news-details

ফিলিস্তিনে হত্যাযজ্ঞ: বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের করনীয়

ছবি: ইন্টার নেট


চোখের সামনে ধ্বংসযজ্ঞ, নিহত শিশুর লাশ,তবে সেটি কার চেহারা দেখে আন্দাজ করা যাচ্ছে না। ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা হচ্ছে শিশুদের নির্জীব দেহ। তাঁবুতে সাদা চাদরে মোড়ানো সারি সারি মৃতদেহ এবং বিমান হামলায় মাটির সাথে মিশে যাওয়া ইমারত এ যেন ফিলিস্তিনের নিত্যদিনের সাধারণ ঘটনা। চোখের সামনে মানবতা গুঁড়িয়ে যেতে, পুড়তে, ছিন্নভিন্ন হতে দেখতে দেখতে বেড়ে উঠেছে প্রায় এক শতকের প্রজন্ম। অথচ এ ভূখন্ডটি ছিল একান্তই তাদের নিজস্ব। স্বাভাবিকভাবেই অনুমান করা যাচ্ছে, এটা পৃথিবী নামক ভূখণ্ডের এক রক্তাক্ত জনপদ যার নাম ফিলিস্তিন। দীর্ঘ  একশ বছরে সেখানে গড়ে উঠেছে লাশের স্তুপ। নিজ ভূখণ্ড হতে বিতাড়িত হয়ে মার খাচ্ছে অবরুদ্ধ অবস্থায়। যেখানে পূর্ণ ফিলিস্তিনের ভূমি ছিল তাদের, সেখানে তারা ছোট্ট পরিসরের ক্যাম্পে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। তাদের চলাফেরা থেকে শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্য, সেনাবাহিনী গঠন, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রন সকল কিছুই নিয়ন্ত্রন করছে জায়নবাদী ইসরাইল। কোন রকম নামকাওয়াস্তে গাজা ও পশ্চিম তীরে নিজেদের সরকার তারা গঠন করেছে। দুই অঞ্চলে রয়েছে দুই দলের সরকার। গাজায় রয়েছে ইরান সমর্থিত হামাস সরকার আর পশ্চিম তীরে রয়েছে পিএলএ সরকার। গাজার স্বাধীনতাকামী শাসকদল হামাস দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হলেও পশ্চিম তীরে পিএলএ সরকার সেখানে চরমভাবে ব্যর্থ। তবে ২০১৮ সালে দুই স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই হলে তা ইসরাইলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে। ফলে বর্তমানে জনগণের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি কাজ করছে কারণ সেখানে রাজনৈতিক মতভেদ অনেকটা দূর হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে চলছে দুই দেশের যুদ্ধ। সেখানে বলা যায়, এই প্রথম সাফল্য পেয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী দলগুলো। হামাস ও তার সহযোগিদের সম্মিলিত প্রতিরোধে এ পর্যন্ত ১৪০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছে। এছাড়াও হামাসের আল কাস্সাম বিগ্রেড ও অন্যান্য সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো দাবি করেছে তারা কমপক্ষে ১৯৯ ইসরাইলিকে বন্ধি করেছে। যাদের মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন। অপরদিকে এর বিপরিতে তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে জায়নবাদী দেশটি। সেখানে তারা এ পর্যন্ত ৩৭ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনির প্রাণ সংহার করেছে। নিহত এ সকল নাগরিকদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি, যারা বেসামরিক নাগরিক। এ সকল নিরীহ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে এ ধরনের হামলাকে যুদ্ধ অপরাধ বলে গণ্য করেছে জেনেভা কনভেনশন। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে শত সহস্র বার এ ধরনের মানবতা বিরোধী অপরাধ করে আসছে জায়নবাদী দেশটি। মাঝে মধ্যে বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ বিবৃতি আসলেও দেশটিকে অথবা দেশটির যুদ্ধাপরাধী নেতাদের কাউকে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আদালত সেখানে টুটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করেছে। অধিকন্তু ফিলিস্তিনের ভূমি দখলে প্রচ্ছন্ন ও প্রকাশ্য সমর্থন জুগিয়ে গেছে আমেরিকা রাশিয়াসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো। ফিলিস্তিনের নাগরিকদের রক্তের যেন কোন মূল্য নেই। নিজ মাতৃভূমি থেকে তাদেরকে আজ করা হয়েছে বিতাড়িত।

সংকটের উৎপত্তি ও বর্তমান অবস্থা: ফিলিস্তিন ভূখন্ডটি সর্বশেষ অটোমান সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত ছিল। হযরত ওমর (রাঃ) এর সময় এটি মুসলমানদের শাসনের অধীনে আসে। যেখানে সকল ধর্মের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন স্বয়ং এ মহান খলিফা। ফলে এ ভূখন্ডে কোন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়নি কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়। এদের মধ্য থেকে বিরাট সংখ্যক ইহুদি ইসলামের সৌন্দর্যে অভিভুত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।উনিশ শতকের শেষ দিকে অটোমান সাম্রাজ্যের শক্তি ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকে। এ সুযোগে ইউরোপীয় ও পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের প্রভাব বাড়াতে শুরু করে। উনিশ শতকের শেষ দিকে জায়নবাদী আন্দোলন গড়ে উঠতে শুরু করে। পশ্চিমা শক্তির আশ্রয় প্রশয়ে ইহুদীরা আরব ভূমিতে শকুনির দৃষ্টি ফেলে। ফলে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা কয়েক লাখ ইহুদি ফিস্তিনের দিকে পঙ্গপালের ন্যায় আবাস গড়তে ছুটে আসতে থাকে। একই সাথে ফিলিস্তিন রক্ষার অভিভাবক অটোমান সাম্রাজ্যকে দূর্বল করার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে পশ্চিমা দেশগুলো। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জাতীয়তাবাদের ধোয়া তুলে আরবদের বিদ্রোহে নামায় । আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ আরব দেশগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ে। অপরদিকে এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র গঠনের সহায়তার আশ্বাস দেয় ব্রিটেন ও আমেরিকা। সর্বপ্রথম ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি ‘জাতীয় বাসস্থান’ গঠনের ঘোষণা দেয়। যাকে ইতিহাসে ‘বেলফোর ঘোষণা’  নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির জন্য প্যারিসে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ১৯২০ সালের ১০ আগস্ট উসমানিয় সাম্রাজ্যের সাথে সেভার্স চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ চক্তির ফলে ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেট চলে যায় ব্রিটিশদের হাতে। এ সময় ব্রিটিশ, আমেরিকা ও ফ্রান্সের তত্ত্বাবধানে ইহুদিদের এ ভূখন্ডে আনা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান চ্যান্সেলর এডলফ হিটলারের ইহুদি নিপীড়ন এ স্রোতকে আরো বেগবান করে। ফিলিস্তিনিদের বিরোধিতা সত্বেও সেখানে তারা আবাস গড়ে তুলতে থাকে। ভুমি দখল নিষ্কণ্টক করতে গড়ে তোলে হাগানাহ, ইরগুন ও স্ট্যার্ন গ্যাং। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পশ্চিমা শক্তিগুলো বিপুল পরিমান গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্রের যোগান দিতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর স্বাধীনতা প্রদানের অঙ্গীকারে ১৯১৮ সাল থেকে ৩০ বছর ফিলিস্তিনকে নিজ আয়ত্বে রাখে। মূলত এ সময়টাই এ ভূমিকে আরব মুসলিম শুণ্য করার কাজ দ্রুত গতিতে চালিয়ে নেয়া হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি বিজ্ঞানী ড. হেইস বেইজম্যান ব্রিটেনের প্রয়োজনে বোমা তৈরীর কৃত্রিম উপকরণ ফসফরাস আবিষ্কার করেন। আনন্দে আত্মহারা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন, “ এর বিনিময়ে তিনি কী ধরনের পুরস্কার চান?” তার উত্তর ছিল, আমার অর্থ নয়; স্বজাতির জন্য এক টুকরো ভূমি চাই, আর সেটা হলো ফিলিস্তিন”। কথা রেখেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, করে দিয়েছিলেন স্থায়ী আবাস। পশ্চিমা তত্ত্বাবধানে সেখানে শুধু দখল নয়; মুসলিম নারীরা ধর্ষিত হতে থাকে। ফলে অনেক মুসলিম জানমাল, ইজ্জত বাঁচাতে আপন ভূমি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পাড়ি জমাতে শুরু করে। ইহুদিদের অত্যাচার বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতে থাকে। বিশ্ব জনমত যখন ইহুদিদের বিরুদ্ধে তখন তাদের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয়। তারা ১৯৪০ সালে এসএস প্যাট্রিয়া নামের এক জাহাজকে হাইফা বন্দরের কাছে উড়িয়ে দিয়ে ২৭৬ জন স্বজাতি ভাইকে হত্যা করে। এরপর ১৯৪২ সালে ইহুদি সন্ত্রাসী সংগঠন হাগানাহ আরেকটি হামলা চালিয়ে ৭৬৯ জন ইহুদিকে হত্যা করে বিশ্ব জনমতকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করে। এরপর নিজ ভূখন্ড রক্ষায় পশ্চিমা আশ্রয়ে দখলদারি ঠেকাতে ১৯৩৬-৩৯ সালে সংঘটিত হয় আরব বিদ্রোহ। ব্রিটিশদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় জায়নবাদী শক্তি সে বিদ্রোহ দমন করে। এ বিদ্রোহে ৫ হাজার মুসলিম শহীদ হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরব মুসলিম ও ইহুদিদের মধ্যে বৈরিতা চরমে ওঠে। আরবদের বিরোধিতা সত্বেও পশ্চিমা বিশ্ব ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের কাজটি এগিয়ে নেয়। এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেট ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয় ব্রিটিশ সরকার। এ ভুমির ভাগ্য নিয়ন্ত্রেনের দায়িত্ব জাতিসংঘের কাঁধে ছেড়ে দেয় ব্রিটেন। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘ ফিলিস্তিন ভূখন্ডে ইসরাইল নামক রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের ঘোষণা দেয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদস্যরা মুসলমানদের একচ্ছত্র আবাসভূমি ফিলিস্তিনকে দ্বিখন্ডিত করে পৃথক ইহুদি রাষ্ট্র ইজরাইল ও ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেয়। সেখানে যা ঘটলো তা বিস্ময়কর, দখলদার ইসরাইলকে দেয়া হলো মোট ভূমির ৫৭% আর মূল আদিবাসীদের দেয়া হলো ৪৩%। ১৯৪৮ সালের ১৮ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেট ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয় ব্রিটেন। ওই দিনই নেতা ডেভিড বেন গুরিয়নের নেতৃত্বে স্বাধীন ইসরাইল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়া হয়। ১০ মিনিটের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র  ইসরাইলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ বেধে যায়। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ অস্ত্র সহযোগিতার কারণে আরবরা পরাজিত হয়। এ যুদ্ধে প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বড় একটা অংশ দখল করে নেয় ইজরাইল এবং প্রায় সাড়ে ৭লক্ষ ফিলিস্তিনি শরণার্থী হন। এরপর এ সংখ্যা বিরামহীন গতিতে বেড়েই চলেছে। পশ্চিমা সহযোগিতায় ইজরাইল ষাটের দশকে পরমাণু মক্তির অধিকারী হয়। ফলে জায়নবাদী রাষ্ট্রটি হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য নির্যাতনের স্টিমরোলার। যাদের হাতে প্রায় প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। তাদের নিবৃত্ত করতে এ পর্যন্ত ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ তিনটি বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। প্রতিবারই আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর সহযোগিতা ফলে আরবরা পরাজিত হয়েছে। এ যুদ্ধগুলোও ফিলিস্তিনের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে তো আনেই নি; বরং আরো দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।

প্রাচীন ফিলিস্তিন ও ইহুদিদের ভ্রান্ত দাবি: প্রায় ২.৬ থেকে ২.৯ মিলিয়ন বছর আগে আফ্রিকা থেকে লেভান্তে হোমোনাইডদের চারটি পর্বের ছড়িয়ে পড়ার ইতিহাস জানা যায়। মূলত এ গোষ্ঠীগুলো থেকে এ অঞ্চলে মানুষের বসবাস শুরু। যেমন ফিলিস্তিনে প্রাচীন মানুষের বসবাসের প্রমাণ গালীল সাগরের নিকটে উবেদিয়ায় পাওয়া গেছে। যখন জাতি হিসেবে ইহুদিদের অস্তিত্বও প্রমাণ করা কঠিন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইহুদিদের আদি বাস আরব উপদ্বীপে ছিল। সেখান থেকে তারা ব্রোঞ্জ যুগে ফিলিস্তিনে বসবাস করা শুরু করে। তবে তাদের খারাপ মানবিক স্বভাবের কারণে সারাবিশ্বে অনেক শাসক ও জাতি দ্বারা নিগ্রহ, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আল্লাহপাক এ নির্যাতিত জাতিকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় অসংখ্য নবী রাছুল প্রেরণ করেছেন।  

যদিও এজাতি সে সকল ত্রাণকর্তাদের হত্যা, নির্যাতন করতে দ্বিধাবোধ করেন নি।  ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ১৮ শতকে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাদেরকে উত্তর-পশ্চিম মেসোপটেমিয়ায় বসবাসের ব্যবস্থা করেন। এরপর বর্তমান ইরাক থেকে আনুমানিক ১৫০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে হযরত ইয়াকুব (আঃ) তাদেরকে ফিলিস্তিনে নিয়ে অসেন। হযরত ইয়াকুব (আঃ) ১২ পুত্রের একজনের নাম ছিল ইয়াহুদা। যিনি ইউসুফ (আঃ) কে কুপে ফেলে মারার প্রধান ষড়যন্ত্রকারীদের একজন ছিলেন। পরবর্তীতে তার বংশধরদেরকে তার নামানুসারে ইহুদি বলা হয়ে থাকে। সেখানে তারা বসতি গড়ে তোলেন। ১৬০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে দূর্ভিক্ষ দেখা দিলে তারা এ ভূখন্ড ছেড়ে মিশর চলে যান। মিশরের ফারাওরা তাদের চারিত্রিক ত্রুটির বিষয়ে অবগত হয়ে সকলকে বন্ধি করেন। এরপর দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার হয় এ জাতি। এরপর খ্রিষ্টপূর্ব ১৩০০-১২৫০ অব্দের দিকে মুসা (আঃ) তদেরকে ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের অত্যাচার থেকে মুক্ত করে সিনাই উপদ্বীপে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর তারা প্রথমে কেনান পরে পলেস্টীয় নামের এক যোদ্ধা জাতি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ফিলিস্তিন ত্যাগ করতে বাধ্য হন। দীর্ঘ দুই শতাব্দি নির্যাতন ভোগের পর হযরত দাউদ (আঃ) তাদেরকে সংগঠিত করেন। জেরুজালেমে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সেখানে শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তার পুত্র সুলাইমান (আঃ) তাকে আরো বর্ধিত করেন। ৯৬০ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দে ইস্রায়েল ও যিহুদা নামে বিভক্ত হয়ে যায়। রাজ্য দুটি দূর্বল হয়ে পড়লে খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০-৬০০ অব্দের মধ্যে গোটা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। অ্যাসিরীয় সম্রাট নেবুজাদনেজার জেরুজালেমে ইহুদিদের উপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালান। তাদেরকে ৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দ পর্যন্ত ক্রিতদাস বানিয়ে রাখেন এবং বন্ধি জীবনযাপন করতে বাধ্য করেন। ইতিহাসে একে ‘ব্যবিলনীয় বন্ধিদশা’ নামে অভিহিত করা হয়। ৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দে পারস্যের হাখনামেশি সাম্রাজ্যের সম্রাট অ্যাশিরীয়দের পরাজিত করে মেসোপটেমিয়া দখল করে নেন। ইহুদিরা হাখনামেশি সাম্রাজ্যের অধীনতা শিকার করে ফিলিস্তিনে বসবাস করতে থাকেন। এই সময় পারস্য ও হিব্রু সংস্কৃতির মিশ্রণে এক নতুন সংস্কৃতির জন্ম হয়। এরপর ৬৪ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দে রোমান জেনারেল পম্পে সিরিয়া জয় করেন এবং জেরুজালেমের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেন। ফলে খুব সহজেই ফিলিস্তিন রোমান শাসনে চলে যায়। তবে তারা ফিলিস্তিনে বসবাসের সুযোগ পান। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে , এ অঞ্চলটি প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠী শাসন করেছে , এককভাবে ইহুদিরা নয়। মূলত অবাধ্য এজাতি আল্লাহর নবীদের সাহায্য পেয়ে দাসত্বের নিগড় মুক্ত হয়ে বসতি গড়ার সুযোগ পেয়েছেন। যখনই তারা খোদার বিধানের বিরোধিতা করেছেন তখনই তারা বিভিন্ন জাতি দ্বারা নির্যাতন নিষ্পেষনের শিকার হয়েছেন। মূলত ফিলিস্তিনের পূণ্যভূমি সত্যপন্থিদের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই বরাদ্ধ। তাই ইহুদিরা যে দাবি করে ফিলিস্তিন তাদের ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’ তা সর্বৈব মিথ্যা।

ফিলিস্তিন রক্ষায় প্রয়োজন প্যান-ইসলামিজমের শক্তিশালী জাগরণ:

প্যান- ইসলামিজম ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামের প্রাসাদ মূলত দুই স্তম্ভের উপর নির্ভরশীল। আর সেটা হলো ঐক্য ও নেতৃত্ব। ঐক্য জাতিকে শুধু সুদৃঢ়ই করে  না, উপরন্তু শত্রুদেরকে পরাজিত করতে সহায়তা করে। বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে বড়ই অভাব যার কারণে মুসলিম বিশ্বের সীমানা পেরিয়ে খুব সহজেই শত্রুপক্ষ ঢুকে পড়ছে তাদের ভূখণ্ডে। তারা শুধু দেশের অভ্যন্তরীণই নয়, অন্দর মহলও দখলে নিয়েছে। প্রত্যেক মুসলিম দেশেই মুসলিম নামধারী এক ধরনের তল্পিতল্পাবাহক শ্রেণী গড়ে তুলেছে। আর এই মুসলিম নামকাওয়াস্তে চতুষ্পদ জন্তুদের দ্বারা ইসলাম, ইসলামি মূল্যবোধ ও ইসলামপন্থিদের দমন করছে। মিশর, তিউনিসিয়া, নাইজেরিয়া ও বাংলাদেশ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অথচ ঐক্যের উপর দাড়িয়ে আজ ইউরোপীয় ইউনিয়ন শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। গণতন্ত্র, ব্যক্তি অধিকার ও বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। অপরদিকে মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্র প্রধানগণ জাতির মধ্যে বিভেদ, বিশৃঙ্খলা ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে মসনদ আঁকড়ে রাখায় ব্যস্ত। এমতাবস্থায় মুসলিম জনগোষ্ঠীকে কোন অজুহাতে হাত পা গুটিয়ে থাকা উচিত হবে না। মুসলিম সম্প্রদায়কে এক কাতারে আনতে শহর, গ্রামও থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র পরিসর পর্যন্ত ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিতে হবে। প্যান- ইসলামিজম ধারণার ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে হবে। এ ব্যাপারে সভা সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় মিশনারি মানসিকতা নিয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ইসলামের ছায়াতলে আনতে হবে। যে কাজ এদেশে করে গেছেন হাজী শরিয়তুল্লাহ, তিতুমীর ও বেরেলভী ( রহঃ)। প্যান ইসলামিজম কী এ ব্যাপারে বর্তমান মুসলিম প্রজন্মের কোন ধারণাই নেই। এজন্য এ মতবাদের প্রসারে পরিকল্পনা মাফিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ইসলামি স্কলার গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্যান ইসলামিজমের মূল সুর হলো মুসলিমদের ঐক্যকেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। আরবিতে যাকে আল ওহাদাতুন ইসলামিয়া। এর মূল কথা হলো, সারা বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠী একক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধিনে থাকবে, তাদের থাকবে সম্মিলিত সামরিক সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। যেটার একটা মডেল দাঁড় করিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আধুনিক যুগে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় একে সংজ্ঞায়িত করার সুযোগ আছে। বলা যায় সারা বিশ্বে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ভিন্ন হোক, তাদের থাকবে সম্মিলিত সেনাবাহিনী যারা যে কোন দেশের প্রয়োজনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারে। মূলত এমতবাদের উৎস কুরআন হাদিস। খোলাফায়ে রাশেদার সময় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব এক ছিল এবং এ ব্যবস্থা হাজার বছরেরও অধিক সময় টিকে ছিল। ফলে মুসলিম বিশ্ব পৃথিবীর বুকে পরাশক্তি হিসেবে দাড়াতে সক্ষম হয়। তবে একে আধুনিকভাবে পরিচিত করানোর পিছনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন জালালউদ্দিন আফগানী। তিনিই মূলত একে দার্শনিক ভিত্তি প্রদান করেন। আর তার প্রায়োগিক প্রচেষ্টা চালান তুরস্কের মিল্লি গুরুস আন্দোলনের নেতা নাজিমুদ্দিন আরবাকান। তিনিই সরকারে এসে প্যান ইসলামিজম ধারণাকে উন্নত করতে প্রচেষ্টা চালান। তার ফলশ্রুতিতে তিনি মুসলিম প্রধান দেশগুলোকে নিয়ে ডি-৮ গঠন করেন। সেখানে ছিল তুরস্ক, মিশর,ইরান, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া ও বাংলাদেশ। তার লক্ষ্য ছিলো এ সকল দেশে একক মুদ্রা চালু করা। যৌথ প্রতিরক্ষা, পেট্রো কেমিক্যাল প্রযুক্তির উন্নয়ন, বেসামরিক অবাধ বিমান চলাচল, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান। এ সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে দেশগুলোতে সহায়তা বৃদ্ধি করা। যখন মুসলমানদের বিরুদ্ধে সকল জাতি ঐক্যবদ্ধ সেখানে এজাতির বাঁচার একমাত্র পথ প্যান ইসলামিজম ধারণা। এ মতবাদ প্রতিষ্ঠায় শুধুমাত্র মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সচেতন হলেই হবে না, ইসলাম বিদ্বেষী শাসক শ্রেণিকে মসনদ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। ইসলামের সুউচ্চ প্রাসাদের প্রধান দুই স্তম্ভ হলো নেতৃত্ব ও ঐক্য এ মতবাদের চর্চার মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়ে নবতরভাবে পথ চলবে। মুসলিম বিশ্ব একটি ইউনিয়ন হলে পৃথিবীর মুসলমানদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব হবে। মুসলমানদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে, ঐক্য ও নেতৃত্ব অটুট রাখতে অবদান রাখা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব।

মুসলিম উম্মাহর করণীয় : ফিলিস্তিন মুসলিম জাতির আত্মমর্যাদার মূর্ত প্রতীক। মানব সভ্যতা সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে এ ভূখণ্ডটি বিজয়ী শক্তির মাথার মুকুট। বলা হয়ে থাকে, ফিলিস্তিন ভূখণ্ড যার অধিকারে থেকেছে সেই পরাশক্তির খেতাব অর্জন করেছে। আর যে হারিয়েছে সে লাঞ্ছনার আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, সারা বিশ্ব তাকে অবজ্ঞার পাত্র বানিয়েছে। ঠিক আজ যেমন মুসলিম জাতির অবস্থা। তাই এ জাতির আত্মমর্যাদা ফিরে পেতে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমির পূর্ণ দখল একান্ত জরুরি। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক মুসলিম নাগরিকের রয়েছে বিশেষ কর্তব্য।

সারা বিশ্বের মুসলিম মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ফিরে পাবার আকাঙ্খা সৃষ্টি করার ব্যবস্থা করা। ইসরায়েল কর্তৃক নির্মম হত্যাকাণ্ডগুলোর ছবি ও ভিডিও ফুটেজসমুহ অধিক পরিমাণে প্রচার করা যাতে মুসলিম জনগোষ্ঠী তাদের দুর্দশার অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে। সেমিনার সিম্পোজিয়াম ও জুমার খুতবায় জোরালো বক্তব্য রাখা। নতুন প্রজন্মকে ফিলিস্তিনের মুক্তির বিষয়ে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গড়ে তোলা। এ ভূখণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন গান,  ভিডিও, গেমস ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা। বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে গল্প, নাটক, রচনা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। সোস্যাল মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সরব থেকে মুসলমানদের চেতনা জাগ্রতকরণে সর্বদা ভূমিকা রাখা।

ফিলিস্তিন পুণঃগঠনে অর্থের যোগান দিতে পাড়া মহল্লায় যুব সংগঠন তৈরি করা। মুসলমানদের কুরআন হাদিস সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়েছে। নিজেদের উপর আস্থা না থাকার ফলে সকল স্থানে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ হাজারের অধিক নারী শিশু ও পুরুষ শহীদ হয়েছেন, ধ্বংস হয়েছে যোগাযোগ অবকাঠামো, ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত, হাসপাতাল, গির্জাসহ অসংখ্য স্থাপনা। অর্থনৈতিক অবরোধ, ক্রসিং বন্ধ করা, খাদ্য বস্ত্র ও বাসস্থান ধ্বংস, যুবক সম্প্রদায়ের শাহাদাত বরণ ও নারীদের বিধবা হওয়ার ফলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ সময় বিশ্বের মুসলমানদের  উচিত এ জনপদের জনগণকে সর্বোতভাবে সাহায্য করা। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,  যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে জিহাদকারী কোন যোদ্ধাকে যুদ্ধের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করলো,  সেও যেন জিহাদ করলো (বুখারী-২৮৪৩)। হযরত আব্বাস রাঃ বলেন,  হজ্জ ও জিহাদের ক্ষেত্রে এক দিরহামকে সাতশ গুণ বাড়িয়ে প্রতিদান দেওয়া হবে।

ইহুদি ও ইহুদি পণ্য বয়কট করা মুসলিম জাতির একান্ত কর্তব্য হয়ে গেছে। ইহুদিদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কুরআনে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,  ইহুদি ও খ্রিস্টানদের তোমরা বন্ধু রুপে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু ( মায়েদা-৫১)

বর্তমান বৈশ্বিক আবহে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অধিকাংশ  ইহুদিদের দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত। বিশ্ব চলাচল ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সকল জায়গায় রয়েছে শক্তিশালী অবস্থান। বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চাবিকাঠি তাদের হাতে। এসব অর্থ বিশ্বের সর্বাধিক জনগোষ্ঠীর সম্প্রদায় মুসলমানদের কাছ থেকে প্রাপ্ত। সেক্ষেত্রে তাদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে সম্মিলিত রূপরেখা তৈরি করা জরুরি। মুসলিম জনগোষ্ঠী সচেতন হলেই কেবল তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কারণ বিশ্বের মোট প্রাকৃতিক সম্পদের ৭০ শতাংশের মালিক মুসলিম প্রধান দেশসমূহ। তেল, গ্যাসসহ বিশ্ব পরিচালনার সকল উপাদান এ জাতির হাতে সীমাবদ্ধ। অতএব শুধুই প্রয়োজন সুদৃঢ় সিদ্ধান্তের।

মুসলমানদের বিজ্ঞান মনস্ক হওয়া একান্ত জরুরি। মুসলিম জাতির হাতেই আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম, অথচ তাদের গবেষণা আজ তাদেরই বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে, আজকের আধুনিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বাগদাদের গবেষণাগার থেকে চুরি করা।  ইসরায়েলের আধুনিক অস্ত্রের জবাব অত্যাধুনিক অস্ত্রের মাধ্যমে দেওয়ার জন্য তৈরি হতে হবে। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন, তোমরা কাফিরদের মোকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সুসজ্জিত অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত রাখবে। যা আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের ভয় দেখাবে ( আনফাল-৬০)। সেক্ষেত্রে অস্ত্র গবেষণাগার থেকে শুরু করে সকল গবেষণা বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি।

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সাধন এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র গুলো সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে শতধা বিভক্ত। ধর্মীয় বিভক্তি এ অনৈক্যের অনলে ঘিয়ের কাজ করছে, হিংসার দাবানল ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর এ বিভক্তিকে আরো প্রকট করছে পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে মুসলিম রাষ্ট্রনেতারা ভ্রাতৃঘাতি কর্মপরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সৌদি -ইরান বৈরী সম্পর্ক। ফলে সকল স্থানেই অনৈক্যের জেরে মার খাচ্ছে মুসলমান। অথচ রাসুলুল্লাহ সাঃ সমগ্র মুসলিম জাতিকে একটি দেহের সাথে তুলনা করেছেন। যে কোন অন্যায়, অত্যাচারও নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুসলিম শাসকরা ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। 

হিন্দুস্তানের রাজা দাহিরের নারী নির্যাতনের চিঠির জবাবে সুদূর আরব ভূখণ্ড থেকে ছুটে এসেছিলেন মুহাম্মদ বিন কাসিম। পরবর্তীতে শুধু রাজা দাহিরের রাজ্যই নয়, গোটা ভারত বর্ষের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল মুসলমানরা। উপমহাদেশের উপর বইয়ে দিয়েছিলেন শান্তির সুবাতাস।

মুসলিম রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার সাধনে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে এ সকল দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন,,চীন, ফ্রান্স ও ভারতের সেবাদাসরা। যারা নামকাওয়াস্তে মুসলিম নামধারী হলেও এ সকল রাষ্ট্র প্রধানগণ সমস্ত কর্মকাণ্ড তাদের নির্দেশনা  মোতাবেক পরিচালনা করে।  এভাবে জনগণকে রাষ্ট্রের সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে থাকে।  মসনদ পাকাপোক্ত করতে গুম, খুন, জুলুম, নির্যাতন, হামলা মামলা কোন কিছুই বাদ দেন না। সেজন্য দেশের জনগণের রাষ্ট্রের নিকট যে সকল অধিকার রয়েছে তা আদায়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যেখানে সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেখানে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া আবশ্যক।  গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে স্বৈরতন্ত্রের রাজপ্রাসাদ ভেঙে পড়তে বাধ্য। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে ঐক্য বদ্ধ সংগ্রাম এক দেশের সংগঠন অপর দেশের সংগঠনকে সহযোগিতা করার নীতি।  আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমরা ভালো কাজে একে অপরকে সাহায্য কর; পাপাচারে একে অপরের পরিপূরক হয়ো না ( মায়েদা-২)

সর্বোপরি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা ছাড়া মুসলমানদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। কেননা বিজয় একমাত্র আল্লাহর পক্ষ হতে আসে। যেমন কুরআনে এসেছে,  হে আমাদের রব; আপনি আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের ফেতনার পাত্র বানাবেন না। আর আমাদেরকে কাফের সম্প্রদায় থেকে নাজাত দিন (ইউনুস ৮৫-৮৬) সুরা কাসাসে আল্লাহ পাক বলেন,  হে আমার রব; আপনি জালিম সম্প্রদায় থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন (কাসাস-২১)। একমাত্র আল্লাহর সাহায্য্যই পারে ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে।

লেখক: আব্দুল খালেক

শিক্ষক ও কলামিস্ট

 

 

 

 

 


আব্দুল খালেক