ছবি: ইন্টার নেট
জীবন্ত কিংবদন্তি একমাত্র নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশী প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ ইউনুস।
সদা মিষ্টিভাষী, নিঃআড়ম্বর, প্রচার বিমুখ সাদামাটা সুতির গ্রামীণ চেক ফতুয়া শার্ট পরা এ মানুষটির ৮৪তম জন্মদিন ছিল, গত ২৮ জুন শুক্রবার।
তিনি ১৯৪০ সালে অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনামলে এই দিনে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার জোবরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে বিএ,এম,এ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডার বিলট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি সহ বিশ্বের বহু নামি দামি ইউনিভার্সিটি ও ইনস্টিটিউট থেকে ডক্টররেটসহ নানা ডিগ্রী অর্জন করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার,২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মেডেল অফ ফ্রিডম, ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল অর্জন করা ছাড়াও তাঁর দীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবনে দেশী ও আন্তর্জাতিক নানা কৃতিত্ব সহ বহু পদকে ভূষিত হন। যা আমার মত স্বল্প মেধা সম্পন্ন মানুষের পক্ষে ছোট্ট আর্টিকেলে লিখে শেষ করা সম্ভব নয়।
আমরা তো ভুলেই গিয়েছি...
জীবন্ত এই কিংবদন্তির জন্মদিন ২৮জুন। তাই সোশ্যাল মিডিয়াতে সরগরম ছিলাম দেশবিরোধী চুক্তি, সাবেক আর্মি প্রধান, পুলিশ প্রধানসহ নানা সরকারি বেসরকারি জায়েন্ট চোর-ডাকাত এবং মিডিয়া পাড়ার রঙ্গনাদের নিয়ে।
গেল শুক্রবার ২৮জুন এ নোবেল বিজয়ীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনটি কেটেছে, নিরবে নিভৃতে।
অথচ এই দেশেই কারো কারো জন্মদিন উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠান হয়েছে,পোড়ানো হয়েছে আতশবাজি, খরচ হয়েছে জনগণের ট্যাক্সের হাজার কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনুস তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে সাধারণত কোন অনুষ্ঠান আয়োজনে সাঁয় দেননা।
তাই তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইউনুস সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিনে ছিলনা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান। বিপরিতে সেখানে পুরো দিনই চলেছে তাঁরই প্রবর্তিত সোশ্যাল বিজনেস ও থ্রি জিরো বিশ্ব বাস্তবায়নের নানা ভিডিও সম্প্রচার সহ অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে।
অন্যদিকে এই দিনটিকে উপলক্ষ করে ফিলিপাইন তাদের রাজধানী ম্যানিল্যাতে আমদের নোবেল বিজয়ীকে প্রধান অতিথি করে সারা পৃথিবী থেকে শত শত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করে এনে আয়োজন করেছে সোশ্যাল বিজনেস ও থ্রি জিরো ক্লাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
সে অনুষ্ঠানের নানা আয়োজনের মাঝে তিনি ব্যস্ত সময় পার করেছেন তাঁর জীবনের এই বিশেষ দিনটি।
আর রাষ্ট্র? সেই তো কবেই তাকে নানা মামলার আসামি বানিয়ে লোহার পিঞ্জরে আটকেছে! ৮৪ বছর বয়সী মানুষটিকে তীব্র গরমের মাঝেও কাঠগড়ায় বসিয়ে রেখেছে ঘন্টার পরে ঘন্টা। রক্তচোষা সহ নানা কটুক্তি আর অপদস্তের তীর হেনেছে বছরের পর বছর জুড়ে....
আমরা বাঙালি কখনোই গুণীর মান রাখতে জানি না,কদর করতে জানিনা। তাইতো কবি বলেছেন,
"যে জাতি/দেশ গুণের কদর দিতে জানেনা সে দেশে গুণী জন্মায় না"
ভবিষ্যতে উনার মত কিংবদন্তি আর এদেশে জন্মাবে কিনা সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে!
তবুও বলব আমরা ভাগ্যবান, যে তাঁর মত মানুষ আমাদের এ হতভাগার দেশ বাংলাদেশে জন্মেছিলো।
হে কিংবদন্তি ডক্টর ইউনুস,
তোমাকে আমরা সম্মান দিতে পারিনি, করেছি অমর্যাদা। নিজ গুনে স্বভাব ছলে হেসে দিয়ে ক্ষমা করে দিও আমাদেরকে।
তবে আমি বিশ্বাস করি এই জাতি কখনো জেগে উঠলে ফ্যাসিবাদের কালো থাবা থেকে মুক্তি পাবে এই দেশ। সেদিন নিশ্চয়ই কোটি জনতা তোমাকে সম্মানিত করতে বিলম্ব করবে না। স্যালুট জানাবে দলমত নির্বিশেষে এবংউপাধিতে ভূষিত করবে,"সিগনেচার অফ বাংলাদেশ", ইনশাআল্লাহ।
কথা দিলাম সেই সম্মানের দিনে সমগ্র জাতির সাথে সাথে আমি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই তোমাকে ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত করবো ও স্যালুট জানাবো। ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে ক্ষণজন্মা পুরুষ ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের জন্মদিনে মহান রবের দরবারে ফরিয়াদ,
তিনি যেনো তোমাকে হায়াতে তাইয়েবা দান করেন, এবং আমাদের এই হতভাগা জাতির মাঝে আরো বহুকাল আলোকবর্তিকা হিসেবে বাঁচিয়ে রাখেন,আমিন।
এসএম রিয়েল রোমান