ছবি: ইন্টার নেট
টানা তিন বছরে তিন ফাইনাল হারের যন্ত্রণা কাটিয়ে চার বছরের মধ্যে তিনটি বড় ট্রফি জয়- দশ বছরের ব্যবধানে হৃদয়ের পুরনো ক্ষত পুরোপুরি ভোলার সুযোগ পেলেন আনহেল ডি মারিয়া। আর শিরোপা দিয়েই তিনি রাঙালেন শেষটা। তাই তো বিদায়ী ম্যাচ খেলে বললেন, এমন অবসরের স্বপ্নই দেখেছেন সবসময়। দেশের হয়ে শেষবারের মতো খেলতে নেমে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন আনহেল ডি মারিয়া। কোপা আমেরিকার ফাইনালে তার পারফরম্যান্স মুগ্ধ করেছে সবাইকে। দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে নিজের বিদায়ী ম্যাচটিতে জিতে নিয়েছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ডের এই বিদায়কে কোচ লিওনেল স্কালোনির মনে হচ্ছে যেন কোনো সিনেমার চিত্রনাট্য। স্কোলোনি “সে (দি মারিয়া) অসাধারণ অনেক ম্যাচই খেলেছে, কিন্তু আজকের ম্যাচটি ছিল তার সেরা ম্যাচগুলোর একটি। ভালো খেলার পাশাপাশি, যখন তার পা কাজ করছিল না ম্যাচের ওই সময়ও আক্রমণ করার মনোভাব ছিল তার এবং এমনভাবে সে দৌড়াতে শুরু করেছিল, যেন ২৫ বছরের যুবক। সে একজন কিংবদন্তি, তার মান বোঝানোর কোনো উপায় নেই।
যেভাবে শেষ হয়েছে, তার গল্প যেন সিনেমার চিত্রনাট্য।”
ম্যাচ শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ৩৬ বছর বয়সী ডি মারিয়া বলেন, “এটি ভাগ্যে লেখা ছিল। ঠিক এমনই, আমি স্বপ্ন দেখেছি। এভাবেই অবসর নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। আমার এখন অনেকগুলো সুন্দর অনুভূতি আছে। আমি এই প্রজন্মের কাছে চির কৃতজ্ঞ যারা এসব অর্জন সম্ভব করেছে, যেগুলো আমি খুব করে চেয়েছিলাম।”
২০১৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপের পর ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। প্রতিটিতেই হতাশা সঙ্গী ছিল ডি মারিয়ার। তার যন্ত্রণা একটু বেশিই ছিল কারণ চোটের জন্য তিনি খেলতে পারেননি ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে। কোপা আমেরিকার দুই ফাইনালেরই সেরা খেলোয়াড় তিনি। বিদায়ী মিডফিল্ডার ডি মারিয়া বলেন, “এমনভাবে শেষ করার চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে? ফাইনালে ওঠা এবং সেগুলো জেতা সহজ নয়। আমি জানি, কারণ মুদ্রার উল্টো পিঠের জীবনটাও আমি দেখেছি। এখন এটি হচ্ছে। কোনো এক পর্যায়ে এটি হওয়ারই ছিল।”
আগেই অবসরের ঘোষণা দেওয়া ডি মারিয়ার জন্য ফাইনাল ম্যাচটি জিততে চেয়েছিলেন মেসি। অ্যাঙ্কেলের চোট নিয়ে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মাঠ ছাড়ার পর তার ভূমিকাতেই খেলেন ডি মারিয়া। দীর্ঘ দিনের সতীর্থকে আরেকটি শিরোপা উপহার দিতে পারায় তার উচ্ছ্বাস যেন আরও বেশি। মারিয়া বলেন, “অ্যাঙ্কেলের সমস্যার কারণে মেসিকে চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা তাকে কিছু আনন্দ দিতে পেরেছি।”
ডি মারিয়ার বিদায় নিয়ে আবেগঘন কথা বলেন স্ত্রী জর্জেলিনা কারডোসো। আর্জেন্টাইন স্ট্রিমিং চ্যানেল ‘বন্ড-ই’-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কারডোসো বলেন, “আমি এটা নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না, কারণ বলতে গেলেই আমি ব্যথিত হয়ে পড়বো। আমি তাকে ছাড়া জাতীয় দল কল্পনা করতে পারি না। শুধু আনহেল বলে না সে বলেছে, সে এভাবে সামনে থেকেই বিদায় নিতে চায়। সে আমাকে বলেছে ‘না আমি এভাবেই মাথা উঁচু করে বিদায় নিতে চাই। আমি চাই না কেউ আমার থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।’ হয়তো এটা অনেক ভালো সিদ্ধান্ত এভাবে বিদায় নেওয়া।”
ডি মারিয়ার বিদায়ে মাশরাফির বার্তা
ডি মারিয়ার অবসর নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। মাশরাফি পোস্টে লিখেছেন, ‘অনেক অনেক দারুণ সব স্মৃতি ডি মারিয়া মাঠ ছেড়ে যাচ্ছে। শুধু তাই না, মেসির পিক টাইমেই ডি মারিয়া ছাড়া মেসিকে অনেক ম্যাচ নিষ্প্রাণ মনে হয়েছে। আনহেল ডি মারিয়া আপনাকে কুর্নিশ, একজন অন্ধ আর্জেন্টাইন ফুটবলের সমর্থক হিসাবে। আপনি অবশ্যই গুরু দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরি। আপনাকে ভোলা প্রায় অসম্ভব।’
স্পোর্টস ডেস্ক:
মন্তব্য করুন