ছবি-সংগৃহীত
প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাকে লক্ষ্য করে চালানো গুলি তার কান ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়। এতে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন ট্রাম্প। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী সমাবেশে এ ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ প্রেসিডেন্ট আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। তার ওপর এ হামলা নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি এ হামলা মার্কিন নির্বাচনী হিসাব বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর বিবিসির।
বিবিসির নর্থ আমেরিকা এডিটর সারাহ স্মিথ বলছেন, হামলায় ট্রাম্পের আহত হওয়া এবং রক্তাক্ত অবস্থায় মুষ্টিবদ্ধ হাত উপরে তুলে হার না মানার ইঙ্গিত দেওয়া এবং সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টদের মাধ্যমে মঞ্চ থেকে তাড়াহুড়ো করে চলে যাওয়ার এসব ছবি কেবল ইতিহাস তৈরিই নয়– এসব ছবি আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গতিপথও পরিবর্তন করতে পারে।
ট্রাম্পের ওপর হামলা এবং রক্তাক্ত হওয়ার এসব ছবি বেশ দ্রুতই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। এমনকি সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের ছেলে এরিক ট্রাম্পও এসব ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘আমেরিকার এ ধরনের যোদ্ধাই প্রয়োজন।’
হামলার পরপরই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টিভিতে হাজির হন এবং সেখানে তিনি বলেন, আমেরিকায় এই ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। তিনি তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তিনি আজ রাতেই তার সঙ্গে কথা বলবেন।
এ ছাড়া বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারাভিযানও তাদের সমস্ত রাজনৈতিক বিবৃতি স্থগিত করেছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের এ সম্পর্কিত টেলিভিশন বিজ্ঞাপনগুলোও সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছে। বাইডেনের প্রচারণা দল স্পষ্টভাবেই বিশ্বাস করে, এই সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করা অনুচিত হবে এবং এর পরিবর্তে পেনসিলভানিয়ায় যা ঘটেছে তার নিন্দায় মনোনিবেশ করা উচিত তাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্পেকট্রামজুড়ে সব রাজনীতিবিদই এই এক জায়গায় একত্রিত হয়ে বলছেন, গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। যদিও এসব রাজনীতিবিদ কোনো বিষয়ে একমত হয়েছেন এমনটা খুব কমই দেখা গেছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন এবং জিমি কার্টার সবাই এ সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, হামলায় ট্রাম্প গুরুতরভাবে আহত হননি, এতেই তারা বড় স্বস্তি পেয়েছেন।
তবে ট্রাম্পের কিছু ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং সমর্থক ইতোমধ্যেই এ সহিংসতার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দোষারোপ করছেন। এর মধ্যে একজন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে, (ট্রাম্পকে) ‘হত্যার প্ররোচনা দেওয়ার’ জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অভিযুক্ত করেছেন।
সিনেটর জেডি ভ্যান্স – যিনি ট্রাম্পের ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন বলে মনে করা হয় – বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় বাইডেনের রাখা বিভিন্ন বক্তব্য সরাসরি এ ঘটনা ঘটার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
অন্যান্য রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরাও অনুরূপ কথা বলছেন। যা আমেরিকার রাজনীতির এ বিপজ্জনক সময়ে তাদের সুবিধা দেবে বলেই মনে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনা একটি কুৎসিত লড়াইয়ে পরিণত হতে পারে। আর এটি আগামী নভেম্বরের ভোটের আগে নির্বাচনী প্রচারণাকে নতুন রুপ দেবে।
টেসলার কোটিপতি মালিক ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন। এই প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে তিনি রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন জানালেন। ইলন মাস্ক তাঁর সমর্থন জানিয়ে ট্রাম্পকে ‘শক্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্তমাখা মুখের একটি ভিডিও শেয়ার করে ইলন মাস্ক তাঁর সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন। গতকাল শনিবার পেনসিলভানিয়া রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানো হলে গুলি তাঁর কানে লাগে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রক্তাক্ত ট্রাম্প তাঁর মুষ্টিবদ্ধ হাত শূন্যে ছুড়ছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট অবশ্য নিরাপদে আছেন।
ইলন মাস্কের এই সমর্থন তাঁকে রাজনীতির ডান অংশে নিয়ে গেছে। অন্যদিকে ট্রাম্প একজন আলোচিত ব্যক্তির সমর্থন পেলেন। আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে পোস্ট করা একটি বার্তায় পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী মাস্ক বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি এবং তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
পরে আরেকটি পোস্টে ইলন মাস্ক লেখেন, ‘শহীদ বেঁচে আছেন’। তিনি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি বিতর্কের কথা উল্লেখ করে এটি লেখেন। রক্ষণশীল ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট পিটার থিয়েল এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির অর্থদাতা ও লিঙ্কডইনের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যানের মধ্যে ওই বিতর্ক হয় বলে সংবাদে বলা হয়।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মন্তব্য করুন