগণ যারা মূক বধির এবং নির্বোধ (৮:২২)। রাসূল (সা.) বলেছেন “একজন আবেদের পদ মর্যাদার তুলনায় একজন শিক্ষিত লোকের পদ মর্যাদা যেন তারকারাজির মধ্যে পূর্ণচন্দ্র”। তিনি আরো বলেছেন-“প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর জন্য বিদ্যা অর্জন ফরজ”। তিনি বলেন “নিশ্চয় আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। তিনি আরো বলেছেন “ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য জ্ঞানার্জনের পথে যার মৃত্যু হয়, তাদের ও নবিদের ভেতর বেহেশতের মাত্র একধাপ পার্থক্য।

রাসূল (সা.) শিক্ষা ব্যবস্থা : পনেরশত বছর পূর্বে আরবের মরুভ’মিতে মহানবী (সা.) বিদ্যা শিক্ষাকে ফরজ করে দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি। তিনি এর জন্য গ্রহন করেছিলেন অসংখ্য বাস্তব পদক্ষেপ ও কর্মসূচি। ইদানীং বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদগন যে সমস্যা নিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন, কমিশনের পর কমিশন গঠন করেও কোন সমাধান করতে পারছেন না। অথচ সকল সমাধানের  কর্ণধার মুহাম্মদ সা. তা দেড় হাজার বছর আগের সে সমাধানের আধুনিক নির্দেশনা ও সমাধানের বাস্তব নজির রেখে গেছেন। 

যে সমাজে নারীর সামান্যতম মর্যাদা স্বীকৃত হয়নি, দিল না তার অধিকারটুকুও, সেখানে রাসূল সা. নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই জ্ঞান অর্জনকে বাধ্যতামূলক করে শিক্ষার মহান আদর্শকে সার্বজনীন ভাবে প্রসারিত করে দিয়েছিলেন। মহানবী উম্মী হয়েও যেমনি ছিলেন জ্ঞানের স¤্রাট, তেমনি ছিলেন শিক্ষার আদর্শ প্রসারেও সমাজ কল্যানে সর্বশ্রেষ্ঠ দিশারী। এজন্য আল কোরআনে মহানবী সা. কে বলা হয়েছে সিরাজাম মুনিরা অর্থাৎ ‘প্রদীপ্ত দ্বীপশিখা’।

বাস্তবিক পক্ষে রাসূল করীম সা. পবিত্র সত্তাই ছিল পরিপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র। ইসলামের প্রথম দিকে সাহাবা আজমাইনেরা অনেকটা চুপিসারে রাসূল সা. এর কাছে শিক্ষা নিতেন। এ সময়ে বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি অনুসারে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখেন। সেক্ষেত্রে রাসূলের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। মক্কী যুগের শিক্ষা পদ্ধতি মাদানী যুগের শিক্ষা পদ্ধতি 

ক. মসজিদে আবু বকর : ইসলামের ঊষালগনে পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল খুবই ভয়াবহ। বাইরে তেমন একটা খোলামেলা একত্রিত হওয়া যেতোনা। তাই আবু বকর রা. বাড়ির আঙ্গিনায় মসজিদ তৈরী করেন এবং সেখানেই নামাজ আদায় করতেন। সাথে সাথে স্বল্প পরিসরে জ্ঞানের তর্জমা আলোচনা করতেন। সেখানেই সাধারন মানুষ ইসলামের দীক্ষা নিতে আসতেন। সেখানেই সাধারন মানুষ ইলমে দ্বীনের চর্চা চলমান থাকে।

খ. ফাতেমা বিনতে খাত্তাবের শিক্ষালয় : ফাতিমা বিনতে খাত্তাব ইবনু নুফাইল ছিলেন উমার ইবনুল খাত্তাবের বোন। ইসলামের সূচনাকালে স্বামী সাঈদের সাথেই ইসলাম গ্রহন করেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই নিজেদের ঘরে কোরআনের বাণী চর্চা করতেন এবং সাথীদের সাথেই ইসলাম ও কুরআনের বাণীর সন্ধান পান, ইসলামের ছায়াতলে আসেন।

গ. দারুল আরাফায় : আল আরাফায় ইবনে আবিল আরাফায় মক্কার প্রথম পর্বে দশজনের পরে ইসলাম গ্রহন করেন। মক্কায় তার বাড়ি সাফা পাহাড়েরর পাদদেশে। মক্কায় মাঝে এ স্থানটি ছিল বরকতময়। সাহাবাদের একটি বড় অংশ এখানে সামীল হতের এবং প্রশিক্ষন নিতেন। এ জায়গাতে রাসূল (সা.) গোপনে ইসলামী দাওয়াতের মৌলিক কাজ ও সাহাবাদের কোরআনের দীক্ষা দিতেন।

ঘ. চলতে ফিরতে তালিম : উমার (রা.) এর ইসলাম গ্রহনের পর সাহাবায়ে কেরাম (রা.) প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। বিশেষ করে শিয়াবে আবু তালিবে বন্দী অবস্থায় মুসলিমদেরকে কুরআন শোনাতেন। এবং তাদের পড়াতেন। এমনিভাবে হাবশায় হিজরতকালীন সময়ে হযরত মুসয়াব বিন উমায়ের (রা.) ও জাফর বিন আবি তালিব (রা.) সাহাবায়ে কেরামদেরকে শিক্ষা দিতেন। 

এছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) কাফির-মুশরিকদের মজলিস, মাহফিল হাটবাজার, মেলা, প্রদর্শনীয় সমূহ এবং বিশেষ করে হজ্বের মওসুমে বিভিন্ন স্থান ও অবস্থানে উপস্থিত হয়ে ইসলামের দাওয়াত পেশ করতেন। সেখানে তিনি কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষকে শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করতেন, তাই এ জাতীয় সকল স্থানই কুরআন ও হাদীসের দ্বীনের শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। 

মদিনার কেন্দ্র সমূহ ২ ভাগে বিভক্ত- ক) রাসূলুল্লাহ সা. এর হিযরতের পূর্বেই খ) হিযরতের পরের শিক্ষা কেন্দ্র।

হিজরতের পূর্বেই শিক্ষাকেন্দ্র ছিল ৩টি। যথা: ১) মসজিদে বানু যুবাইক ২) মসজিদে কুবা ৩) সাদ ইবনে যুবায়া (রা.) এর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা। শিক্ষার ক্ষেত্রে তৈরী গণমানুষের হৃদয়ে স্থান করার যেসব কৌশল ও কর্মসূচি রাসূল (সা.) নিয়েছিলেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য :

ক. আসহাবে সুফফা।

খ. শিশু কিশোর ও বৃদ্ধদের জন্য শিক্ষালয়।

গ. পারিবারিক শিক্ষালয়।

ঘ. মহিলা সাহাবিদের শিক্ষালয়।

জয়ধ্বনী উচ্চারিত হয়েছে। শিক্ষাদান পদ্ধতির বিশেষ বিশেষ দিক তুলে ধরা হলো-

১. পর্যালোচনামূলক ও প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি।

২. জিজ্ঞাসিত বিষয় থেকে বেশী শিক্ষাদান।

৩. প্রশ্নকারীর উত্তর অন্যকে দিয়ে দেয়ার পদ্ধতি অবলম্বন।

৪. প্রশ্ন ছাড়াই সাবলীল আলোচনার মাধ্যমে।

৫. কৌতুক ও রসিকতার মাধ্যমে শিক্ষাদান।

৬. ঘটনামান কোন বিষয়ে চুপথেকে শিক্ষাদান।

৭. ব্যবহার ও আচরণের মাধ্যমে শিক্ষাদান।

৮. পারস্পরিক পর্যালোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে শিক্ষাদান।

৯. ইতিহাস ও বিশেষ কাহিনীর বাস্তবতা থেকে শিক্ষাদান।

১০. অতীতের কোন বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষাদান।

১১. বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক ও শপথের মাধ্যমে শিক্ষাদান।

১২. উপমা ও দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষাদান।

১৩. মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির বিশেষ নেয়ামত থেকে শিক্ষাদান।

১৪. মানব সৃষ্টির গুরুত্ব ও কর্তব্য থেকে শিক্ষাদান।

১৫. পূর্বের নবী-রাসুলদের আনীত ধর্মগ্রন্থ ও প্রকৃতির বাস্তবতা থেকে শিক্ষা।


অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ

মন্তব্য করুন