news-details

ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বাচ্চুর অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনদেন

নাম - ছবি : সংগ্রহীত


বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক মো. সামসুল আলমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

বাচ্চু, তার এক ভাই ও স্বজনদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করবেন এ কর্মকর্তা। বাচ্চুর অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগটি মানি লন্ডারিং আইনে অনুসন্ধান হতে পারে।

তাকে শিগগির দুদকে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি দেয়া হবে। এদিকে বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদে অনুপস্থিত থাকার জন্য আবদুল হাই বাচ্চু দুদকের কাছে এক মাসের সময় চেয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তার অসুস্থতার আবেদন মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় দুদক তা আমলে নেয়নি।

সংশি্লষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাচ্চুর আবেদনের বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে এ্যাপোলো হাসপাতালে খোঁজ নেয়া হয়েছে। দুদক জেনেছে, বাচ্চু আবেদন করার জন্য একদিন (১৭ ডিসেম্বর) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

এরপর তিনি আর চিকিৎসা নেননি। ফলে তিনি গুরুতর অসুস্থ দাবি করে যে আবেদন করেছেন তাতে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে দুদক মনে করছে।

এ কারণেই তার এক মাসের সময়ের আবেদন নাকচ করে তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দুদকের উপপরিচালক (গণসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বেসিক ব্যাংকের ৫৬টি মামলার মধ্যে ৯টি মামলায় আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

বাকি ৪৭টি মামলায়ও তাকে পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শিগগির তাকে দুদকে হাজির হতে নোটিশ দেয়া হবে বলেও জানান দুদকের এ কর্মকর্তা।

আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময়ই স্ত্রী শেখ শিরিন আখতার, পুত্র শেখ সাবিদ হাই অনিক ও মেয়ে শেখ রাফা হাইকে সঙ্গে নিয়ে খুলেছিলেন ইডেন ফিশারিজ লিমিটেড নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান।

এ প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক হিসাবে মাত্র ১১ মাসেই জমা হয় ১৩ কোটি টাকার বেশি। আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া টাকা সরাসরি জমা হয়েছে বাচ্চু ও তার ভাই শাহরিয়ার পান্নার ব্যাংক হিসাবে।

২০১২ ও ২০১৩ সালে কয়েক মাসের ব্যবধানে দু'জনে মিলে ৩০ কোটি টাকার বেশি অর্থ নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন টিম। বাচ্চু ও তার ভাই পান্নার ব্যাংক হিসাব বিবরণী থেকে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। দুদকের কর্মকর্তা এ বিষয়টি অনুসন্ধান করবেন।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দুদক যে ৫৬টি মামলা করে সেসব মামলায় বাচ্চু ছিলেন অধরা। বাচ্চু ও পর্ষদের দায় নিরূপণে তাদের মামলার আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা আসার পরই মূলত বেসিক ব্যাংক মামলার তদনে্তর মোড় ঘুরে যায়।

গত ৪ ও ৬ ডিসেম্বর দুই দফা বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদে বাচ্চু দুদকের কাছে ঋণ অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, তিনি একা নন। পর্ষদেরও দায় আছে। সেই সঙ্গে তিনি ঋণ অনিয়মের সঙ্গে ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামসহ তিনজন ডিএমডি ও তিনজন শাখা ম্যানেজারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন।

বাচ্চু ছাড়া অপর ১০ জন পর্ষদ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করেছে দুদক। বাকি আরও দুই সদস্যকে যে কোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন সদস্য একেএম কামরুল ইসলাম তার জবানবন্দিতে স্পষ্ট করে ঋণ অনিয়মের জন্য বাচ্চুকে দায়ী করেছেন।

আবদুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন।

পরে বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তদনে্ত বেসিক ব্যাংকের তিনটি শাখায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এর মধ্যে ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শনাক্ত হওয়ার ঘটনায় মামলা করে দুদক। যার মধ্যে রয়েছে গুলশান শাখার মাধ্যমে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি টাকা, প্রধান শাখায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা এবং দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটি টাকা।


এনএনবিডি ডেস্ক