ফাইল ছবি
ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান থাকা অবস্থায় শুরু হয়েছে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ।ইহুদীবাদী ইসরাইল নির্বিচারে হত্যা করছে গাজায় নিরীহ,নিরস্ত্র নারি,শিশু,বৃদ্ধ,অসূস্থ,চিকিৎসারত মানুষকে। মানবিক সাহায্য পর্যন্ত পৌছতে দিচ্ছেনা দখলদার ইসরাইলী বাহিনী। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ইসরাইল-ইরান হামলা,পাল্টা হামলা।পরিস্থিতি এতটাই নাজুক অবস্থায় পৌছেছে যে গোটা বিশ্ববাসি এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।কারন ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্য দুটি ইস্যুতেই বিশ্বের পরাশক্তিগুলো জড়িত।
বিশ্বনেতাদের আহ্বানকে উপেক্ষা করে ইরানে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। আগে থেকেই ইরান সতর্ক করে বলেছিল, ইরানের মাটিতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হামলা চালানো হলে তার পরিণতিতে ভয়াবহ ও কঠোর জবাব দেবে দেয়া হবে। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি, সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল আবদুল রহিম মুসাভিসহ শীর্ষ নেতারা এমন সতর্কতা দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, আক্রান্ত হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পাল্টা জবাব দেবে ইরান। এ জন্য ইরানের সেনাবাহিনী প্রস্তুত। ফলে এই হামলা-পাল্টা হামলাকে কেন্দ্র করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সমূহ আশঙ্কাকে মাথায় রেখেই বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি জাতিসংঘ সতর্ক করেছে ইসরাইলকে। কিন্তু উগ্রবাদি ইসরাইল কারো কথায় কান না দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইরানে। এখন আতঙ্কের বিষয়, ইরান এর কি জবাব দেয় বা কিভাবে দেয় সেটা।
এরই মধ্যে হামলার খবর প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাজারে তেল ও স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে।পতন হয়েছে শেয়ারের মূল্য। সবাই সতর্ক ও আতঙ্কিত। কেউ বিনিয়োগ করতে চাইছেন না। কারণ, ইসরাইল ও ইরান শুধু দুটি দেশই নয়। তাদের মিত্ররাও বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক মেরুকরণ করা।
ইসরাইল-ইরান পাল্টাপাল্টি হামলা হলে তাতে জড়িয়ে যাবে এই বিপরীত মেরুর রাজনৈতিক পক্ষসমুহ। ফলে পরিস্থিতিকে ভঙ্গুর ও উত্তেজনাকর বলে বর্ণনা করছেন আল জাজিরার সাংবাদিক ডোরসা জব্বারি। তিনি বলছেন, সবচেয়ে উত্তেজনাকর অবস্থা বিরাজ করছে। ডোরসা জব্বারি আরও বলছেন, ইরানের মিডিয়া এই হামলাকে ছোট করে দেখছে। তারা বলছে, তিনটি ছোট আকারের উড়ন্ত অজ্ঞাত বস্তুকে স্থানীয় সময় ভোর ৪টায় ইসফাহানের আকাশে দেখা গেছে। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা শনাক্ত করে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই স্থানটি হলো ইসফাহান প্রদেশে ইরানের একটি সামরিক বিমানঘাঁটি বরাবর। সেটা দেশটির সেনাবাহিনী ব্যবহার করে, রেভ্যুলুশনারি গার্ড ব্যবহার করে না। এই ঘাঁটিতে আছে এফ-১৪ টোমক্যাট যুদ্ধবিমানের অনেক সংগ্রহ। এই স্থাপনাটি ইসফাহান বিমানবন্দরের কাছেই। এসব ঘটনার পর ইরানের আকাশসীমাকে পরিষ্কার ও নিরাপদ করেছেন কর্মকর্তারা। তবে বেসামরিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমের তাবরিজ শহরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও সক্রিয় করা হয়েছে।
ওদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে উদ্ধৃত করে ইসরাইলের হারেৎজ পত্রিকা বলছে, ইরানের তিনজন কর্মকর্তা বলেছেন- ইসফাহানের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। তবে তেহরানের কর্মকর্তারা এ খবরকে মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন, ইসফাহানে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ইরানে হামলার রিপোর্ট হলো ইসরাইল ও আমেরিকান মিডিয়ার প্রচারণা ছাড়া কিছু নয়। এ ছাড়া ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল জরুরি বৈঠক তলব করেছে মর্মে যে খবর বেরিয়েছে, তাও প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। রাষ্ট্রীয় টিভি বলেছে, শহরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এর বাইরে যেসব রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে তা ভুয়া।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকেবহাল মহল বলছেন,ইরান-ইসরাইল উত্তেজনা বর্তমানে যে পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে তাতে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবি হয়ে উঠেছে।ইসরাইলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র নিষেধ করা সত্ত্বেও ইসরাইল ইরানে হামলা করে বসেছে।তার ভরসা হলো ইরান বা অন্য যেকোন মুসলিম দেশের সাথে যুদ্ধ লাগলে আমেরিকা এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা তার পাশেই থাকবে। এখন ইরান নিশ্চই বসে থাকবেনা।তার পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক যেকোন সময় ইসরাইলে সর্বাত্মক হামলা চালাবে।
ইরান -ইসরাইল সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে বিম্বের পরাশক্তিগুলো স্পষ্টত দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়বে। ইরানের পাশে দাড়াতে পারে তুরস্ক,রাশিয়া,চীন,উত্তর কোরিয়া। অপরদিকে ইসরাইলের পাশে যেমন আছে তেমনই থাকবে যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,ফ্রান্সসহ তার পশ্চিমা মিত্ররা ।এমন কি ভারতও ইসরাইলের পক্ষে যেতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ শুরু হলে তা শুধু সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। তার প্রভাব পড়বে ইউক্রেনে।ইউক্রেন ইস্যুতে ইতোমধ্যেই রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে ইরান,চীন,উত্তর কোরিয়া। সতর্ক পা ফেলছে তুরস্ক। তবে এরদোয়ানের তুরস্ক মুসলমানদের পক্ষেই থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,বৃহত্তর যুদ্ধ শুরু হলে তা শুধু এই দুটি অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবেনা। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব যুদ্ধাবস্থা চলমান রয়েছে তাও মোড় নেবে ভিন্ন দিকে।
বিশ্ববাসি যুদ্ধ চায়না,শান্তি চায়।যুদ্ধ মানে ধ্বংস। তেলের দাম বাড়বে,জিনিস পত্রের দাম বাড়বে।অনাহারি মানুষের মিছিল বাড়বে।তাই উত্তেজনা কমাতে হবে। বিশ্বনেতাদের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে কিভাবে বিশ্বযুদ্ধ এড়ানো যায়।
শহীদুল ইসলাম
shahidjournalist67@gmail.com
শহীদুল ইসলাম