news-details

স্মরণকালের নজিরবিহীন বন্যা, বিভীষিকাময় মানবেতর জীবন

ছবি: সংগৃহীত


দেশে রাজনৈতিক ক্রান্তিকালের অবসান না ঘটতেই স্মরণকালের নজিরবিহঅন বন্যায় দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ১২ জেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ দিশেহারা। নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ স্থানীয় জেলাগুলোতে ৭৭ উপজেলা, ৫০০ ইউনিয়নে ৯ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। যারা কোনদিকে যেতে পারছেনা। অতি অল্প সময়ে পানির মাত্রা বেড়ে যাবে তা কেউ ভাবতে পারেনি। গত ৪০ বছরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোন বন্যার লেশমাত্র দেখা যায়নি। 

জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরায় বন্যার চাপ বেশি থাকায় সীমান্তবর্তী বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে। যার ফলে ২/৩ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে বন্যার গতি তীব্রথেকে তীব্র হয়ে গেছে। নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম এলাকায় শুকনা জায়গা একদম পাওয়া যাচ্ছেনা। মানুষ এতটাই অসহায় হয়ে গিয়েছে যে, যে অবস্থায় ছিল সে পানির অবস্থা দেখে বাঁচার জন্য সাজানো সংসার, দীর্ঘদিনের প্রয়োজনীয় শখের সব জিনিস ফেলে বাঁচার তাগিদে নিরুদ্দেশ হয়ে পড়ছে মানুষ। কে কোথায় যাবেন কিভাবে বেঁচে থাকবে, কি খাবে, কোন চিন্তা নেই মানুষের। ফেনি ও নোয়াখালীতে সাধারণ মানুষের আশ্রয় বলতে কিছুকোথাও নেই। স্কুলের ভবনে, বহুতল বাড়িতে, কমিউনিটি সেন্টারে কোন রকম আশ্রয় নিয়ে দুর্গত মানুষ দিশেহারা, কোন দিগি¦দিক পাচ্ছেনা। এলাকায় ২/৩ দিন হল বিদ্যুৎ নেই, মোবাইলে যোগাযোগ করা যাচ্ছেনা। 

বিশেষ করে ফেনির অবস্থা সাংঘাতিক ভয়াবহ। আশ্রয়হীন মানুষ কোমর পানি, বুক পানি পার হয়ে আশ্রয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে এগোচ্ছে। না আছে খাবার পানি, না আছে আশ্রয় আর জীবনের একটু খাবার। সব যেন ভ‚গে গেছে। শুধু নিজের পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচার তাগিদে শহরমুখী হচ্ছে। ২/১টা বড় ভবনে আশ্রয় হলেও তেমন খাবার ও পানির অভাব। বিদ্যুৎহীন এলাকায় সীমাহীন নিদারুণ কষ্টে মানুষ শুধু বাঁচার আকুতি। বিশেষ করে শিশু ও নারী, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, সন্তান সম্ভবারা সমস্যায় আছেন। 

রাজধানী ঢাকা থেকে বিভিন্নবেসরকারী প্রতিষ্ঠান এনজিও সংস্থার সাহায্যকারী মানুষ ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে এলেও দুর্গতদের কাছে পৌছাতে পারছেনা। নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে এখনো পৌছানো যাচ্ছে তবে ফেনির স্বার্বিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। সেখানে মানুষের যে কি অবস্থা তা বলাবাহুল্য। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ভবনে আশ্রয় মিলছে কোনরকম। অনেকে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিলেও মুষলধারে বৃষ্টি থাকায়, ছোট শিশু, বৃদ্ধ বাবা-মা নিয়ে নিদারুণ কষ্টে আছে। জানা গেছে, এক তলা বাড়ি ও পানিতে ডুবে গেছে। গ্রামের কাচা ও টিনসেড আগেই ডুবেছে। অনেক জায়গায় দোতলা বাড়িও পানির নিচে। যা কোনদিন মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি। 

প্রত্যন্ত গ্রামগুলো দুর্গতদের পাশে এখনো ত্রাণ সামগ্রী পৌছানো যায়নি। যাদের মোবাইলে চার্জ আছে, নেটওয়ার্ক আছে, তাদের কিছু হৃদয়স্পর্শীপোস্ট ফেসবুকে মাঝেমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। যারা ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত আছে, তাদের গ্রামে থাকা আত্মীয়-স্বজনের জন্য শত চেষ্টা করেও তাদের গ্রামে থাকা আত্মীয় স্বজনের জন্য শত চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারছেনা। ইতোমধ্যে ফেনি, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটির সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

তারপরও প্রশাসন যথাযথ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সহযোগীতার জন্য। আর্মি, নৌবাহিনী, বিডিআর, আনসার সহ প্রশাসনের সকল পর্যায়ে থাকা শ্রেণীপেশার মানুষ দেশের এ দুর্যোগ কালে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে  বিভিন্ন এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে সহযোগীতার হাত বাড়ালেও তা পর্যাপ্ত নয়। অনেক এলাকায় মানুষ এখনো কোন ত্রাণ পাননি। খাবার পানি ও স্যালাইনের অভাবে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পানির তীব্র গতিতে স্রোতের তোড়ে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। সংখ্যা সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছেনা। তবে ২০ জন মতো বলা হয়েছে। 

যারা স্রোতের তোড়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে , তাদের সঠিক হিসাব মিলানো দায়। বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষ তাদের সহায় সম্বল সব হারিয়ে সর্বহারা হয়ে রাস্তার পাশেও আশ্রয় নিয়ে নিয়েছে। এলাকার আমন ফসল, গবাদী পশু হাস মুরগী, সব্জি খেত সহ সবকিছু হারিয়েছে অবলীলায়। নিজেদের সম্পদ হারানো দুঃখ কষ্ট আর আশ্রয়হীন অনিষ্টতার জীবন এখন মানুষের। 

বৃদ্ধ পিতামাতা ও শিশু সন্তানকে একটু বিশুদ্ধ পানি আর খাবারের জন্য শুধুই হাহাকার আর অপেক্ষার পালা। এ যেন কেয়ামতের ডাক। ১ দিন আগেও জানেনা তাকে ১ কাপড়ে বাঁচার তাগিে বেরিয়ে পড়তে হবে। বিপদের ডাকে সাড়া দিয়ে সোনার সংসার ত্যাগ করে অনিশ্চয়তার দুর্গম পথে জলাশয়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে অজানার উদ্দেশ্যে। পরিস্থিতি কোনরকম নিয়ন্ত্রণে আসছেনা। 

পত্রিকান্তরে এবং টেলিভিশনের সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে, বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির জন্য ভারতের মোদী সরকার দায়ী। পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ এটা। ভারতের সাথে সীমান্তবর্তী ২৭টি নদী রয়েছে। যা ভারত সরকার সংশ্লিষ্ট নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে শুষ্ক মৌসুমে পানি বাধ দিয়ে রাখে। আবার বর্ষা মৌসুমে বাঁধ খুলে দিয়ে বন্যায় ভাসিয়ে দেয়। অর্থাৎ, এক সময় মরুভূমি, আরেক সময় বন্যায় ভাসিয়ে এদেশকে ধ্বংস করতে চায়। 

মোদি সরকার সম্প্রতি কালে ফ্যাসিস্ট মাফিয়া শেখ হাসিনাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এ জাতীয় নিন্দনীয় কাজ ভারত দীর্ঘদিন করে আসছে। সম্প্রতি কালে ভারত যে সমস্ত অন্যায় অপরাধ ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, তা বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে একদম ঠিক করছেনা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সর্বস্তরের সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সংস্থাকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা দরকার। এবং সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে ভারতের এসব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করার এখনই মোক্ষম সময়।


অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ