• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৩৯ * সরকার কি চাইলে এখন রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিতে পারে? * রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনের রাস্তা অবরোধ * পদত্যাগ করতে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম * ১০১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিন শেষ করল বাংলাদেশ * জামায়াত আমিরের সাথে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কের সাক্ষাৎ * পুলিশের ২৫২ এসআইকে অব্যাহতিতে রাজনৈতিক কারণ নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * মাহফুজ আনামের কাছে প্রশ্ন: হাসিনা-মুজিবের দুঃশাসনের পার্থক্য কোথায়? * ইরানকে গোপন তথ্য দেয়ায় ৭ ইসরাইলি আটক * নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই শীর্ষ নেতার নাম ঘোষণা করছে না হামাস

করপোরেট দানবদের রুখতে হবে

news-details

প্রতিকী ছবি


আমি  দুনিয়ার  অন্যতম  ধনী দেশ কানাডা আছি। গেল পচিশ বছর ধরে  টরন্টো মহানগরীতে বসবাস  করছি । যে শহর  দিবানিশি 24 ঘন্টা খোলা থাকে । কানাডার  আরেক পরিচয় এটি জি-সেভেন মানে উন্নত  সাত তারকার  একটি  বিশেষ  তারকা রাষ্ট্র ।

সংসদীয় রাষ্ট্র ব্যাবস্থা। যার বিভিন্ন ধাপের সরকার পরিচালনা পরিষদ রয়েছে। ফেডারেল, প্রাদেশিক, নগর এবং রুরাল কাউন্টি।

দুনিয়ার  অভিবাসী  দেশ গুলোর মধ্যে  কানাডা  শীর্ষে  আছে। টরন্টো  মহানগরীর  শতকরা  78% শতাংশ  মানুষ  অভিবাসী । মানে অন্য দেশ থেকে  নানান  উপায়ে  এখানে চলে এসেছে । 

আমার  আজকের  লেখার  শিরোনাম   করপোরেট  দানবদের রুখতে  হবে । কারণ এই করপোরেট দানবদের  পরিচালক যারা তারাই আজ সারা দুনিয়ার  বিভিন্ন বাণিজ্যিক  সুবিধাভোগী। সেই সাথে  ঐসব তথাকথিত  অতি চতুর পরিচালকগণ নানান  ফন্দি -ফিকির  করে দেশে দেশে অস্ত্র বাণিজ্য, ঔষধ  বাণিজ্য,  ভোগ বিলাসী  বাণিজ্য , ইলেকট্রনিক  মিডিয়া, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদনের বাণিজ্যিক  সিনেমা,  খেলা ধূলা এবং নিরাপদ  খাবারের  নামে  কেমিস্ট্রি  শিল্প দিয়ে  অনিরাপদ খাবার তৈরী  ও বাজার জাত করণ ইত্যাদি  সকল সূচকেই ওরা বলিয়ান হয়ে  উঠেছে । শুধু  তাই নয় কোন দেশের শাসক বা সরকার যদি ঐসব করপোরেট দানব পরিচালকদের স্বার্থের বিরুদ্ধে  গিয়ে কোন জনকল্যাণ মুলক কাজ করতে  শুরু  করে; তাহলে আর রক্ষা নেই । ঐ শাসক বা সরকারেকে করপোরেট দানব বাহিনী  নানান  কায়দা কানুন করে মসনদ থেকে উপড়িয়ে ফেলে। এমনকি  হত্যাকাণ্ড  ঘটাতেও পিছপা হয় না। আমেরিকার  অতি জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি  জন এফ কেনেডীকে নাকি ঐ একই  কারণে  খুন করা হয়েছিল । কারণ তিনি ঐ সময়ে  শান্তি  প্রতিষ্ঠার জন্য  সোভিয়েত ইউনিয়নের  সাথে  এমন কিছু  কাজ করার উদ্যোগ  নিয়েছিলেন যার কারণে  তাকে করপোরেট দানব বাহিনীর  ভাড়াটে বাহিনী  খুন করে । 

আরেক  জনপ্রিয় আমেরিকান  রাষ্ট্রপতি ছিলেন  বিল ক্লিনটন । তিনি অসলো চুক্তির  মাধ্যমে  ফিলিস্তিন  এবং ইসরাইলের মধ্যে  দুই রাষ্ট্র  কায়েমে অনেক দূর এগিয়ে ছিলেন । কিন্তু  তাকে  থামিয়ে  দেয়ার জন্য  মনিকা  লিউনিস্কর কেলেঙ্কারি  ঐ করপোরেট দানবের  মিডিয়া   জগতের সামনে নিয়ে  আসে । আবার অন্যদিকে  কট্টর  জায়নবাদী গং ইসরায়েলর শান্তিবাদী নেতা আইজাক রবিনকে দিনে-দুপুরে  সবার সামনে  খুন করে ফেলে।  এই ক্ষেত্রে  ইসরায়েলী গোয়েন্দা সংস্থা  মোসাদের ভূমিকা  এখন  প্রশ্ন সাপেক্ষ?  

আজ দেশে দেশে চলেছে অর্থনৈতিক  অরাজকতা, লুট-পাট, দিনের পর দিন  টাকার অবমাননা , কাগজী নোট ছাপিয়ে  শাসক দল  টাকার যোগান দিচ্ছে,  আবার ওরাই  নিজেদের  আখের  গোছানোর নামে বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে । আজ মানুষের  আদি  পেশা কৃষক  সমাজের  হাতে ওদের দশ হাজার বছর ধরে  জমা রাখা ধান বীজের  বীজাধার নেই। তথাকথিত  গবেষণার নাম করে তথাকথিত  ঐসব করপোরেট  দানব আমাদের  বীজের স্বত্ব  নিয়ে গেছে। আমাদের  হাজার বছরের  সরিষা বা আর অন্য সব মৌলিক  খাদ্যের বীজাধার  আর কৃষকের  হাতে নেই । নিয়ে  গেছে ঐসব করপোরেট  দানবগং। আমাদের  বাংলাদেশসহ বিশ্বের  বিভিন্ন দেশে যে সব হাতে তৈরি কুটির শিল্পের  খাদ্য ছিল  তাও আর গাও গেরামের ছোট ছোট  কারিগরদের হাতে নেই। চলে গেছে করপোরেট  দানব নবীন  মিল কারখানার  মালিকদের কাছে । আমার  দেখা  সত্তর দশকে  এমনকি  আশির দশকের  মাঝামাঝি পর্যন্ত  বাংলাদেশের  গাও গেরামে চৈত্র  সংক্রান্তি  উপলক্ষে  যে সব মেলা বসতো , ঐ সব মেলার আয়োজন  ছিল গেরাম বাংলার কুটির শিল্পের  নানা ধরনের হাতের তৈরী জিনিস পত্র । খৈ, মুড়ির মোয়া, বাতাসা, চিনির কদমী,  চিনির গছা, মজার রস গোল্লা সহ আরো কত পদ পদবী খাবার, হাতে বোনা ঝালি গেন্জি ও পাওয়া যেত । 

আজ আমরা  করপোরেট  দানবের  তথাকথিত  গার্মেন্টস শিল্পের সাথে পাল্লা দিয়ে  না পেরে হারিয়ে  ফেলেছি;  আমাদের গাও গেরামের ঐসব ছোট ছোট  কুটির  শিল্পের বৈচিত্র্যময় বাণিজ্য ।এখন গার্মেন্টস মালিকদের  বাচিয়ে রাখতে  হাজার  হাজার  কোটি  টাকা বরাদ্দ  দেয়া হচ্ছে নানান  কর্মসূচির নামে। কিন্তু  গেরাম বাংলার অবলা -সবলা জরিমণ আর করিমণদের কুটির  শিল্পের  বিকাশ  জারী অব্যাহত রাখতে ওদের জন্য  মাত্র  হাজার  টাকাও বরাদ্দ করে না, সরকার বাহাদুর  অথবা দরদী ? ব্যাংক মালিক পক্ষের  করপোরেট  মহাজন।  এখন চলেছে  তথাকথিত  উন্নত  অর্থনৈতিক ক্লাব । যেমন জি-সেভেন । সেখানে  থেকে জি-টুয়েন্টি। এই ভাবে  ক্লাব  আর সমিতির  নামে করপোরেট  দানব বাহিনী  আমেরিকা সহ বিভিন্ন  দেশের  রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে  হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছে । কংগ্রেস  বা সংসদ নির্বাচনে ঐ করপোরেট  দানব পরিচালকগণ অর্থ লগ্নি  মানে নির্বাচনে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে ।বিনিময়ে ওদের পক্ষে  কাজ করতে বিভিন্ন  দেশের  রাষ্ট্রপতি বা সরকার  প্রধান  বা কংগ্রেস বা সংসদকে ব্যবহার করছে; নিজেদের ভাগ্যে আরো বেশি রাষ্টীয় সুবিধা লাভবান হতে।  

উত্তর  আমেরিকার  বিভিন্ন  পালের গোদা করপোরেট সংস্থা বিভিন্ন  গবেষণার  জন্য  এই সব দেশের নামকরা  ইউনিভার্সিটিগুলোতে মিলিয়ন মিলিয়ন  ডলার  ডোনেশন করে  যাচ্ছে। মেধাবী  অধ্যাপকগণ আর তাদের মেধাবী  ছাত্র ছাত্রীরা  এখন একদিকে অসুস্থ  মানুষের  চিকিৎসার জন্য  গবেষণা  করে  ঔষধ  আবিষ্কার  করে যাচ্ছে । আবার একই ইউনিভার্সিটির মেধাবী  অধ্যাপক  তার অধীনস্থ  মেধাবী  ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে  গবেষণা  করে  সুস্থ  মানুষকে খুন  করার জন্য, বিভিন্ন  দেশের  খনিজ  সম্পদ  লুট-পাটের জন্য   বিভিন্ন  বোমা সহ  আধুনিক   অস্ত্র  আবিষ্কার  করে  যাচ্ছে । দেশে দেশে সুস্থ  মানুষকে খুন  করে যাচ্ছে  এক বা এক ডজন নয় হাজার  হাজার ,লাখ লাখ  মানুষ  তারা খুন করে  যাচ্ছে   ইরাক, সিরিয়া,আফগানিস্তান, কুরদিস্তান, ইয়েমেন,সুদান, সোমালিয়া,  মালি সহ সাহারা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে । ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, আরাকান আর ফিলিপাইনের মিন্দানাওয়ে এখন  খুন হচ্ছে  বনি আদম। খুনের  রক্ত এখন  ঝরে  যাচ্ছে  ইউক্রেনে ,চীনের  দখলে  থাকা কাশগড়ে। 

বিভিন্ন  প্রযুক্তির  উন্নতির  সাথে সাথে  আমাদের  নব প্রজন্মের  ছেলে মেয়েরা  আজ নানান ডিভাইস  আসক্তিতে এমনভাবে  ডুবে গেছে যে ,তারা  আর এখন ওদের দৈনন্দিন  লেখা পড়া, খাওয়া দাওয়া  আর খেলা ধুলার প্রতি আগ্রহ  হারিয়ে ফেলেছে । পরিস্থিতির  এতই ভয়বহতা যে কানাডার  দুটো  প্রদেশের হাইস্কুলে এখন থেকে আর ছাত্র ছাত্রীরা  তাদের মোবাইল ফোন সহ অপরাপর ডিভাইস  ব্যবহার করতে  পারবে না । এইজন্য  প্রাদেশিক  সরকারের  পার্লামেন্ট আইনও পাশ করেছে।

 আমার আজকের  লেখার  শিরোনাম  করপোরেট দানব । এরা আজ দুনিয়ার  দেশে  তাদের বাণিজ্যিক  বহুবিধ  পথ ও পাথেয় চালু করেছে।।কোথাও  তারা হাসপাতাল বানিয়ে  রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা চালু করেছে । আবার কোথাও  খনিজ  সম্পদ  আহরণের নামে ঐসব দেশের  অজানা গোপন  দামী সম্পদ লুট করে যাচ্ছে । করপোরট মহাজনরা মাদক দ্রব্যের  বাণিজ্যিক  নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন  মিডিয়া  টিভি চ্যানেলে  ওদের বস্তাপচা  পণ্যের  বিজ্ঞাপন দিচ্ছে ।এইজন্য  তারা বিভিন্ন  দেশের  উঠতি বহুল জনপ্রিয় তারকাদের  মোটা অঙ্কের  ডলার  দিয়ে  মডেল হিসেবে  ব্যবহার করে যাচ্ছে । 

মানুষের  অনেক মৌলিক  অধিকার  এবং চাহিদা  দেশে দেশে করপোরেট  মহাজনরা বিভিন্ন বাণিজ্যিক  ফন্দি করে ওদের হাতে  নিয়ে গেছে । এমতাবস্থায় মানুষ  হিসেবে  আমাদের  আশু করনীয় কি কি? আমরা কি করপোরেট দানবদের দুনিয়াব্যাপী নেটওয়ার্ক এর বিরুদ্ধে  রুখে  দাঁড়াতে  পারবো । এই জায়গাটাতে সাধারণ  মানুষ  হিসেবে আমরা  অসহায়। তবে আমরা অবশ্যই  একটা  কাজ করতে পারি সকল প্রকার  আমাদের  কেনা  পণ্য  আমরা  আমাদের  পছন্দের  তালিকা  থেকে নেব। আমরা নিজেদের  খাদ্যের নিরাপত্তা  ব্যবস্থা  নিজেদের  হাতে  নেব। ফরমালিনযুক্ত  সবজি  মাছ না কিনে বিকল্প পথে  আমাদের  চারপাশের  পরিবেশ থেকে আমাদের মৌলিক  খাবার সহ বিভিন্ন পণ্য  খরিদ  করবো।।বা যোগাড় করবো। আমাদের  দৈনন্দিন  জীবনের  পোশাক থেকে শুরু করে জুতা, তৈল সাবান সহ বিভিন্ন নিত্য দিনের  পণ্য  নিজেরাই  যোগানোর চেষ্টা করবো। সর্বোচ্চ   শক্তি  দিয়ে  এখন থেকে কাগুজে  টাকা  না জমিয়ে সোনা রুপার  মজুত বাড়াবো। কারণ আগামীতে খুব কাছাকাছি  সময়ে  বিশ্বের  ধনী গরীব দেশের  সাধারণ  মানুষ  এমন একটা  মহা সংকটে  পড়তে যাচ্ছে; তখন কাগজী মুদ্রার মান আরো কমে যাবে। সেই তা ডলার বা দিনার ইউরো যা -ই হোক না কেন? #

 


ফজল মুহাম্মদ- টরন্টো থেকে

মন্তব্য করুন