• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৩৯ * সরকার কি চাইলে এখন রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিতে পারে? * রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনের রাস্তা অবরোধ * পদত্যাগ করতে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম * ১০১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিন শেষ করল বাংলাদেশ * জামায়াত আমিরের সাথে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কের সাক্ষাৎ * পুলিশের ২৫২ এসআইকে অব্যাহতিতে রাজনৈতিক কারণ নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * মাহফুজ আনামের কাছে প্রশ্ন: হাসিনা-মুজিবের দুঃশাসনের পার্থক্য কোথায়? * ইরানকে গোপন তথ্য দেয়ায় ৭ ইসরাইলি আটক * নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই শীর্ষ নেতার নাম ঘোষণা করছে না হামাস

মাহফুজ আনামের কাছে প্রশ্ন: হাসিনা-মুজিবের দুঃশাসনের পার্থক্য কোথায়?

news-details

ছবি: সংগৃহীত


জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে পরাজিত ফ্যাসিবাদ নানারূপে সক্রিয়। ফ্যাসিবাদের দোসর, কথিত সুশীলরা অপতৎপরতায় লিপ্ত। কথিত সুশীলরা শেখ মুজিবের কাঁধে ভর করতে চাচ্ছেন এখন। বাংলাদেশে ফ্যাসিজমের আইকন হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে দেবতা বানিয়ে মাঠে ফ্যাসিবাদকে বাঁচিয়ে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন হয়েছেন মাহফুজ আনাম গংরা। শেখ মুজিব বন্দনার ওকালতিতে নেমেছেন চিহ্নিত এই ভারতীয় দালাল গোষ্ঠী। ভারতপন্থি হিসাবে অতি পরিচিত ডেইলি স্টার পত্রিকাটির সম্পাদক মাহফুজ আনাম এই গোষ্ঠীর সামনের কাতারে রয়েছেন।

১৮ আগস্ট (২০২৪) মাহফুজ আনামের স্বনামে লেখা একটি সম্পাদকীয় চোখে পড়ে। ডেইলি স্টারের বাংলা ইংরেজি, উভয় ভার্সনে এটি প্রকাশিত হয়েছে। বাংলায় শিরোনাম- ‘হাসিনার দুঃশাসনের মাপকাঠিতে বঙ্গবন্ধুকে বিচার করা ঠিক হবে না।এখনে তিনি হাসিনার দুঃশাসন কবুল করেছেন। অথচ, ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর এই মাহফুজ আনাম- শেখ হাসিনার প্রশংসায়- “বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনাশিরোনামে বিশেষ সম্পাদকীয় লিখেছিলেন। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে এখন আবার শেখ হাসিনার দুঃশাসন কবুল করছেন।

শেখ হাসিনার দুঃশাসন কবুল করে ফ্যাসিবাদ জিয়ে রাখতে তাদের পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেবতা বানানোর অপচেষ্টা তিনি করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, তারাই ফ্যাসিবাদকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়েছিলেন ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারু। তিনি প্রকাশ্যে মিডিয়ায় বলেছিলেন জরুরী আইনের সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। জরুরী আইনের সরকারের ধারাবাহিকতাই ছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ।

দুই দিন আগে মাহফুজ আনামের লেখা সম্পাদকীয়টি পাঠ করলে বোঝা যায়, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে লিখতে বসেছিলেন। কারণ, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের চাপিয়ে দেওয়া ৮টি জাতীয় দিবস বাতিল করেছে এই সরকার। শেখ পরিবারকে ঘিরে ছিল এই ৮টি জাতীয় দিবস। গোপালগঞ্জের শেখ পরিবার বন্দনার এই দিবস গুলো পালন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। দিবস গুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তিনি বড়- দুঃখ পেয়েছেন। এই দুঃখ সইতে না পেরে পরের দিনই নসিহত দিতে সম্পাদকীয় লেখেন। তার দৃষ্টিতে শেখ মুজিবুর রহমান হলেন দেবতা। তাকে ঘিরে তৈরি করা জাতীয় দিবস বাতিল করা ঠিক হয়নি।

তার লেখায়ও শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমলের প্রসঙ্গ টেনেছেন। তবে অতি অপকৌশলের আশ্রয়ও নিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে দুর্ভিক্ষ, বিচারবহির্ভূত হত্যা, খুন, গুম, ভোট জালিয়াতি, এক দলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা, আইন বানিয়ে গণমাধ্যম নিষিদ্ধ করা, আওয়ামী লুটপাট, কিছুই মাহফুজ আনামের রাডারে ধরা পড়েনি। তার রাডারে ধরা পড়েছে, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার আগে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছেন। এজন্য শাসক শেখ মুজিবুর রহমানের দুষ্কর্ম মুছে ফেলতে হবে!

তার কাছে কয়েকটি প্রশ্ন রাখতে চাই। শেখ মুজিবুর রহমান রহমানের একদলীয় বাকশালকে মাহফুজ আনাম কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? এক দলীয় বাকশাল কি ফ্যাসিবাদের সাংবিধানিক রূপ নয়? শেখ মুজিব আমলে রক্ষীবাহিনীকে আগাম ইনডেমনিটি দিয়ে মানুষ হয়রানি গুম-খুনের লাইসেন্স দেয়াকে কিভাবে দেখেন মাহফুজ আনাম? সিরাজ শিকদারকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে কি শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় সংসদে উল্লাস করেনি? রক্ষীবাহিনী দিয়ে বিচার বহির্ভূত অসংখ্য হত্যার জন্য কি শেখ মুজিবুর রহমান দায়ী নন?

ভিন্নমত দমনের লক্ষ্যে সকল পত্রিকা গণমাধ্যম শেখ মুজিবুর রহমান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। মাহফুজ আনামের কাছে জানতে চাই, গুলো শেখ মুজিবুর রহমানের সুশাসন ছিল, নাকি দুঃশাসনের চিত্র?

স্বাধীনতার আগে শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতা ছিলেন। রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। তবে তার রাজনৈতিক বক্তৃতায় অনেক শুভঙ্করের ফাঁকিও ছিল। পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে বৈষম্যের কথা তিনি বলতেন। জিনিসপত্রের দামের পার্থক্যের বয়ান দিতেন। এই গুলো বলে মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন। কিন্তু নিজে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন নি। তার সহকর্মী তাজউদ্দিনের বর্ণনা অনুযায়ী স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হন নি। বরং পাকিস্তান বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করে পশ্চিমা পাকিস্তানে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ২৫ মার্চ (১৯৭১) দিবাগত রাতে।

স্বাধীনতা পরবর্তীতে দেশে ফিরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লুটপাটের রাজনীতি। পাকিস্তান আমলে মানুষ খেয়ে পড়ে বেঁচে ছিল। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে মানুষ দুর্ভিক্ষে খাবারের অভাবে মরেছে। টাকার অভাবে কাফনের কাপড় কিনতে না পেরে আত্মীয়স্বজন লাশ দাফন করেছে কলাপাতায় জড়িয়ে। ডাস্টবিনে মানুষ এবং কুকুর খাবার নিয়ে টানাটানির ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল মুজিব আমলে। এসবই হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের পশ্রয়ে আওয়ামী লুটপাটের কারণে। শেখ হাসিনাও একই কাণ্ড করেছেন। বরং শেখ হাসিনার চেয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের দুঃশাসন ছিল আরো বেশি ভয়াবহ।

শেখ হাসিনা শেখ মুজিবুর রহমানের দুঃশাসনে কিছু মিল এবং অমিল রয়েছে। সে গুলো নিম্নরূপ-

(এক)

শেখ হাসিনা দুঃশাসনে সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের মত সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন নি। শেখ মুজিবুর রহমান আইন তৈরি করে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক দল নয়, ভিন্নমতের রাজনীতিকেই সহ্য করেন নি শেখ মুজিব।

(দুই)

শেখ মুজিবুর রহমান এক দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা  করে সকল ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়েছিলেন সাংবিধানিকভাবে। চতুর্থ সংশোধনী ছিল জাতির জন্য একটি কালো অধ্যায়। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা নিজের কাছে নিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। নিজেকে সংবিধানে আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা সাংবিধানিকভাবে এই দুঃষ্কর্মটি করেন নি। শেখ হাসিনা সবই নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ভোট নাটক সাজিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বারবার। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে নিজেকে আজীবনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন নি শেখ হাসিনা।

(তিন)

বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার শতভাগ অনুগত বানিয়েছেন কৌশলে। শেখ মুজিবুর রহমান যা করেছিলেন সেটা তিনি করেন নি। শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধান সংশোধন করে বিচার বিভাগের সকল ক্ষমতা নিজের হাতে। শেখ হাসিনা অতি কৌশলে বিচারকদের তার প্রতি শতভাগ অনুগত করেছেন। শেখ হাসিনার ইচ্ছার বাইরে গিয়ে বিচারকরা কিছু করেন নি। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সামান্য ব্যতিক্রম করার পরপরই তাকে লাথি দিয়ে দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। এতেই অনুমান করা যায় শেখ হাসিনা বিচারকদের কতটা অনুগত করেছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে ছিলেন। জুডিশিয়ারির সকল ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়েছিলেন। তার ইচ্ছার উপর বিচারকের চাকুরি নির্ভর করত সাংবিধানিকভাবে।

(চার)

মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে শেখ মুজিবুর রহমান সকল পত্রিকা গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মাত্র চারটি পত্রিকা রাখা হয়েছিল তার নিয়ন্ত্রিত। শেখ হাসিনা আইন বানিয়ে সকল গণমাধ্যম বন্ধ করেননি। যাদেরকে শেখ হাসিনা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন শুধু সে গুলো বন্ধ করে দিয়েছেন নানা অজুহাতে। বাকী সকল পত্রিকা গণমাধ্যমকে শেখ হাসিনা নিজের অনুগত করে নিয়েছেন। এমনকি তার অনুগত লোক বসিয়ে নতুন নতুন মিডিয়া হাউজ তৈরি করেছেন।

পিতা কন্যার দুঃশাসনের মিল-অমিলের চারটি উদাহরণ এখানে দিলাম। এই চারটির মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান কোন ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন না। তাহলে মাহফুজ আনামরা কোন যুক্তিতে শেখ মুজিবকে দেবতা বানিয়ে ফ্যাসিবাদ জিইয়ে রাখতে চাইছেন।

 

মাহফুজ আনামদের মত কথিত সুশীল ফ্যাসিবাদী দোসরদের শেখ হাসিনার দুঃশাসনের সহযোগী হিসাবে বিচারের আওতায় আনাই হচ্ছে এখন সময়ের দাবী। এই মাহফুজ আনাম গংরাই ফ্যাসিবাদকে দীর্ঘায়িত হতে সহযোগিতা করেছে। এখন আবার শেখ মুজিবকে দেবতা বানিয়ে ফ্যাসিবাদ জিইয়ে রাখতে চাইছেন তারা।


অলিউল্লাহ নোমান

মন্তব্য করুন