• , |
  • ঢাকা, বাংলাদেশ ।
সর্বশেষ নিউজ
* রাজধানীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ২ * লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪ * ইউনূসকে নিয়ে অযথাই শঙ্কায় নয়াদিল্লি * ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত মানবে না ছাত্রদল * জাবিতে শামীমকে পিটিয়ে হত্যায় ছাত্রলীগ নেতা হাবিব গ্রেফতার * তোফাজ্জল হত্যার দায় স্বীকার করে ৬ ঢাবি শিক্ষার্থীর জবানবন্দি * যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জামায়াতকে প্রস্তুত থাকতে হবে : বুলবুল * ফ্যাসিবাদের দোসর অনেক সচিব নাশকতার চেষ্টা করছেন: রিজভী * তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার অনুরোধ সেনাবাহিনীর * চেন্নাই টেষ্টে দ্বিতীয় দিনে ১৭ উইকেটের পতন, ব্যাকফুটে বাংলাদেশ

শোনো মহাজন, আমরা অনেকজন

news-details

ছবি-সংগৃহীত


ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়। হ্যাঁ মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়া যায়। তবে তা সাময়িক সময়ের জন্য। এই কেড়ে নেওয়াই যে শত কোটি প্রতিবাদের জন্ম দেয়, হয়তো কোনো ফ্যাসিস্ট উপলদ্ধি করতে পারে না। নতুন নতুন সব শিল্পকর্ম নির্ভর প্রতিবাদের বিকাশ ঘটানোর প্রেক্ষপট তৈরি করে। পৃথিবীর সকল ফ্যাসিস্ট শাসকরা বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে মসনদ ধরে রেখেছেন। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি গত ১৫ বছরে। ৩৬ জুলাই বিপ্লবের পর নতুনভাবে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। 

প্রতীকী ৩৬ জুলাই মূলত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের দিন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনটি গণঅভ্যুত্থান ঘটায়। স্বৈরাচারের শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করে। বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় নানা আবেদন রাষ্ট্র সংস্কার নামে নানা আবেদন উঠে আসছে। এই আবেদন শুধু মুখে কিংবা লেখনীতে নয়। রাজধানীসহ সারা দেশের দেয়ালগুলো জুলাই-আগস্ট বিপ্লববে ফুটিয়ে তুলছে। তুলির আঁচরে তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। মানুষের প্রত্যাশাগুলোর প্রকাশ ঘটছে। এক ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের আহ্বান জানাচ্ছে। বৈষম্যমুক্ত এক ঐশী ধারার সমাজ কায়েম করার আকুতি উঠে আসছে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনকারী স্বপ্নবিভোর প্রজন্ম হুঙ্কার দিচ্ছে। 

গ্রাফিতিতে এক অন্যরকম বাংলাদেশের স্বপ্ন ফুটে উঠছে। যা স্বাধীনতার মূল চেতনাকেই ধারণ করে। সাম্য, সামাজিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন ও মানবিক মর্যাদাকেই সমুন্নত করার এক অদম্য প্রয়াস দেখাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। আর এই অর্জনের পথে শহীদ হয়েছেন হাজারের বেশি তরুণ-কিশোর ও সাধারণ নাগরিক। চিত্রকর্মে বীর আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ সহ অসংখ্য শহীদের হত্যাকাণ্ডকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। 

গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের অন্তর্বর্তীকালীন শাসনভার গ্রহণকারী ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক একটি ফোরামের বৈঠকে বলেন, দেশের ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী তরুণ শিক্ষার্থী এবং শিশুরা ৪০০ বছরের পুরনো এই শহরের দেয়ালে 'নতুন গণতান্ত্রিক' পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশের চিত্র দিয়ে রাঙিয়ে তুলছে। এ জন্য কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বা দিকনির্দেশনা নেই। ‘কারও কাছ থেকে বাজেট সাপোর্ট(অর্থ সহায়তা) পায়নি তারা। এটা দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্যের প্রতি তাদের আবেগ ও অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।’ 

তিনি বলেন, তারা তাদের জন্য রঙ এবং ব্রাশ কেনার জন্য দোকানে যান। তারা তাদের নিজস্ব বিষয় এবং নিজস্ব বার্তা তৈরি করে। ‘তারা যে বার্তাগুলো আঁকছে তা যে কাউকে শিহরিত করবে। তরুণরা কী স্বপ্ন দেখছে, তা যে কেউ তাদের মধ্যে পড়তে পারে। তাদের স্বপ্নকে সত্যি করাই আমাদের কাজ।’

তবে আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ বিনির্মাণে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে বিপ্লবীদের। স্বপ্নের কথামালাও তুলেছেন ফুটিয়ে। যেমনটি একটি গ্রাফিতিতে ফুটিয়ে তুলে শিল্পীরা লিখেছেন-‘৫২ দেখিনি, ৭১ দেখিনি, দেখেছি ২৪।’ত্যাগের বার্তাটি বেশ অর্থবহ।  আরেকটি গ্রাফিতিতে শাসক শ্রেণির মানসিকতার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে লেখা হয়েছে ‘বিকল্প কে? এখন দরকার জনগণের সরকার।’

তরুণদের অদম্য সাহসের প্রতীক আবু সাঈদের ছবি গ্রাফিতেতে তুলে ধরে শিল্পী লিখেছেন ‘বুকের ভেতর দারুন ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’ বঞ্চনার শিকার মানুষের আত্মাহুতি দেওয়ার যে বাস্তবতা তা হয়তো ফুটিয়ে তুলতে এমন বাক্যব্যয় করা হয়। আগামীর সমাজ ব্যবস্থার পরিচালকরা হয়তো এখান থেকে কিছুটা হলেও উপলদ্ধি নিতে পারবেন। 

বাংলাদেশের রাজনীতির একটি নোংড়া অনুশীলন হলো সংখ্যালঘু নির্যাতন, নারী নির্যাতন, আদিবাসী গোষ্ঠী সহ অন্যান্য সাম্প্রদায়িক ইস্যু তৈরি করে ঘটনাকে আড়াল করে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা। অতিরঞ্জন করে সুবিধাবাদীরা বা ষড়যন্ত্রমূলক কাজ করে তারা জনআকর্ষণ করতে চায়। এবারও তা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তা ব্যর্থ হয়েছে বিপ্লবীদের কৌশলের কাছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই সংখ্যালঘু তত্ত্বকে কবর দেওয়ার জন্য সুন্দর গ্রাফিতি এঁকেছেন, সচেতন করেছন জনতাকে। লিখেছেন ‘সমতল থেকে পাহাড় এবারে মুক্তি সবার’,‘সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই, সবাই এদেশের নাগরিক।’ বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার আদিবাসী, সুরক্ষার দায়িত্ব সবার’

ছাত্রলীগের নির্যাতনে হত্যাকাণ্ডের শিকার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাফিতিতে। লেখা হয়েছে ‘শোনো মহাজন, আবরার ইউ মেড, আমরা অনেকজন।’

ফ্যাসিস্টদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আরেকটি হলো দম্ভ করে নিজের কাজের কথা বলা।  যদিও তা জনগণের অর্থায়নে করা হয়। ফ্যাসিস্টদের সেই দম্ভভরা বিষয়গুলোকেও ব্যঙ্গ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কারণ সেগুলোতে জনগণের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে।

প্রতিবাদীদের প্রেরণার অনেক শ্লোগানও রংতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। লিখেছেন ‘ভয় পেলে তুমি শেষ, রুখে দাঁড়ালে বাংলাদেশ।’এটি এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রতিফলিত করে যেখানে প্রতিবাদের বা রুখে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার এক দুঃসাহী লড়াইয়ের সময়কে চিহ্নিত করে। হ্যাঁ তাই হয়েছে বাংলাদেশে। দাঁড়িয়েছে ছাত্র-জনতা, হয়েছেন শহীদ আর অভ্যুদয় হয়েছে নতুন বাংলাদেশর। স্বাধীনতার সূর্যোদয়কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাফিতিতে।  ‘মেধা শহীদ’ গ্রাফিতি হয়তো পৃথিবীতে বিরল। এটি একটি চরম বার্তা জাতির জন্য। মেধার অবমূল্যায়ন ধ্বংসের কারণ হতে পারে, যা জাতি আজকে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তবে বিপ্লবীরা একটি সাহসী শ্লোগান দেয় যা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাফিতিতে ‘যতবারই হত্যা করো জন্মাবো আবার।’

সারা দেশের দেয়ালগুলো লাখো গ্রাফিতিতে ভরে গেছে। নজর কাড়ছে মানুষের। সৃষ্টি করছে উদ্দীপনা। নতুন সম্ভাবনাগুলোকে সামনে আনছে। বোধশক্তিকে জাগিয়ে তুলছে। জাতির ঐক্যবদ্ধ পথচলার নজির তৈরি করছে শিক্ষার্থীরা। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে জাগিয়ে তুলেছেন তারা। একটি অর্থবহ বাংলাদেশ গড়তে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সরকার সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 


এম এ জিসান

মন্তব্য করুন