ছবি- সংগৃহীত
দেশের সবচেয়ে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা ও জাতীয় প্রতিষ্ঠান পিএসসি। মেধা যাচাই করে মেধাবীদের প্রজাতন্ত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়াই তাদের কাজ। দেশ পরিচালনা ও সেবাখাতে যোগ্য লোক বাছাই ও যোগান দেয়া এ প্রতিষ্ঠানটির মৌলিক ও দায়িত্ব।
সম্প্রতি নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এটি। বিশেষ করে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি প্রতিবেদন দেশের বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ করেন। এর প্রিন্ট মিডিয়াতেও ছবিসহ কয়েকজনের নাম প্রকাশ করা হয়। ব্যাপারটি কেঁচো খুড়তে সাপ বেড়িয়ে আসার মতো।
গত কয়েকদিন যাবৎ পত্র-পত্রিকা চ্যানেল ও গণমানুষের মধ্যে এ বিষয়ে গুঞ্জন সরব হচ্ছে। সেখানে আবেদ আলীদের দৌড়াত্ব আর কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা পুরোটার প্রমাণ মিলছে। কিন্তু কেন এমন কাজ পিএসসির সাথে সংশ্লিষ্টরা করল? কিভাবে দেশের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি বিশেষ গ্রুপ এ কাজের সাথে দীর্ঘদিন জড়িত থেকে দেশের মেধা-বাছাইকে প্রশ্নবিদ্ধ করল? হঠাৎ অপ্রত্যাশিত এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা পিএসসির ভূমিকাকে দেশের সবার কাছে প্রশ্নের মুখোমুখি করল, যা সাধারণত অকল্পনীয়।
এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত, তাদেরকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে আটক করেছে। ফলে জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনেক দুঃসাহসী ভূমিকার তথ্য জানা গেছে। বেশিরভাগ জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী জিরো থেকে হিরো এবং আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন। দেশের মেধাবীদের ঠকানো, দূরে সরিয়ে দিয়ে অযোগ্যদের বাছাইয়ের তালিকায় আনা হয়েছে এবং কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এসব কর্মকর্তারা। একদিকে যোগ্য লোকের জায়গা হয়নি, অপরদিকে অযোগ্যদের দিয়ে দেশকে ধংসের রাস্তায় নামানো হয়েছে। তারপর তাদের দায়িত্ব কর্তব্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রশ্নফাঁস করে দেশের কাছে, জাতির কাছে সব হারাল তারা।
যখন সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে সব পর্যায়ে নিয়োগ দেয়ার দাবিতে চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা রাজপথে আন্দোলন করছেন, তখনই বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা জনগণের সামনে এসেছে। পিএসসির মতো একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নপত্র দিনের পর দিন ফাঁস হওয়ার যে তথ্য বের হয়েছে, তাতে দেশের সচেতন মানুষ স্তম্ভিত।
সিআইডির মাধ্যমে জানা গেছে রেলওয়ে নিয়োগপত্রের প্রশ্নপত্রটি দুই কোটি টাকার বিনিময়ে ফাঁস করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে হঠাৎ ধারনা পরিবর্তন হয়ে গেল। বেকারের দেশে এরকম মূল্যবোধহীন কাজ করে মেধার অবমূল্যায়ন আর কর্মকর্তা চক্রের দুঃসাহিক কাজের ব্যাপারে প্রশাসন কি বলবেন? পাবলিক সার্ভিস কমিশন তারা বলছেন, এমন সংবাদ সাজানো, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিষয়টি যদি এমন হয় তাহলে আবেদ আলীদের গাড়ি-বাড়ি, টাকার পাহাড় সকলের সামনে আসাটা কিসের প্রমাণ? তারপর স্বীকার করেছে একটা প্রশ্ন বিক্রি করেছে ২ কোটি টাকায়। এমন দুঃসাহসিক কাজ আজ নতুন নয়। আনেক আগ থেকে চক্রের এ কাজ অব্যাহত ছিল। সম্প্রতি প্রচারের পদ্ধতি ভিন্ন। দেশের উচ্চ মহল এ ব্যাপারে জড়িত বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশ করা হয়েছে। শুধু পিএসসি নয়, দেশের দুর্নীতি-জালিয়াতির ইতিহাস অনেক পুরোনো। এমন হাজারো অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
কিন্তু দেশে এহেন অপকর্মের বা গুরুতর অপরাধের যথাযথ বিচার হয় না। অপরাধীরা নানা ফাঁকফোকর দিয়ে পার পেয়ে যায়। এর ফলে দিনের পর দিন দেশ ধংসের কাজে এসব কর্মকর্তারা জড়িত থাকলেও মামলা পর্যন্ত হয়, যথাযথ বিচার হয় না। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তাদের সম্পদ হয়তো ক্রোক করা হয়, কিন্তু তাদের চূড়ান্ত পরিণতি আর দেখে না জাতি। অপরাধী চক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সকল অন্যায়কে জায়েজ করে নেয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। মাঝখানে দেশের যে ক্ষতি হঢয়, তা দেখার বা বিবেচনা করার কেউ থাকে না। সবই নোংরা রাজনীতির ক্যান্সারে নিঃশেষ হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসা দরকার। অপরাধীর বিচার হওয়া সময়ের অনিবার্য দাবি।
অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ
মন্তব্য করুন