ছবি: সংগৃহীত
বৃটিশ সাধারণ নির্বাচনে এবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার নারী। এর আগেও তারা বৃটেনের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে বেশ কয়েকবার নির্বাচিত হয়েছেন। এবার যেসব বাংলাদেশি নারী বৃটেনের নির্বাচনে চমক দেখিয়েছেন তারা হলেন- রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক এবং আপসানা বেগম। ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোট ৩৪ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের মধ্যে ওই চার জনই জয়ী হয়েছেন। লেবার পার্টি থেকে আটজন, কনজারভেটিভ পার্টি থেকে দু’জনসহ অন্যান্য দলের মনোনয়ন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ওই ৩৪ জন প্রার্থী হয়েছিলেন। এবার ওই চার নারীর পরিচয় জেনে নেয়া যাক।
টিউলিপ সিদ্দিক
বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক এবারের নির্বাচনে দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস পেয়েছেন ৮ হাজার ৪৬২ ভোট। ২০১৫ সালে টিউলিপ সিদ্দিক প্রথম যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। কনজারভেটিভ পার্টির একসময়ের নিরাপদ এই আসন লেবার পার্টিকে উপহার দিয়ে তিনি এখন আসনটিকে লেবার পার্টির নিরাপদ আসনে রূপান্তর করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ছায়া শিক্ষামন্ত্রী, সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের ভাইস চেয়ার, নারী ও সমতা নির্বাচন কমিটির সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন।
রুশনারা আলী
প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ হিসেবে রুশনারা আলী প্রথম ২০১০ সালে টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনালগ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। ওই আসন থেকে তিনি টানা চারবার পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তিনি বেথনালগ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে ১৫ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। গতবারের তুলনায় এবার রুশনারা আলীর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা কিছুটা কমলেও লেবার পার্টির এই আসন ধরে রেখেছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুর। এবার আজমলের সঙ্গে তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। আজমল ১৪ হাজার ২০৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন।
রুপা হক
এ নিয়ে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন রুপা হক। তিনি ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে তার প্রাপ্ত ভোট ২২ হাজার ৩৪০। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী জেমস উইন্ডসর ক্লাইভ পেয়েছেন ৮ হাজার ৩৪৫ ভোট। ২০১৫ সালে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন রুপা হক। এরপর টানা তিনবার তিনি পশ্চিম লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান রুপা হক। তাকে সর্বদলীয় সংসদীয় মিউজিক গ্রুপের ভাইস চেয়ার এবং ক্রসরেলের সর্বদলীয় সংসদীয় পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
আপসানা বেগম
লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে দ্বিতীয়বারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আপসানা বেগম। তিনি পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫৩৫ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী গ্রিন পার্টির নাথালি বেইনফিট পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৭৫ ভোট। আপসানার এই আসন নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বেশি আলোচনা ছিল তার সাবেক স্বামীর কারণে। তবে আপসানার সাবেক স্বামী এহতেশামুল হক তার ধারেকাছেও আসতে পারেননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী এহতেশামুল ৪ হাজার ৫৫৪ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। ২০১৯ সালে আপসানা লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টে তিনিই প্রথম হিজাব পরিহিত সংসদ সদস্য। ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সোচ্চার ভূমিকা পালন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি।
এনএনবিডি ডেস্ক:
মন্তব্য করুন