সংগৃহীত ছবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অর্থনীতি বিভাগ ছাত্রলীগ সহ-সভাপতির পক্ষ নিয়ে এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শ্রীকান্ত বাউল।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে তিনটায় জবির নোঙর বাসে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৭ ব্যাচের কামারুজ্জামান কায়েস। তিনি বর্তমানে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তসূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মৃদুল হাসান। এসময় তাকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ আরো অনেকেই তাকে ক্যাম্পাসে ঘিরে ধরেন। মৃদুলের বিরুদ্ধে এর আগে বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হুমকি-ধামকি দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু আইন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শ্রীকান্ত ছাত্রলীগ নেতা মৃদুলকে শেল্টার দেয়। তিনি মৃদুলকে ফুলের টোকা দিতেও নিষেধ করেন। এ সময় শ্রীকান্ত কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করার ও দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন।
ছবি: সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরে অভিযুক্ত শ্রীকান্ত বাউল
জানা যায়, শ্রীকান্ত ছাত্রলীগের ওই নেতার পক্ষ নিলে সেখানে আরো কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী জড়ো হয়। এতে শ্রীকান্তকে ‘দালাল’ বলে অভিহিত করেন শিক্ষার্থীরা। এতে অভিযুক্ত শ্রীকান্ত উত্তেজিত হলে সমাধানে জন্য জবি শিক্ষক লাউঞ্জে মীমাংসার জন্য বসেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দীন। এ সময় ভুক্তভোগী কায়েস মোবাইলে ভিডিও শুরু করলে তার উপর তেড়ে আসেন শ্রীকান্ত।
প্রত্যক্ষদর্শী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, কায়েস ভিডিও করায় তার উপর উত্তেজিত ছিল শ্রীকান্ত। কায়েস সেখান থেকে চলে যাওয়ার পরও শ্রীকান্ত তাঁকে খুঁজতেছিল। পরে জানতে পারি, কায়েসকে বাস থেকে মারা হয়েছে।
ভুক্তভোগী কামারুজ্জামান কায়েস বলেন, আমি বাসে চড়ে মুরগী টোলা যাচ্ছিলাম। শ্রীকান্ত বাসের ভিতরে আমাকে জিজ্ঞেস করে- কেন তুই ভিডিও করলি? তুই ভিডিও করার কে? আমি বলি, ভিডিও এমনিতেই করছিলাম। পরক্ষনেই সে আমাকে মারধর করে। চোখে কিল ঘুসি শুরু করেন। কপাল কেটে যায়। বাসের সিনিয়ররা আসা শুরু করে। তাদের উপরও সে ক্ষিপ্ত হয়। পরে আমি ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে যাই। এখন চিকিৎসা নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শ্রীকান্ত বলেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি মারছি। সে ও আমাকে মারছে। আমার ভুল ছিল, আমি তার হাত থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিতে গিয়েছি। কিন্তু সে দিতে চাচ্ছিল না। পরে সে আমাকে ধাক্কা দেয়। আমিও তাকে জোরে ধাক্কা দেই। সে পড়ে যায়। সে আঘাত করলে আমিও তাকে আঘাত করি। তার কপাল কেটে যায়। পরে মুরগীটোলায় বাস থামিয়ে বড় ভাইয়েরা ঝামেলা মিটিয়ে দেয়।
মৃদুলের পক্ষে গিয়ে কথা বলার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগ করতাম না। কিন্তু অনেক ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি দেখেছি, মৃদুল কোনো উগ্র কাজে ছিল না। আমি ছাত্রদের বলেছি, যদি সে অন্যায় করে তার বিচার হবে। অন্যত্থায় তার হাতে ফুলের টোকাও দেওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দীন বলেন, একটা ছেলেকে মারার বিষয়টা জেনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর নেই। প্রক্টর আসলে বিচার পক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে সমাধান করা যাবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: