news-details

হজে গেলেই কি নামের আগে ‘আলহাজ’ লেখা যাবে!

ছবি: সংগৃহীত


ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি হলো হজ। স্বাধীন এবং সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের জন্য জীবনে একবার হজ ফরজ। সামর্থ্যবান অনেক মানুষই জীবনে বহুবার হজ করে থাকেন। অনেকেই আছেন হজ পালন শেষে নিজের নামের আগে হাজি বা আলহাজ শব্দ যুক্ত করেন। 

হজ একটি ইবাদত। এটি কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যই আদায় করতে হয়। পার্থিব কোনো স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয় না। নাম-যশ-খ্যাতির জন্য বা মানুষের সামনে ভালো সাজার জন্য হজ করা ইসলামসম্মত নয়। 

মহানবী (সা.) হজের সময় দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, তোমার জন্য হজ করতে শুরু করলাম, যশ-খ্যাতি যেন আমাদের উদ্দেশ্য না হয়।’ (ইবনে মাজাহ)

ইসলামের চারটি রুকনের মধ্যে একটি রুকন হলো হজ করা। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ রুকন হলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করা।

যিনি নিয়মিত নামায পড়েন তাকে বলা হয় ‘মুসল্লি’। যিনি হজের ফরজ আদায় করেছেন তাকে বলা হয় ‘হাজি’। আরবিতে শুরুতে আলিফ লাম যোগ করে বলা হবে ‘আলহাজ’। উর্দুতে বলা হয় হাজি। পার্থক্য এখানেই।

মজার বিষয় হলো, জীবনে একটি হজ করে ‘আলহাজ’ অথবা ‘হাজি’ হয়ে যায়। কিন্তু হাজারো বার নামাজ পড়ার পর কেউ নিজের নামের শুরুতে ‘মুসল্লি’ অথবা ‘আলমুসল্লি’ যোগ করে না।

সাধারণ আরবী কথাবার্তায় ‘আলহাজ’ শব্দটিই ব্যবহৃত হয়। বাংলা ভাষায় মূল আরবি শব্দের জীমের তাশদীদ বাদ দিয়ে ‘আলহাজ্ব’ বলা হয় এ শব্দের অর্থ হল ‘হজ আদায়কারী’। তিনি কয়বার হজ্ব করেছেন তা এই শব্দে নেই। 

কিন্তু কারো কারো এই ধারণা রয়েছে যে, যে একবার হজ করেছে তাকে বলা হয় হাজি, আর যে একাধিক বার হজ করেছে তার উপাধী আলহাজ! এই ধারণা ঠিক নয়। একবার হজ আদায়কারীর জন্যও উভয় শব্দ ব্যবহার করা যায়। হজকারীকে হাজিও বলা যায়, আলহাজও বলা যায়।

যাহোক এটা একটা শব্দ কেন্দ্রিক আলোচনা হল। এখানে যে বিষয়ে সবারই সচেতন থাকা প্রয়োজন তা হল, হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রোকন এবং একটি ফযীলতপূর্ণ ইবাদত, যা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই আদায় করতে হবে। 

হাজী বা আলহাজ উপাধী পাওয়ার জন্য হজ করা কিংবা হজ আদায়ের পর এই উপাধীর আশায় থাকা দুটোই রিয়ার অন্তভূর্ক্ত যা ইবাদতের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা সব বিনষ্ট করে দেয়।

তাই হজ আদায়কারীর নামের সঙ্গে হাজি বা আলহাজ যুক্ত না করলে তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা শরিয়তসম্মত নয়। তবে কেউ যদি শ্রদ্ধা করে আলহাজ বা হাজি সাহেব বলে ডাকেন, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং তা ইসলামে প্রশংসিত বিষয়। মহানবী (সা.) সাহাবিদের বিভিন্ন ভালো কাজের দিকে সম্বন্ধ করে উপাধি দিতেন। (ফাতহুল বারি, হাদিস: ৩৬৭৯),  যুক্ত করেন তিনি।

বিগত দিনে আমাদের দেশের যেসব প্রবীণ ব্যক্তি দীর্ঘ সফরের মাধ্যমে হজ করে ফিরে আসতেন এবং সব অন্যায় কাজ-কর্ম হতে দূরে থেকে নিজেকে দ্বীনী কাজে লিপ্ত রাখতেন, তাদেরকে নাম ধরে না ডেকে বিশেষ শ্রদ্ধার সঙ্গে ‘আলহাজ’ বা ‘হাজি সাহেব’ বলে সম্বোধন করা হ’ত। বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষকে এভাবে সম্মান করে ডাকা আদৌ অন্যায় নয়। তবে হজ করেই নিজের নামের সঙ্গে ‘আলহাজ’ বা ‘হাজি’ উপাধি যুক্ত করা এবং কেউ এভাবে না ডাকলে এটি রিয়া (লোক দেখানো) হিসেবে গণ্য হবে। 


এনএনবিডি, ডেস্ক: