• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা রোজি কবিরের ইন্তিকাল * জাতি হিসেবে আমাদের সহনশীল হতে হবে: মির্জা ফখরুল * নাহিদ আসিফরা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই রাজপথে নেমেছিল: সারজিস * বিপিএলের পূর্ণাঙ্গ সূচি প্রকাশ * হাসিনার ট্রাভেল ডকুমেন্টে কী লিখেছে ভারত * তিনদিনের মধ্যে এনআইডি সার্ভারে নাগরিকের তথ্য আপলোডের নির্দেশ * পুলিশের ঊর্ধ্বতন ২৮ কর্মকর্তাকে বদলি * যে কারণে ফেসবুকজুড়ে ‘উই আর নাহিদ’ হ্যাশট্যাগ * সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম আবারও ৫ দিনের রিমান্ডে * আদানির সঙ্গে সব বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

ক্যাম্পাস রাজনীতিতে কেন আলোচিত ছাত্রশিবির

news-details

এনএনবিডি


বাংলাদেশের সফল সকল আন্দোলনের নেতৃত্বে কিংবা অগ্রভাগে ছাত্র সমাজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৮৭ সালের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, সবশেষ ২০২৪ সালের স্বৈরাচার হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিল শিক্ষার্থীরা। গণ আন্দোলন সফল হওয়ার জন্য দলমত, বর্ণ-ধর্ম, সংস্কৃতি, বোধ বিশ্বাস সব কিছুকে একটি অভিন্ন দাবিতে ঐকমত্য হওয়ার আবশ্যকতা থাকে। আর এসব আন্দোলনে এমটিই ঘটেছে। 

বাংলাদেশের গণ আন্দোলনের সবকটিতে বঞ্চনা থেকে মুক্তি ও অধিকার আদায়ের বিষয়টি সামনে এসেছে। নাগরিক অধিকার আদায় কিংবা নিপীড়ন থেকে মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করতে আন্দোলনগুলোতে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন তারা। আর সকল আন্দোলনের ভিত্তিভূমি ছিল দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজ ক্যাম্পাসগুলো। 

ইতিহাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের তৎকালনী জিএস গোলাম আযম (জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এর আগে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে ১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে ডাকসু'র পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে  আন্দোন চালানো হয়েছিল। আবার ১৯৯০ সালে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠন করে এরশাদের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক মতাদর্শগত কারণে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বিভক্ত থেকেছে বা রাখা হয়েছে। 

২০০১ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারে বিরোধী ১০টি ছাত্র সংগঠন নিয়ে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছিল। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল,ইসলামী ছাত্রশিবির, জাতীয় ছাত্র সমাজ, ইসলামী ছাত্র মজলিস, ইসলামী ছাত্র মোর্চা, জাগপা ছাত্রলীগ, পি এন পি ছাত্রদল,বাংলাদেশে ছাত্র শক্তি,মুসলিম ছাত্রলীগ, ইসলামী ছাত্র সমাজ ও গণতান্ত্রিক ছাত্রলীগ ছিলো অন্যতম। সর্ব দলীয় এই ছাত্র ঐক্যতে আদর্শগত কারণে অনেক ছাত্র সংগঠন অংশ নেয়নি। যেমনটি ৬৯ সাল ও ৯০ সালের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে সব ছাত্র সংগঠন অংশ নেয়নি।

বৈশিষ্ট্যগত দিকগুলোর মধ্যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখা গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে গড়ে ওঠা আন্দোলন সফল গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। তবে রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা ছাত্র সংগঠনগুলো এই আন্দোলনে পরোক্ষ সমর্থন দেয়। আন্দোলনে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে সমন্বয়কদের মধ্যেও সংগঠনটির অংশগ্রহণ ছিল। যা ক্যাম্পাস রাজনীতিতে ছাত্রশিবিরের ইতিবাচক দিককে চিহ্নিত করে। 

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক দিকগুলো হলো পেশি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করা। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হলে সিট বাণিজ্য, গেস্টরুম কালচারসহ নানা অবৈধ কার্যক্রম চালিয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া ছাত্রলীগ। এই সময়ে ছাত্র সংগঠনটি ক্যাম্পাস রাজনীতির যত নেতিবাচক দিক রয়েছে- তার সবগুলোকে তাদের দলীয় আচরণ হিসেবে গ্রহণ করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে দেখা গেছে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজি করেছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। এতে জড়িত ছিলেন তৎকালীন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শীর্ষ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসগুলোতে গোপনে কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশে সাংগঠনিক কার্যক্রম ছাত্রশিবিরের জন্য একটি মাইলফলক। আদর্শগত কারণে বাম মতাদর্শের ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রশিবিরকে কোনঠাসা করে রাখতে চায়। তবে ছাত্রশিবির যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে তা সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য। যা নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ প্রশ্ন তোলেনি। তবে ছাত্র রাজনীতি কিংবা ক্যাম্পাস রাজনীতির ইতিহাস বা ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে সংগঠনটির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি, মাদকাসক্তি বা বাণিজ্য, ইভটিজিং করার মতো কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের নজির পাওয়া যায়নি। বরং উল্টো তাদের বিরুদ্ধে বদনাম ও ট্যাগ দিয়েছে অন্য মতাদর্শের কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা। যা সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতি ও ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নীতির পরিপন্থী। 

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে আসার পর ৪১ সংস্কার প্রস্তাব দেওয়ার খবর প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি হারুনুর রশিদ ওরফে রাফি, সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান ওরফে মুহিব এক বিবৃতিতে বলেন, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে (চেতনা) ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে সুস্থ ধারার রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে ছাত্রশিবির সর্বদা প্রস্তুত। আবাসিক হলগুলোতে কোনো ধরনের দখলদারি, চাঁদাবাজি, মাদকের বিস্তার রোধে ছাত্রশিবির অঙ্গীকারবদ্ধ।

বিবৃতিতে  তারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ আনা, গবেষণামুখী শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবায়ন, সুস্থ ধারার সংস্কৃতির বিকাশ ও নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে ছাত্রশিবির কাজ করে যাবে। ছাত্রশিবির চায় ছাত্র সংসদকেন্দ্রিক সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে আসুক।

ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ছাত্রশিবিরকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিষিদ্ধের একটি বয়ান তৈরি করে এসেছে। আদতে এই বয়ানের কোনো সত্যতা নেই। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৪২তম সভায় শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা এলেও এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। বরং সভার সিদ্ধান্ত ছিল ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়’।

২৪’র জুলাই বিপ্লবের পর ছাত্রলীগ যেমন নিষিদ্ধ হয়েছে তেমনি ছাত্র রাজনীতিতে একটি গঠনমূলক সংস্কার আসবে বলে প্রত্যাশা করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে অনেক ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে তা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিতে প্রভাব ফেলবে বলে দাবি করছেন অনেকে। মূলত ছাত্রলীগের রাজনীতির খারাপ সংস্কৃতি থেকে এই চিন্তার উদ্রেগ হয়েছে। তবে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে। সবাই চায় সুস্থধারার ও গঠনমূলক রাজনীতি চর্চা সুযোগ অবারিত থাকুক।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্রশিবির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে দেশে সুস্থধারার চর্চাকে প্রমোট করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষক মহল। দেশের মানুষের মাঝে নতুন করে ভাবনার সূচনা করেছে এবারের গণআন্দোলন। যেখানে অগ্রভাগে থাকে দেশের তরুণ ছাত্ররা। সুস্থধারার রাজনীতি ক্যাম্পাসগুলোতে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় এমন সকল মতের সংগঠনগুলো যাতে স্বাধীনভাবে ও গণতান্ত্রিক উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, তা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করাও সময়ের দাবি।


আব্দুল্লাহ জিহাদী

মন্তব্য করুন