news-details

লেবাননে ইসরাইলের পৈশাচিক পেজার বিস্ফোরণে হতবাক বিশ্ব

ছবি: সংগৃহীত।


মধ্যপ্রাচ্যের দেশ  লেবাননের শক্তিশালী ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের ওপর তারবিহীন ছোট ডিভাইস পেজারের মাধ্যমে স্মরণকালের সবচেয়ে পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইল।  মঙ্গলবারের  (১৭ সেপ্টেম্বর) এই হামলায় ১২ জনের প্রাণহানি ও অন্তত ৩ হাজার জন আহত হয়েছেন। লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এই পেজার বিস্ফোরণের পেছনে দায়ী। 

ইসরাইলের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ন্যাক্কারজনকভাবে হিজবুল্লাহর পেজার নেটওয়ার্কে হামলা চালিয়ে একসঙ্গে তিন সহস্রাধিক মানুষকে আহত করায় হতবাক বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ। এই  ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পেজার বিস্ফোরণের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে হিজবুল্লাহ। ইসরাইলের বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ারও অঙ্গীকার করেছে তারা। আজ বুধবার এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি বলেছে, প্রাণঘাতী পেজার বিস্ফোরণের ঘটনা ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চালিয়ে নেওয়ার দৃঢ়তাই কেবল বাড়াবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটায় এ নিয়ে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর।

তবে এ বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। সাধারণত বিদেশের মাটিতে চালানো অভিযানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে ইসরাইল।

পেজার কী? 

পেজার হলো একটি তারবিহীন যোগাযোগের ডিভাইস। এটি দিয়ে বার্তা আদানপ্রদান করা যায়। পেজার নামের এই ডিভাইসটি মোবাইল ফোনের চেয়েও ছোট। এতে ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয় না।

মোবাইল ফোন সহজলভ্য হওয়ার আগে পেজার ব্যবহারের চল ছিল। তখন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যখাতে এটির ব্যবহার দেখা যেত। পেজার দুই ধরনের হয়। একটির মাধ্যমে কেবল বার্তা পাওয়া যায়।

আরেকটির মাধ্যমে বার্তা পাওয়া এবং পাঠানো—উভয়ই করা যায়। ২০০০ সালের পর মোবাইল ফোনে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ার পর পেজারের ব্যবহার একেবারেই নাই হয়ে যায়।

তবে চলতি বছরের শুরুতে হিজবুল্লাহ ব্যাপকভাবে পেজার ব্যবহার শুরু করে। কারণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে দখলদার ইসরাইলিরা তাদের সহজেই ট্র্যাক করতে পারত। এ কারণে নেটবিহীন পেজার ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে তারা। মঙ্গলবার লেবাননে হামলার পর পেজারের ব্যবহারের বিষয়টি আবার নতুন করে সামনে চলে এসেছে।

সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ অ্যারাবিয়া জানিয়েছে, যেসব পেজার বিস্ফোরিত হয়েছে সেগুলো পাঁচ মাস আগে লেবাননে আসে। এই ডিভাইসগুলো কোনোভাবে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নিয়ন্ত্রণে যায়। এরপর তারা এগুলোতে অতি-উচ্চ বিস্ফোরক স্থাপন করে। এরপর সেগুলো লেবাননে পাঠায়। তাদের পরিকল্পনা ছিল সুযোগ বুঝে এসব পেজারে বিস্ফোরণ ঘটানো।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার পেজারগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দখলদার ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা। পেজারের মাধ্যমে চালানো হামলায় লেবাননে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন।

কখন কোথায় বিস্ফোরণ ঘটল

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) লেবাননের স্থানীয় সময় বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানী বৈরুতসহ দেশটির আরও কয়েকটি এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, তারা দেখেছেন, লোকজনের পোশাকের পকেট থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এরপর ছোট ছোট বিস্ফোরণ হতে থাকে। বিস্ফোরণের শব্দ ছিল আতশবাজি ও বন্দুকের গুলির শব্দের মতো।

সিসিটিভি ফুটেজের একটি ক্লিপে দেখা গেছে, দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তির ট্রাউজারের পকেটে কিছু একটা (পেজার) বিস্ফোরিত হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, প্রথম বিস্ফোরণের পর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে।

বিস্ফোরণের পরপরই আহত ব্যক্তিরা লেবাননের বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় করতে থাকেন।

ঘটনার পর বিশ্লেষকেরা নানা মত দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, হ্যাক করে পেজারের ব্যাটারিগুলোকে হয়তো অতিরিক্ত গরম করে দেওয়া হয়েছিল, আর তাতেই বিস্ফোরণ ঘটে।

তবে অন্য বিশেষজ্ঞদের মত হলো, এ ধরনের কিছু ঘটেনি। বিস্ফোরণের যে ভিডিও দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, এটি ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে সৃষ্টি বিস্ফোরণ নয়।

কেউ কেউ বলছেন, পেজার বিস্ফোরণের এই ঘটনার সঙ্গে সরবরাহ শৃঙ্খলের কোনো একটা ঘাপলা থাকার যোগসূত্র আছে। হতে পারে উৎপাদন বা পরিবহনের সময় পেজারগুলোয় কোনো ধরনের গড়বড় করে দেওয়া হয়েছে। আর এমনটা ঘটার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন তারা।

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধাস্ত্রবিষয়ক সাবেক এক বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, যন্ত্রগুলোর প্রতিটির ভেতর সামরিক মানের ১০ থেকে ২০ গ্রাম করে উচ্চ বিস্ফোরক রেখে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তার ধারণা, কোনো যন্ত্রে কোনো ভুয়া ইলেকট্রনিক উপকরণের ভেতর বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল।

হতাহত কারা

হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে হিজবুল্লাহর দুই পার্লামেন্ট সদস্যের দুই ছেলে আছেন। এ ছাড়া হিজবুল্লাহর এক সদস্যের মেয়েও নিহত হয়েছেন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে লেবাননে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত মোজতবা আমানিও আছেন। ইরানি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দেখা দিয়েছে।

সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এই বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হননি।

লেবাননের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক মন্ত্রী ফিরাস আবিয়াদ বলেছেন, আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই হাত ও মুখে আঘাত পেয়েছেন।

মন্ত্রী আরও বলেছেন, চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের মধ্যে বয়স্করা যেমন আছেন, তেমনি কম বয়সীরাও আছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসাকর্মীও আছেন। আহত ব্যক্তিদের মুখে, বিশেষ করে চোখে আঘাত আছে। কারও কারও হাতে আঘাত আছে। কারও হাত কেটে ফেলতে হয়েছে।

লেবানন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ সিরিয়াতে একই ধরনের বিস্ফোরণে ১৪ জন আহত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি পর হিউম্যান রাইটস এই তথ্য জানিয়েছে।

দায়ী কে

লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ দায় স্বীকার করেনি। তবে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ও হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এই ঘটনার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করা হয়েছে।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, বিস্ফোরণের এই ঘটনা তার দেশের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন। সব দিক থেকেই এটা অপরাধ।

এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, এই বিশ্বাসঘাতক ও অপরাধী শত্রুপক্ষ অবশ্যই এই অপকর্মের জন্য ন্যায্য শাস্তি পাবে, তারা সেটা আশা করুক বা না করুক।

ইসরাইলি কর্মকর্তারা অবশ্য এসব অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে এই বিস্ফোরণের পেছনে যে ইসরাইলেরই হাত আছে, এ ব্যাপারে বেশির ভাগ বিশ্লেষক একমত।

যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিমন ম্যাবন বিবিসিকে বলেন, নিজেদের লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান শনাক্তের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের নজির ইসরাইলের আছে। তবে লেবাননের ঘটনাটিকে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান চাথাম হাউসের বিশেষজ্ঞ লিনা খাতিব বলেন, লেবাননের ঘটনাটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, হিজবুল্লাহর যোগাযোগ নেটওয়ার্কের গভীরে অনুপ্রবেশ করেছে ইসরাইল।

হিজবুল্লাহ কেন পেজার ব্যবহার করে

যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে পেজারের ওপর নির্ভর করে হিজবুল্লাহ। প্রযুক্তিগত দিক থেকে এই যন্ত্র খুব একটা উন্নত নয়। ইসরাইল যেন হিজবুল্লাহর সদস্যদের অবস্থান শনাক্ত না করতে পারে, মূলত তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই তারা এই যোগাযোগযন্ত্র ব্যবহার করে থাকে।

পেজার হলো এক ধরনের বেতার টেলিযোগাযোগ যন্ত্র। যন্ত্রটি আলফানিউমেরিক মেসেজ গ্রহণ করে। যন্ত্রে এই মেসেজ দেখা যায়।

হিজবুল্লাহর সদস্যদের জন্য মুঠোফোন ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকির কারণে তাঁরা অনেক আগে থেকেই মুঠোফোন ব্যবহার বাদ দিয়েছে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী  সংগঠন হামাসের নেতা ইয়াহিয়া আইয়্যাশ বোমা বানানোর ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ইসরাইলি গুপ্তহত্যার শিকার হন। তার হাতে থাকা ফোনটি বিস্ফোরিত হয়ে তিনি নিহত হন। মূলত এই ঘটনার পর মুঠোফোন ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যায় ইসরাইলবিরোধী স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলো।

তবে হিজবুল্লাহর এক সদস্য বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, পেজারের ব্যবহার তাদের কাছে নতুন। সংগঠনটির সদস্যরা আগে পেজার ব্যবহার করতেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক বিশ্লেষক এমিলি হার্ডিং বলেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙে যেভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো হলো, তা হিজবুল্লাহর জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। ঘটনাটির মাত্রা ব্যাপক। এই ঘটনা শুধু শারীরিক ক্ষয়ক্ষতিই ঘটায়নি, ঘটনাটি হিজবুল্লাহর গোটা নিরাপত্তাব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে।

তাইওয়ানে তৈরি হয় পেজার 

লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে ইসরাইলই পেজারগুলোর (যোগাযোগযন্ত্র) ভেতর বিস্ফোরক লুকিয়ে রেখেছিল। গতকাল মঙ্গলবার বিস্ফোরণ ঘটানোর মধ্য দিয়ে অভিযানটি চালিয়েছে তারা। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কয়েকজন মার্কিন ও অন্য কর্মকর্তা অভিযান সম্পর্কে এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন।

নিউইয়র্ক টাইমস যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের কয়েকজন বলেন, তাইওয়ানের গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানি থেকে পেজারগুলো কিনেছিল হিজবুল্লাহ। তবে লেবাননে পৌঁছানোর আগেই সেগুলোতে গড়বড় করে দেওয়া হয়েছিল। পেজারগুলোর বেশির ভাগই ছিল কোম্পানির এপি৯২৪ মডেলের। তবে গোল্ড অ্যাপোলোর আরও তিনটি মডেলের পেজারও ওই চালানে ছিল।

ওই কর্মকর্তাদের দুজন বলেন, প্রতিটি পেজারের ব্যাটারির পাশে এক থেকে দুই আউন্স পরিমাণ বিস্ফোরক রেখে দেওয়া হয়েছিল। দূর থেকে যেন তা বিস্ফোরিত করা যায়, তা নিশ্চিত করতে সেখানে একটি সুইচও লাগিয়ে দেওয়া হয়।

দুই কর্মকর্তা বলেন, লেবাননে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে পেজারগুলোয় একটি বার্তা এসেছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, বার্তাটি হিজবুল্লাহর নেতার কাছ থেকে এসেছে। আসলে ওই বার্তা বিস্ফোরকগুলোকে সক্রিয় করে তুলেছিল।

তিনজন কর্মকর্তার মতে, বিস্ফোরণের আগে কয়েক সেকেন্ডের জন্য যন্ত্রগুলোয় যেন সংকেত (বিপ) বেজে ওঠে, সে রকম করে তা ঠিক করা হয়েছিল।

গতকালের এ হামলার পরিকল্পনার জন্য হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। তবে এ অভিযান সম্পর্কে তাদের ধারণা কী, সে সম্পর্কে খুব একটা বিস্তারিত বলা হয়নি। ইসরায়েল হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এর পেছনে নিজেদের দায়ও স্বীকার করেনি তারা।

হামলার ফুটেজ খতিয়ে দেখে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক স্বাধীন ধারার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিস্ফোরক উপকরণের কারণেই যে ওই বিস্ফোরণ হয়েছে, তা নিশ্চিত।

সফটওয়্যার কোম্পানি উইথসিকিউরের গবেষণা বিশেষজ্ঞ এবং ইউরোপোলের সাইবার অপরাধবিষয়ক উপদেষ্টা মিকো হাইপোনেন বলেন, ‘এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য এই পেজারগুলোয় সম্ভবত কোনো উপায়ে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। বিস্ফোরণের আকার এবং শক্তি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এটি কেবল ব্যাটারিজনিত বিস্ফোরণ ছিল না।’

একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, তাইওয়ানের গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানি থেকে তিন হাজারেরও বেশি পেজার কেনা হয়েছিল। হিজবুল্লাহ পুরো লেবাননে তাদের সদস্যদের কাছে পেজারগুলো বিতরণ করেছিল। কিছুসংখ্যক পেজার ইরান ও সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর মিত্রদের কাছেও পৌঁছেছিল। যে পেজারগুলো চালু ছিল এবং বার্তা গ্রহণ করছিল, সেগুলোই ইসরায়েলের হামলার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কয়েকজন কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ বলেছেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নসরুল্লাহ যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেলফোনের ব্যবহার কঠোরভাবে সীমিত করেছিলেন। কারণ, তিনি মনে করেন, সেলফোনে ইসরাইলি নজরদারি হওয়ার ঝুঁকি আছে।

আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নসরুল্লাহর ওই আদেশের পর হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা যোগাযোগের জন্য পেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করতেন।

কখন ওই পেজারগুলো অর্ডার করা হয়েছে এবং কখন সেগুলো লেবাননে পৌঁছেছে, সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


আন্তর্জাতিক ডেস্ক