ছবি: সংগৃহীত।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সরকারের ম্ভাব্য গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে তুলসী গ্যাবার্ডকে নির্বাচিত করার মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তায় কম্পন তৈরি করেছেন। এছাড়া এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি গোয়েন্দা সংস্থায় রাজনীতিকরণের পথ তৈরি করছেন। চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেলে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হওয়া প্রথম ‘হিন্দু নারী’। খবর রয়টার্স
ট্রাম্প যাকে গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেছেন, সেই গ্যাবার্ড ডেমেক্রেটিক দলের সাবেক কংগ্রেস নারী। গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করার জন্য তার সূদূরপ্রসারী কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এছাড়া তিনি রাশিয়া এবং সিরিয়ার ক্ষেত্রেও নমনীয়। এ অবস্থার মধ্যে ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে একাধিক দক্ষ লোক থাকা সত্ত্বেও অনুগতশীল লোকদের উচ্চ পদে বসাচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এবং বর্তমান গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ট্রাম্পের উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টারা তাকে বৈশ্বিক হুমকির বিষয়ে এমনভাবে বোঝাবেন যেন নিব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাদের প্রতি আশ্বস্ত হন।
সিআইয়ের সাবেক অপারেশনস ডিরেক্টর রান্ডাল ফিলিপস যিনি চীনে শীর্ষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের সরকারের শীর্ষ পদে অনুগত ব্যক্তিকে বসানো প্রশ্নের জন্ম দিবে।’
পশ্চিমা নিরাপত্তার একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প যখন জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন তখন ‘ফাইভ আই’ (যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড) দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে এ নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, ট্রাম্প তার প্রশাসনকে ভুলভাবে পরিচালিত করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা এ নিয়ে চিন্তিত। তবে বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি ট্রাম্পের ট্রান্সজিশন দল।
৪৩ বছর বয়সী গ্যাবার্ডকে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভিতর এবং বাইরে কাজ করা গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এ নিয়ে ব্যাপক উদ্বিগ্ন। কারণ নতুন গোয়েন্দা প্রধান রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক নমনীয়।
ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্কো রুবিওকে নিয়োগ এবং গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে গ্যাবার্ডের নাম ঘোষণা। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অফিসার এবং কিছু রিপাবলিকানরা বিস্মিত হয়েছেন।
তুলসী গ্যাবার্ড দুই দশকের বেশি সময় ধরে মার্কিন বাহিনীতে একজন সেনাসদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। কুয়েত ও ইরাক যুদ্ধের সময় দেশ দুটিতে তাকে মোতায়েন করা হয়েছিল। এ ছাড়া দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন কংগ্রেস সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তুলসী। ২০২০ সালের নিজ দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান। আর ২০২২ সালে দল ছাড়েন তিনি। তখন অভিযোগ করে তুলসী বলেছিলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টিতে ‘যুদ্ধবাজদের’ আধিপত্যে চলছে।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তুলসি। গত সেপ্টেম্বরে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিতর্কের প্রস্তুতি নিতেও ট্রাম্পকে সহায়তা করেছিলেন তিনি।
নামের কারণে তুলসী গ্যাবার্ডকে অনেকেই ভারতীয় বলে মনে করেন। তবে ভারতের সঙ্গে তার কিন্তু কোনো সম্পর্ক নেই। তুলসীর মা হিন্দু মতাদর্শে দীক্ষা নেন এবং তার সব সন্তানের হিন্দু নাম দেন। তুলসীও নিজেকে হিন্দু হিসেবে পরিচয় দেন। মার্কিন কংগ্রেসে তিনিই প্রথম হিন্দু সদস্য। আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সময় ভগবত গীতা হাতে শপথ নিয়েছিলেন তিনি।
তুলসি গ্যাবার্ড বিয়ে করেছেন আব্রাহাম উইলিয়ামস নামের একজন সিনেমাটোগ্রাফারকে। তার বাবার নাম মাইক গ্যাবার্ড। মেয়ের মতো বাবারও দলবদলের ইতিহাস রয়েছে। প্রথমে তিনি রিপাবলিকান পার্টি থেকে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ডেমোক্রেটিক পার্টিতে যোগ দেন।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মন্তব্য করুন