ছবি: ইন্টার নেট
গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করেছে।দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন ফ্যাসিবাদের মহারানী শেখ হাসিনা।তার পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনেই দেশের সর্বস্তরের মানুষ বেরিয়ে আসে রাজপথে।ঘাতক পুলিশেরা অস্ত্রপাতি ফেলে চলে যানন আত্মগোপনে।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে গণভবন,সংসদ ভবন,প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ঢুকে সুযোগসন্ধানীরা ব্রপক লুটপাট করেছে।বিক্ষুব্ধ জনতা সারাদেশে আওয়ামীলীগের মন্ত্রী-এমপিসহ নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা ,ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। এটা ছিল মানুষের ১৭ বছরের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। তবে তা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া সভ্য সমাজে মেনে নেয়া যায়না।
ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে,জাতি মুক্তি পেয়েছে পুতুল সরকারের দু:শাসন থেকে।এখন দেশ আমাদের । দেশের সম্পদ আমাদের সম্পদ।রাষ্ট্রীয় সম্পদ যেমন আমাদের তেমন ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদও আমাদের দেশের সম্পদ । এই সম্পদের ধ্বংস কারো কাম্য নয়।
সাধারণ মানুষের ক্ষোভের কারণ হলো বিগত সরকারের নেতা, মন্ত্রী, এমপিরা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠন করে এসব সম্পদ করেছে দেশে-বিদেশে। ব্যংকের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে।অন্তর্বর্তীকালিন সরকার বলেছে লুটপাটকারিদের সম্পদ যা দেশে আছে তা বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হবে।কিন্তু সেই সম্পদ পুড়িয়ে দিলে তো কোন লাভ হবেনা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় লুটপাটের সময় গাজী টায়ার কারখানায় দেওয়া আগুন ৫দিনেও পুরোপরি নেভেনি।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, কারখানাটির একটি ছয়তলা ভবনে এখনো আগুন জ্বলছে। আধুনিক সব সরঞ্জাম ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা চরণ। কারখানায় থাকা টায়ার প্রস্তুতকারক নানা দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নেভাতে সময় লাগে। আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর কারখানার ভেতরে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করা হবে।
এদিকে কারখানার আশপাশে গাজী টায়ারসহ বিভিন্ন স্থাপনায় দুর্বৃত্তদের লুটপাট করতে দেখা গেছে। প্রায় ৪৫ একর জমির ওপর স্থাপিত কারখানাটির সামনে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে কারখানার মূল অংশে লুটপাট হয় নাই। তবে সুবিশাল এই কারখানার চারপাশের বিভিন্ন অরক্ষিত অংশে লুটপাট হয়। তাঁরা কারখানা থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, স্টিল, প্লাস্টিক ও তামা লুট করে নিয়ে যায়।
গাজী টায়ারসহ গাজি গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বড় শিল্প পরিবার। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার কর অবৈধভাবে সম্পদ বাড়িয়েছেন অত্র প্রতিষ্ঠানের কর্নধার গোলাম দস্তগীর গাজি।
তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের মন্ত্রী এবং এমপি ছিলেন।এলাকার জনগণ ক্ষোভ থেকে তার প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে সত্য । তবে লুটপাট এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া রাষ্ট্রের জন্য বড় ক্ষতি। তার এসব সম্পদ বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় লুন্ঠনের কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যেত। তার ব্যত্যয় ঘটলো।
গত শুক্রবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে নরসিংদীর পলাশ উপজেলা প্রাণ-আরএফএলের কারখায় আগুন লাগে।
এরপর ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি এবং কারখানার নিজস্ব কয়েকটি দমকল ইউনিট মিলে রাত পৌনে আটটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও কারখানা কর্তৃপক্ষ।
পলাশ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন অফিসার সাদেকুল বারি জানান, আগুনের খবর পেয়ে পলাশ ফায়ার স্টেশনের দুইটি ইউনিট, মাধবদী ফায়ার স্টেশনের দুইটি ও নরসিংদী স্টেশনের তিনটিসহ মোট সাতটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুন নেভাতে কারখানা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক দলও কাজ করেছে।
তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা সম্ভব হয়নি। তদন্তের পর আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। আগুনে কারখানার ওই অংশের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
এভাবে শিল্প কারখানায় আগুন ভাল লক্ষণ নয়। ইতোপূর্বেকার তথ্যমতে আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশের ২৬ লাখ মানুষ আমাদের দেশে কাজ করছে।তারা বিবিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করছে। তারাই ইতোপূর্বে গার্মেন্ট কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্টানে আগুন দেয়ার সাথে জড়িত ছিল বলে গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে। ওই দেশটির পুতুল সরকার বিদায় নেয়ার পর তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে এই দেশটাকে ধ্বংস করার জন্য।সম্প্রতি ওপার থেকে হঠাৎ পানি ছেড়ে দিয়ে ফেনী,কুমিল্লা নোয়াখালি অঞ্চলে বয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করেছে ভারত।আমাদের শিল্প কারখানাগুলো তারা আগামীতে নাশকতা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। কাজেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দেশের আপামর মানুষকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে যাতে তারা নানা অসন্তোষের আড়ালে নাশকতা বা শিল্প করাখানা ধ্বংস করতে না পারে।
শহীদুল ইসলাম
মন্তব্য করুন