সংগৃহীত ছবি
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে সাংবাদিকসহ ৫ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ব্যানারে একটি গ্রুপ সংবাদ সম্মেলন করতে আসলে আরেকটি গ্রুপ সেখানে হামলা করে সংবাদ সম্মেলন পণ্ড করে দেয় এবং সমিতির সদ্য সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে মারধর করতে করতে তুলে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সেখানে স্টার লাইন পরিবহনের আলাউদ্দীন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্যাডার মহাখালী টার্মিনালের হিরু, এনা পরিবহনের খন্দকার এনায়েতুল্লাহসহ ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট সাইফুল-বাতেন গং আয়োজকদেরকে তুলে নিয়ে গেছে এবং অন্যদেরকে প্রচুর মারধর করেছে। হামলাকারীরা সাংবাদিকদের সাথেও খুবই বাজে আচরণ করে। ঘটনার ভিডিও করায় চারজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে এবং তাদের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কাউন্সিলর ও সাংবাদিক নেতা ইসমাইল আহসান। তিনি বলেন, আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো জায়গায় এরুপ আক্রমণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই সরকারের কাছে। আমরা সাংবাদিক সংগঠনগুলো এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের কাছে এর জোর বিচার দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকদের অন্যতম বিকাশ পরিবহন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম সৌরভ হোসেন বলেন, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাইফুল-বাতেনের প্রেরিত শতাধিক লোক হঠাৎ প্রেসক্লাবে এসে হামলা চালিয়ে সংবাদ সম্মেলন পণ্ড করে দেয়। এসময় তারা কয়েকজনকে আহত করে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এনায়েত উল্লার পরিবর্তে সাইফুল ইসলামের লোকজন সারাদেশে সড়ক পরিবহনে চাঁদাবাজি করছে। তার বিরুদ্ধে কতিপয় মালিক আলাদা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রেক্ষিতে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই হামলা চালিয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো মর্যাদাপূর্ণ স্থানে এমন ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের মূল বক্তব্য সাংবাদিকদেরকে সরবরাহ করেন আযোজকরা। এতে বলা হয়েছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বীর শহীদদের এবং ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অসংখ্য আহত ও প্রায় ১৫০০ ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বৎসরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হয়েছে। ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফল হিসাবে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকারের ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যান্য সকল প্রকারের আন্দোলনে প্রথমেই আঘাত আসে দেশের সড়ক পরিবহণের সাধারণ মালিক ও শ্রমিকদের উপর। সাধারণ মালিক ও শ্রমিকরা তখন জীবন-জীবীকার সংকটে নিপতিত হয়ে থাকে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে গনপরিবহন মালিকদের অধিকার আদায়ের সংগঠন “ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি” সেই পুরাতন চাঁদাবাজ সাইফুল-বাতেন গং নতুনভাবে অব্যাহত চাঁদাবাজীর রাজত্ব কায়েম করতে সমিতির অফিসের তালা ভেঙ্গে অবৈধভাবে কার্যালয়টি দখল করে।
তারা নিজেরাই মন-মর্জিমত লোকজন অন্তর্ভুক্ত করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনা করেছে, যার ফলে সাধারণ মালিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। আমরা মালিকরা বিস্মিত যে, কিভাবে-কোন অনুমোদন ছাড়া বারবার সাইফুল-বাতেন এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময় খন্দকার এনায়েত-সবুর গং সমিতির অফিসে বসে বানোয়াট কমিটি তৈরী করে একটি রেজিষ্টার্ড সংগঠনের দাবীদার বলে প্রচার করে? তারা উভয় গ্রুপ হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য এই সেক্টরে ত্রাস সৃষ্টি করে এবং মালিকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করা।
আমরা লক্ষ্য করছি শ্রম দফতরের রেজিষ্টারের কোন অনুমোদন না নিয়ে অবৈধ এই সিন্ডিকেট বিভিন্ন স্টোক হোল্ডারের নিকট নিজেদেরকে মালিক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে এবং পরিবহন মালিকদের নিকট হতে চাঁদা আদায় করছে। অদৃশ্য একটি শক্তি এই সিন্ডেকেটকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে আসছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই সেবা খাতের প্রতি সরকার কার্যকর দৃষ্টিপাত করছেন না, অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়কে এসব পাল বদলের চাঁদাবাজদের বিষয়ে নজর রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। পরিবহণ ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি ক্রয়ের পর নানা বাধা-বিঘ্ন এবং প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। বিগত সময়ে যে কোন ধরনের অস্থিরতা কিংবা সহিংসতার প্রথম লক্ষ্য হয় সড়ক পরিবহণের যানবাহন।
আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্রমাগত লুটপাট হয়ে আসা অর্থনীতিতে যাত্রী সেবা প্রদান করতে গিয়ে গাড়ি প্রতি উপার্জন উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে চলমান চাঁদাবাজি ’বোঝার উপর শাকের আঁটি’ হয়ে সড়ক পরিবহণ খাতের মালিক-শ্রমিকদের টুঁটি চেপে ধরেছে। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, তাই আমরা সোচ্চার হতে বাধ্য হয়েছি।
উল্লেখ্য যে, আমরা মালিকগন চাঁদাবাজদের তথা মালিক সংগঠনের স্বঘোষিত কমিটির কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করলে তারা গুন্ডা বাহিনী দিয়ে আমাদের গাড়ী ভাংচুর করে, রাস্তায় চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, এমনকি স্থায়ীভাবে গাড়ী বন্ধ করে দিতে বাধ্য করে। তাই আমরা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে কঠিন উদ্যোগ কামনা করছি।
অতিতে পরিবহন সেক্টরের অনাচার, বিশৃংখলা ও চাঁদাবাজী? দীর্ঘদিন অর্থাৎ যুগের পর যুগ আমরা পরিবহন সেক্টরের অনাচার, বিশৃংখলা ও চাঁদাবাজী ইত্যাদি দেখতে দেখতে যেন অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি। ১৯৮৪ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমল থেকে এই পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনগুলি সরকার দলীয় চাঁদাবাজদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। সৈরাচার এরশাদ আমলে শ্রমিক সংগঠন রেজিঃ নং-১৭৭৬ (হলুদ কার্ড) এর অত্যাচার পুরাতন মালিক শ্রমিক কেউই এখনো ভুলতে পারেন নাই।
১৯৯১-১৯৯৬ সালে মেয়াদকালে সাইফুল আলম ও আব্দুল বাতেন যথাক্রমে সাধারণ সম্পাদক ও কার্য্যকরী সভাপতি হিসাবে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির অফিস দখল করে বসে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার সাথে সাথে মকবুল-খন্দকার এনায়েত একই কায়দায় কমিটি ঘোষনা করে চাঁদাবাজি ও সরকারী কর্মকান্ডে অংশগ্রহন শুরু করে। তখনো মালিকদের কোন ম্যান্ডেট ছাড়া তারা স্বঘোষিত নেতা সেজে যান এবং একটি কমিটি পরিচালনা করতে থাকেন।
২০০১ সালে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়ার সাথে সাথে সেই সাইফুল-বাতেন গং স্বঘোষিত অবৈধ সাধারণ সম্পাদক ও কার্যকরী সভাপতি হয়ে একটি কমিটি ঘোষনা করে চাঁদাবাজী ও সরকারী কর্মকান্ডে মালিকদের প্রতিনিধিত্ব শুরু করেন। মালিকদের কল্যানমুলক কোন কর্মকান্ড তারা করেননি। ২০০২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজী বন্ধ করার জন্য সেনাবাহিনীর মাধ্যমে “অপারেশন ক্লিনহার্ট” পরিচালনা করেন, তখন তারা সাইফুল-বাতেন সেনাবাহিনীর গ্রেফতার হতে রক্ষা পেতে পালিয়ে বেড়ান। আবার ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে খন্দকার এনায়েত-সবুর গং একই কায়দায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অফিস দখল করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বিগত সাড়ে ১৫ বছর চাঁদাবাজি করতে করতে গনপরিবহন সেক্টরকে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে নিয়ে আসে।
২০২৪ এর স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বৈরাচার পতনের সপ্তাহ যেতে না যেতেই সেই প্রখ্যাত চাঁদাবাজ সাইফুল-বাতেন গং আবারও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অফিস দখল করে নিজেদের যথাক্রমে সাধারণ সম্পাদক-সভাপতি পদবী জানিয়ে একটি তথাকথিত কমিটি ঘোষণা করে। কখনও কোন মালিকের মতামত বা ভোটের অধিকার তারা দেয়নি ও প্রয়োজনীয়তা আছে বলেও তারা স্বীকার করেনা। নিজেরা একটি কমিটির তালিকা বানিয়ে শ্রম মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়ে কর্মকাণ্ড শুরু করে দেয়। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কতিপয় কর্মকর্তাগনের প্রশ্রয়ে এসব চাঁদাবাজরা বৈধতার সুযোগ নিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করে।
আমাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় উক্ত কমিটিকে অনুমোদন না দিতে মৌখিক নির্দেশনা প্রদান করেন, যার ফলে শ্রম-মন্ত্রনালয়ের অধিদপ্তর তা অনুমোদন করে নাই, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাইফুল-বাতেন গং সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিসে প্রেরিত চিঠিতে নিজেদেরকে অবৈধ পদ-পদবী ব্যবহার করে বিভিন্ন সভায় উপস্থিত হয়, আমরা এ জাতীয় কর্মকান্ডে যাতে এসব চাঁদাবাজদেরকে আহবান করা না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিরত থাকার জন্য বিশেষ অনুরোধ করছি।
এভাবে যুগের পর যুগ বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সাইফুল-বাতেন আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে খন্দকার-এনায়েত গং ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি অবৈধভাবে দখল করে চাঁদাবাজি করবে, আমরা আর তা হতে দিবো না। দেশে যেমন সংস্কার চলছে তেমনি আমরা পরিবহনের এই সেক্টরে সংস্কার করে ছাড়বো ইন্শাআল্লাহ। সে বিষয়ে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সার্বিক সহযোগীতা ও ন্যায়বিচার কামনা করছি।
আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে অবহিত করতে চাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ২০১৩ সালের প্রোগ্রামে যাতে মানুষ ঢাকায় আসতে না পারে সেজন্য খন্দকার এনায়েত উল্লাহর সাথে যোগসাজস করে এই সাইফুল-বাতেন গং ফ্যাসিষ্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে গনপরিবহন গাড়ী বন্ধ করে দেয়। তার প্রতিদান হিসেবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পালিয়ে যাওয়া মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের পরিবহন ব্যবসা দখল করে এবং বিশাল অংকের মাশোহারা নিয়ে তাদের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অধীনস্থ মালিকদের পক্ষ হতে সাইফুল-বাতেন ঘোষিত কমিটি সম্পুর্ন অবৈধ ও বাতিল ঘোষনা করছি। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিকরা একটি সুষ্ঠ নির্বাচিত কমিটি উপহার পায় সেজন্য সহযোগিতা কামনা করছি।এই আহবায়ক কমিটি প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য নিয়ে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের আয়োজন করতে বদ্ধ পরিকর। সে ক্ষেত্রে আমরা আপনাদের এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা কামনা করছি।
সাইফুল-বাতেন গং দেরকে আহবান করছি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিকদের ১১৭, কাজী নজরুল ইসলাম রোডের ইউনিক হাইটস ভবনের ৪র্থ তলার অফিসটি খালি করে স্ব-সম্মানে সাধারন মালিকদের কাতারে এসে দাঁড়ানোর জন্য এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে গনতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহনের পরামর্শ প্রদান করতে।
সড়ক পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির টাকা যোগান দিতে গিয়ে যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন এবং পরিবহণ শ্রমিকদের নূন্যতম কর্মঘন্টা নির্ধারণ ও উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ব্যায় হিসাবে নির্ধারিত টাকা আদায়ের মাধ্যমে সংগঠন পরিচালনা করে সাধারণ গন পরিবহন মালিকদের সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমাদের নিকট সকল মালিকগন নিঃসংকোচে আসবেন এবং আমাদের দরজা সব সময় আপনাদের জন্য খোলা থাকবে।
চাঁদাবাজদের ন্যায় অফিসকে আয়নাঘর ও জেল খানার মত বানানো হবে না এবং গোপন কোন আস্তানা হিসেবে মালিক সমিতির অফিস ব্যবহার হবে না। মালিক সমিতির অফিসের কোন কক্ষ বন্ধ থাকবে না, সকল মালিকদের জন্য নির্ভয়ে প্রবেশের অনুমতি থাকবে। কোন স্বজনপ্রীতি থাকবে না। যানজটের সমস্যা থেকে নগরবাসী মুক্তি পেতে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট ১৪ দফা দাবী পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সাধারন মালিকদের পক্ষ থেকে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট গুরুত্বপূর্ন ১৪ দফা দাবী তুলে ধরেছেন।
দাবী সমূহ হলোঃ (১) পরিবহন সেক্টরকে ফ্যাসিস্ট সৈরাচারী হাসিনার পরিবারের আধিপত্য ধরে রাখতে ঢাকা দক্ষিনের পলাতক সাবেক মেয়র তাপসের জন্য (Dhaka Transport Coordination Authority (DTCA) গঠন করা হয়েছিলো। লাল পিতার দৌরাত্ব থেকে এই সেক্টরকে সেবা খাত হিসেবে বাঁচাতে হলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ এর মাধ্যমে অবিলম্বে (DTCA) বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে। আরটিসি কমিটি পুনর্গঠন করে প্রয়োজনীয় জনবল সংযুক্ত করতে হবে।
(২) ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অফিসে তালা ভেঙে অবৈধ অনুপ্রবেশ কারী, দখলদার ও চাঁদাবাজ সাইফুল গংদের হাত থেকে সাধারণ মালিকদেরকে বাঁচাতে হবে। খন্দকার এনায়েত উল্যাহদের ফটোকপি সাইফুল-বাতেন গংদের মতো চাঁদা বাজদের হাত থেকে সাধারণ মালিকদেরকে বাঁচাতে হবে। কোন রুটের, এমডি ও চেয়ারম্যানরা ঢাকা সড়কের নামে চাঁদা তুলতে পারবেন না।
বিনীতভাবে জানাতে চাই এটি কোন স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থা নয়, এটি হচ্ছে ছাত্র ও জনতার বিপ্লবের অর্জন করা স্বাধীনতা। কোন চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী ও দখলদারি চলবে না। আমরা অচিরেই ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কাউন্সিলরদের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করবো। কোন সিলেকশন বা রাজনৈতিক দৌরাত্ম চলবে না। সার্বিক বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
(৩) রুট পারমিট অনুমোদন পদ্ধতির পরিবর্তন আনতে হবে। রাজনৈতিক কারনে রুট পারমিট না দেওয়ার ফলে মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঢাকা সিটিতে চলমান ২০১৮ সালের পর ক্রয়কৃত সকল বাসকে রুটপারমিট প্রদান করতে হবে। প্রাথমিক নামক বিআরটিএর সৃষ্ট ঘুষ পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। চেচিস বিক্রেতা কোম্পানী গুলো বিআরটিএর অনুমোদন ছাড়া বিক্রি করতে পারবে না। কারন রুট পারমিট ছাড়া গাড়ী চলাচলের কারনে মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। রুটের সিলিং এর মধ্যে গাড়ী বাকি থাকলে অবশ্যই রুট পারমিট প্রদান করিতে হইবে। পুরাতন গাড়ীর পারমিট জমা স্বাপেক্ষে বা এর বিপরীতে নতুন গাড়ীর পারমিট দিতে হবে। রুট পারমিট সমস্যার কারনে পুলিশকে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
(৪) ঢাকা মহানগরীর আয়তন বৃদ্ধি ও জনবসতি বাড়ার ফলে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামো পরিবর্তন হওয়ায় যে সকল রুট এবং গাড়ীর মালিকগন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সে সকল রুট পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
(৫) ঢাকা মহানগরীর মধ্যে অবস্থিত সকল আন্তঃ জেলা বাস টার্মিনাল সরিয়ে দিতে হবে এবং উক্ত টার্মিনাল গুলো সিটি কর্পোরেশন এর নিয়ন্ত্রণে দিতে হবে। টার্মিনাল গুলোতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিজস্ব সিকিউরিটি গার্ডসহ সকল ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
(৬) জানজট নিরসন এবং সুষ্ঠ ট্রাফিক সিস্টেম বাস্তবায়ন করার স্বার্থে যত্রতত্র বাস স্টপেজ যাতে করতে না হয় সেক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে পর্যাপ্ত বে-লাইন করতে হবে। ট্রাফিক বিভাগ এবং সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে কমন প্লেসে যাত্রী ছাউনি করতে হবে, যেখানে মানুষ থাকে না সেখানে স্টফেজ করে কোন লাভ নেই। সিগনাল সিস্টেমে কোন ম্যানুয়াল পদ্ধতি থাকতে পারবে না। অবকাঠামো নির্মাণে যে-সব পিলার ও লুপ তৈরিতে ভূল হয়েছে সেগুলো পুনঃসংস্কার করতে হবে। জনবসতি এলাকা বিবেচনায় প্রতি ১ কিলোমিটার পরপর ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করতে হবে। উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে হয়রানি মূলক যে-সব ট্রাফিক সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে তা বাদ দিতে হবে।
(৭) সড়ক পরিবহন আইনে জরিমানার হার সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা করে আইনের পরিপূর্ণ বাস্তব প্রয়োগ ঘটাতে হবে। অপরাধ প্রবনতা শুধুমাত্র জরিমানার হার বেশি করার মাধ্যমে কমানো সম্ভব নয়, মোটিভেশনের মাধ্যমে তা করতে হবে। মামলার কমিশন সিস্টেম বাতিল করতে হবে। যত্রতত্র গাড়ির ডকুমেন্টস চেক বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন স্পীড ওয়েতে, বা স্পীড ওয়ের মুখে ঊঠা-নামার স্থানে কোন ডকুমেন্টস চেক করা যাবে না। কতিপয় ঘুষখোর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বন্ধ করতে হবে, যাদের বেশির ভাগ সময় কাজ হচ্ছে হয়রানি মূলক পদক্ষেপ নেওয়া।
(৮) ড্রাইভারদের অপরাধের কারণে কোন গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে এবং ডকুমেন্টস এর উপর মামলা করা যাবে না। লাইসেন্স এর উপর মামলা করতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন করে ড্রাইভার নিয়োগ দেওয়ার পরও গাড়ী দুর্ঘটনার স্বীকার হলে সেই ক্ষেত্রে মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না।
(৯) সকল পরিবহনকে একই ওয়ারলেস কমিউনিকেশনে নিয়ে আসতে হবে, এটির নিয়ন্ত্রণে থাকবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এবং সিটি কর্পোরেশন অথবা আরটিসি কমিটি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ট্রাফিক সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য এটির বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে। উন্নত বিশ্বে এটির ব্যবহার রয়েছে।
(১০) নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা সড়ক এলাকা সমূহকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এলোমেলোভাবে কোন চালক গাড়ী চালানোর কারনে দূর্ঘটনা গঠলে বা অহেতুক কারনে ব্যক্তি স্বার্থে কোন ট্রাফিক পুলিশ যদি কোন মামলা করে তা প্রমান করাটা সম্ভব হয় না বিধায় সিসি ক্যামেরা থাকা অবশ্যই জরুরী। আমরা খুব দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে কতিপয় পুলিশ অফিসারের কাছে পরিবহন খাতকে আর জিম্মি রাখতে দেওয়া যাবে না। জরিমানা টাকা বাড়ানোর কারনে এবং মামলার কমিশন প্রথার কারনে অনেক ক্ষেত্রে বিনা কারনে মামলা দেওয়া হয়, অবিলম্বে এধরনের তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
(১১) ঢাকা সিটিতে প্রাইভেটকারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা।
(১২) বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার থেকে টহল পুলিশের চাঁদা আদায় বন্ধ করা। ফুটপাত হকার মুক্ত ও হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
(১৩) রাস্তায় কোন গাড়ী যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে নস্ট হলে বা বন্ধ হলে তা রেকার দিয়ে সরিয়ে নেওয়ার নাম করে তা ডাম্পিং জোনে নিয়ে টাকা আদায় করার প্রবনতা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা সুশঙ্খল পুলিশকে দেখতে চাই, আর কোন নৈরাজ্য দেখতে চাই না। গাড়ী রেকার বা তুলে নিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে হবে, রেকার দিয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখার কাজে রেকারকে কাজে লাগাতে হবে।
(১৪) বিআরটিএ কে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে, বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ক্লোজ-ডোর সেবা বন্ধ করে ওপেন পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। সান্ধ্যকালীন অবৈধ আবদার সিস্টেম বন্ধ করতে হবে।
এনএনবিডি ডেস্ক: