news-details

কী আছে নতুন শিক্ষা আইনে?

নাম - ছবি : সংগ্রহীত


চলতি সংসদের আগামী অধিবেশনেই তোলা হচ্ছে শিক্ষা আইন-২০১৭। এরই মধ্যে আইনটির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা আইন প্রণয়নে গঠিত কমিটির প্রধান ও মন্ত্রণালয়টির অতিরিক্ত সচিব আহসান হাবিব তালুকদার।তবে সরকার চাইলে সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে তুলতে পারে বলে জানান আইন প্রণয়ন কমিটি সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু কর্মকর্তা।



সম্প্রতি সচিবালয়ে দুদকের সাথে এক সভায় শিক্ষা আইন এবারই সংসদে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস দুর্নীতির নতুন সংযোজন। কতিপয় ক্ষেত্রে অবৈধ অর্থের বিনিময়ে দুর্নীতিপরায়ণ সরকারি কর্মকর্তা এ জাতীয় অপরাধে সংশ্লিষ্ট থাকেন বলে মনে করে দুদক। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত সুপারিশমালা বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। তাদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. নাছির উদ্দিনের এমন অভিযোগের পর শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষা আইন পাস হলে এ ধরনের দুর্নীতি থাকবে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা সূত্রে জানা গেছে, নতুন এ আইনে নিষিদ্ধ হচ্ছে প্রাইভেট-টিউশন, কোচিং বাণিজ্য এবং গাইড বই। আইন অমান্য করে এমন কাজ করলে শাস্তিরও বিধান রাখা হচ্ছে শিক্ষা আইনে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ আইনকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে। জাতীয় শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ২০১০ সালে শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়নের সুপারিশের ভিত্তিতে শুরু হয় এ আইন প্রণয়নের কাজ। ওই সুপারিশের ৭ বছরের মাথায় এসে শিক্ষা আইনের একটি খসড়া চূড়ান্ত করতে পেরেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আইনটিতে বলা হয়েছে, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের বাইরে কোনো ধরনের প্রাইভেট, টিউশন এবং কোচিং বাণিজ্য করা যাবে না। এমনকি সহায়ক বই প্রকাশের ক্ষেত্রেও জাতীয় শিক্ষক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। যদি কেউ প্রাইভেট, টিউশন অথবা কোচিং বাণিজ্য করেন সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিক শাস্তি দিলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা ৩ মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। পাশাপাশি আইনটিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি, পদোন্নতি এবং আচরণবিধির বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থাপনের বিষয়ে আইনটিতে বলা হয়েছে, অনুমতি ছাড়া কেউ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থাপন করলে ৫ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ ছাড়াও আইনটিতে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক টিউশন ও অন্যান্য ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে এবং নকল বা প্রশ্ন ফাঁসে সহায়তা করলেও থাকছে শাস্তির বিধান। যেসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারে না বা শিক্ষার্থী নেই অথচ শিক্ষকরা বেতন নিচ্ছেন, এমন অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা বলা আছে আইনটির চূড়ান্ত খসড়ায়।

শিক্ষা আইনের চূড়ান্ত খসড়া অনুসারে এক ব্যক্তি একাধিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি বা গভর্নিং বডির প্রধান হতে পারবেন না। কোনো শিক্ষক প্রাইভেট পড়ালে বাতিল হবে তার এমপিও। ইংরেজী মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানেও বাংলা ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয় পড়ানো বাধ্যতামূলক হবে।

তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁসের জন্য শাস্তির বিষয়ে চূড়ান্ত খসড়া আইনে কিছু বলা হয়নি। এমন প্রশ্নের জবাবে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষায় নকলের বিষয়ে আলাদা একটি আইন আছে। এ ছাড়া তথ্য-প্রযুক্তি আইন অনুযায়ী তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁস বা বিভ্রান্তি ছড়ালে ১৪ বছরের জেল বা এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। যেহেতু আলাদা আইন আছে তাই শিক্ষা আইনে বিষয়টি রাখা হয়নি।

শিক্ষা আইনে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে পরিষ্কার কোনো নির্দেশনা নেই। কারণ জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ এ কে আজাদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আইনটি হাতে না এলে এ বিষয়ে কিছু বলা মুশকিল।

তবে আইনটি নিয়ে কথা বলেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী। তিনি পরিবর্তন ডটকমের এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন, আইনে যেগুলি বলা হয়েছে, বিশেষ করে কোচিং বাণিজ্য, প্রাইভেট পড়ানো ও প্রশ্ন ফাঁস ইত্যাদি তো বন্ধ করা উচিত। কিন্তু এসব কার্যক্রম আইনের দ্বারা বন্ধ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। যখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটে তখন আইন দিয়ে তা বন্ধ করা সম্ভব হয় না।

তিনি বলেন, আসলে স্বার্থানেষী গোষ্ঠী অনেক বড় হয়ে গেছে, ফলে আইন হলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ অনেক কঠিন হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতির ডালপালা বেড়ে গেছে, শুরু থেকে অংকুরেই এটা বন্ধ করা উচিত ছিল। তবে আইন থাকা ভাল।


এনএনবিডি ডেস্ক