• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* জামায়াত নেতা আজহারের রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় * জ্বালানি তেলের দাম ১০-১৫ টাকা কমানো সম্ভব : সিপিডি * যুদ্ধ বন্ধ না হলে কোন জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হবেনা: হামাস * প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন এ এম এম নাসির উদ্দীন * সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের ৩৪৩ অ্যাকাউন্টে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা জব্দ * দায়িত্ব নিয়েছেন নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী * শেখ হাসিনার পক্ষে লড়বেন জেড আই খান পান্না * আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বাহারুল আলম * সাবেক এমপি শাহজাহান ওমর থানা হেফাজতে * জামিন পেয়েছেন শফিক রেহমান

যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে যুদ্ধে নেমেছে!

news-details

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন


সম্প্রতি লেবাবনের বৈরুতে হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা এবং জুলাইয়ে তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ১ অক্টোবর  ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিরোধ করতে ইসরাইলকে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ব্যাপারটি এমনও নয় যে ইসরাইল ইতিমধ্যে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর আঘাত থেকে নিজেদের রক্ষায় অতি-অত্যাধুনিক সুরক্ষার বিভিন্ন স্তর দিয়ে সজ্জিত নয়। যার ফলে ন্যূনতম ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার বিপরীতে তাদের লেবানন ও গাজার মানুষগুলোকে বর্বরভাবে হত্যার অনুমতি দেয়।

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, 'মার্কিন নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ারগুলো ইসরাইলি বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটের সঙ্গে যোগ দিয়ে ইন্টারসেপ্টর নিক্ষেপ করে ভেতরের ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর 'পেশাদারিত্বের' প্রশংসা করে সুলিভান 'হামলার পূর্বাভাসে মার্কিন সামরিক বাহিনীর দক্ষ কাজ এবং সূক্ষ্ম যৌথ পরিকল্পনার' প্রশংসা করেন।

অন্যদিকে বাইডেন প্রশাসন গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের চলমান গণহত্যাকে সতর্কতার সঙ্গে বন্ধ করতে একবারও এমন পদক্ষেপ নেয়নি। যেখানে সরকারি হিসাব অনুযায়ী এক বছরেরও কম সময়ে ৪১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যদিও প্রকৃত নিহতের সংখ্যা নিঃসন্দেহে আরও বেশি হবে। লেবাননে বর্তমানে যে অযৌক্তিক হত্যাযজ্ঞ চলছে তাতে হস্তক্ষেপ করাকে দক্ষ মার্কিন সামরিক বাহিনীও প্রয়োজনীয় মনে করেনি। যেখানে ইসরাইল এক সপ্তাহেরও কম সময়ে ৭০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে।

 এদিকে অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এখন একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে ‘টেনে আনতে’ পারে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরে এই আশঙ্কাই কেবল বাড়তে পারে। তবে বাস্তবতা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আসলে কোথাও ‘টেনে আনা’ হচ্ছে না।

দৃশ্যপট অনুযায়ী বরং যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে নিজের সৃষ্ট একটি অবস্থানে রয়েছে। আর সেই বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্র  এরই মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।

এটা নিশ্চিত যে, গণহত্যা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করার ইসরাইলি প্রচেষ্টায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে বার্ষিক ভিত্তিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার মার্কিন ভূমিকা স্পষ্টভাবে জড়িত ছিল। ইসরাইলকে কিছু আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে বাইডেনের মাঝে মাঝে হুঙ্কার সত্ত্বেও ৭ অক্টোবর থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন সহায়তা কেবল বহুগুণ বেড়েছে।

গত আগস্টে বাইডেন প্রশাসন তাদের অপরাধ সহযোগী ইসরাইলের জন্য দুই হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করার প্রস্তাব অনুমোদন করে। 

গত ২৬ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ‘ইসরাইল তার চলমান সামরিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে এবং এই অঞ্চলে গুণগত সামরিক কার্যক্রম বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৮৭০ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পেয়েছে।’

প্যাকেজটিতে ‘প্রয়োজনীয় যুদ্ধকালীন সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে আয়রন ডোম অ্যান্টি-মিসাইল সিস্টেম, ডেভিডের স্লিং এবং একটি উন্নত লেজার সিস্টেমসহ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।’

অন্য কথায়, ইসরাইল তার নিজের কর্মকাণ্ডের বৈধতা দিতে নিজেকে  ‘রক্ষা’করার অন্তরালে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রস্তুত হবে- এমন কর্মকাণ্ড আক্ষরিক অর্থেই সন্ত্রাসবাদ।

আসলে এটি রকেট বিজ্ঞান নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগতভাবে ইসরাইলকে যে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছে তা এমন একটি দেশকে বোঝায় না যার মাধ্যমে দেশটিকে সংঘাতের মধ্যে ‘টেনে আনা’ হচ্ছে। বরং এটি এমন একটি দেশকে বোঝায় যা সমস্ত অভিপ্রায় এবং উদ্দেশ্যগুলোর জন্য চলমান সংঘাতের একটি সক্রিয় যুদ্ধবাজ।

চলতি বছরের এপ্রিলে দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলের প্রাণঘাতী হামলার জবাবে ইরান শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে ইসরাইলকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই উপলক্ষেও, ইরানকে ব্যাপকভাবে সন্ত্রাসী আগ্রাসনকারীর ভূমিকায় নিক্ষেপ করা হয়েছিল। কিন্তু তার পদক্ষেপের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের কথা চিন্তা করা হয়নি।

এদিকে এটা স্মরণ করা সহায়ক যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে আঞ্চলিক যুদ্ধে নিজেকে ‘টেনে আনার’ একটি সুক্ষ্ম কাজ করেছে। এক্ষেত্রে ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের কথা স্মরণ করা যায়। সুতরাং গণহত্যার পটভূমিতে দেশটিকে আবার সামনে এবং কেন্দ্রে খুঁজে পেলে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। ইয়েমেনে বিয়ের অনুষ্ঠানে মার্কিন ড্রোন হামলা থেকে শুরু করে ২০০৬ সালে লেবাননে ধ্বংসযজ্ঞে সহায়তার জন্য ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর কাছে বোমার চালান পাঠানো উল্লেখযোগ্য। দৃশ্যপটে মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কখনো মধ্যপ্রাচ্যের এমন কোনো সংঘাতের মুখোমুখি হয়নি, যাতে তাদের দায় ছিল না।

যদিও বাইডেন প্রশাসন গাজায় যুদ্ধবিরতি চায় বলে দাবি করে আসলেও চলমান গণহত্যার ক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতির পথ তৈরির সময় গণহত্যাকারী ইসরাইলকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করেনি দেশটি। 

গত ১ অক্টোবর ব্রিফিংয়ে সুলিভান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, 'এই হামলার জন্য মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে এবং আমরা ইসরাইলের সঙ্গে কাজ করব। এর অর্থ হলো- যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে মিলে আঞ্চলিক বিপর্যয় বৃদ্ধি এবং আরো খারাপ ‘পরিণতি’ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য তার ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।

সুলিভান আরও জোর দেন যে এটি একটি ‘যুদ্ধের অনিশ্চিত’ পরিস্থিতি এবং তিনি তার প্রাথমিক মূল্যায়নকে ‘প্রয়োজনীয় হিসাবে সংশোধন ও সামঞ্জস্য করার’ অধিকার সংরক্ষণ করেছিলেন।

সর্বশেষ চলমান যুদ্ধের মধ্যে অন্তত একটি বিষয় পরিষ্কার যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে যুদ্ধবাজ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।


এম এ জিসান

মন্তব্য করুন