ছবি: সংগৃহীত।
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে এক মেয়াদ বিরতির পর দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির ২৪৮ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা মাত্র দুই বার ঘটেছে।
নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পাশাপাশি রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট এবং নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। এর মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন নজিরবিহীন সুবিধাজনক অবস্থানে আসতে পারলেন। ফলে এই জয় কেবল মার্কিন রাজনীতিতেই নয়, বরং বৈশ্বিক রাজনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই বিশ্ব রাজনীতির কুশীলবরা হিসাব-নিকাশে বসে পড়েছেন। আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য—সব অঞ্চলের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা যার যার মতো করে দাবার ছক সাজাচ্ছেন। ট্রাম্পকে মাথায় রেখে শত্রুকে ঘায়েল এবং নিজেদের ফায়দা সর্বোচ্চ করার পরিকল্পনা করছেন তারা।
তবে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত—সবটা জুড়ে ছিল মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত। নির্বাচন শেষ হলেও মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু চাপা পড়েনি। তাই তো ট্রাম্পের নতুন আমলে কেমন হতে চলেছে মধ্যপ্রাচ্য নীতি, সেটাই এখন সবার মুখে মুখে ফিরছে। তিনি কি সব যুদ্ধ বন্ধ করে মধ্যপ্রাচ্য আবারও শান্তি ফেরাতে পারবেন? ইরানকে দমনের নামে এই অঞ্চলের অন্যতম মার্কিন মিত্র সৌদি আরবকে বিশেষ সুবিধা দেবেন কি?
নির্বচিত হয়েই ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তার এ ঘোষণা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। কারণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগেই তিনি তার প্রশাসন সাজিয়েছেন চরম মুসলিমবিদ্বেষী বিতর্কিত ইসরায়েলপন্থী নেতা ও কর্মকর্তাদের নিয়ে। ফলে ট্রাম্প প্রশাসন নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ কতটুকু রক্ষা করবে তা এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম দফার শাসন থেকে যদি কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায় তাহলে তিনি সম্ভবত এবারও মধ্যপ্রাচ্যকে গুরুত্ব দিয়েই কাজ করবেন। নিজের পররাষ্ট্রনীতির মূল এজেন্ডায় সংঘাতপ্রবণ এই অঞ্চলকেই সামনে রাখবেন।
২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে সৌদি আরবে যান ট্রাম্প। সৌদি আরব সফরে গিয়ে গড়েন ইতিহাস। এ ছাড়া প্রথম চার বছরে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ‘শতাব্দীর চুক্তি’ করার চেষ্টা করেন; অন্যন্য আরব দেশের সঙ্গে ইহুদি রাষ্ট্রটির একীভূতকরণ শক্তিশালী করার পাশাপাশি ইরানের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেন।
তবে এটাও সত্য ২০২১ সালে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর মধ্যপ্রাচ্য এখন অনেকটা বদলে গেছে। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে বড় বড় পরিবর্তন এসেছে। এসব পরিবর্তন ট্রাম্প কীভাবে মোকাবিলা করেন, তাই দেখার অপেক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সবাই।
গত ৬ নভেম্বর সামাজিক মাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু লেখেন, ‘হোয়াইট হাউসে আপনার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন আমেরিকার জন্য একটি নতুন সূচনা এবং ইসরায়েল ও আমেরিকার মহান বন্ধুত্বের প্রতি শক্তিশালী অঙ্গীকার।‘
উপসাগরীয় আরব দেশগুলোও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছে। সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত বলেছে, ইউএই ও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অটুট অংশীদারত্ব দ্বারা ঐক্যবদ্ধ। এই অংশীদারত্ব অগ্রগতির জন্য অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের পরাশক্তি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শত্রু ইরান এই নির্বাচনের কোনো গুরুত্ব নেই বলে মনে করে। ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে কে প্রেসিডেন্ট হলেন, না হলেন এতে তেমন কোনো পার্থক্য তৈরি হয় না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা ও লেবাননে যুদ্ধের অবসান এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের একীকরণ ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য এজেন্ডায় শীর্ষে থাকবে।
ফিলিস্তিন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ-এর নেতা মুস্তাফা বারঘোতি বলেন, নেতানিয়াহু এমন এক প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি হবেন, যিনি আগের তুলনায় অনেক কঠোর হবেন। কারণ আমি মনে করি না যে ট্রাম্প বর্তমান যুদ্ধ মেনে নেবে।
তবে তিনি এ-ও জানান, এতে অবশ্য ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য বদল হবে না। তাদের জীবনে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আসবে না। কারণ উভয় প্রশাসনই ইসরায়েলের প্রতি সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট।
সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক আলন পিংকাস সিএনএনকে বলেন, আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। এই সময় এই যুদ্ধ তার সামনে বড় ইস্যু হয়ে আসুক তিনি তা চাইবেন না।
পিংকাস বলেন, তিনি (ট্রাম্প) বলবেন: শেষ করো; আমার এটা দরকার নেই। ট্রাম্প সম্ভবত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে বিজয় ঘোষণা করতে এবং তারপর মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে একটি চুক্তি করতে চাপ দেবেন।
এই সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিকের ভাষ্য, ট্রাম্প ফিলিস্তিনি ইস্যু নিয়ে একেবারেই আগ্রহী নন। তার প্রথম মেয়াদে তিনি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সমর্থনের বিষয় সামনে আনেননি। বরং বলেছেন, তিনি সেই সমাধান চান, যা উভয় পক্ষ পছন্দ করবে।
অন্যদিকে বারঘোতির আশঙ্কা, ইসরায়েলকে দখলকৃত পশ্চিম তীরের অংশ সংযুক্ত করার অনুমতি দিতে পারেন ট্রাম্প। এমনটা হলে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের কবর রচিত হবে।
তবে এটাও মনে রাখতে হবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ইসরায়েলের পক্ষে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মার্কিন নীতি এবং আন্তর্জাতিক ঐক্যমতের বিপরীতে গিয়ে ২০১৭ সালে তিনি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এ ছাড়া তিনি গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেন। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে সিরিয়ার কাছ থেকে এই মালভূমি দখলে নিয়েছিল ইসরায়েল।
ট্রাম্প নিজেকে আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ইসরায়েলপন্থী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাবি করেন। নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথাও বলেন। তবে এই দুই নেতার সম্পর্ক সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। ২০২১ সালে হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় নেতানিয়াহুকে বিশ্বাসঘাতক বলেছিলেন ট্রাম্প।
নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি থেকে নেসেটের সদস্য বোয়াজ বিসমুথ সিএনএনকে বলেন, গাজা ও লেবাননে যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের নির্বাচন ঠিক সময়ে এসেছে। কারণ সেখানে যুদ্ধ শেষ হলে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হবে।
ট্রাম্পের প্রথম দফার শাসনামলে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে চারটি আরব রাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়। যদিও এই কারণে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা কিছুটা পিছিয়ে যায়।
বোয়াজ বিসমুথ বলেন, যখন যুদ্ধ শেষ হবে, তখন মধ্যপ্রাচ্যে সত্যিকারের রিসেট দেয়ার প্রয়োজন হবে। নতুন মধ্যপ্রাচ্য গড়ার সেরা ব্যক্তি হবেন ট্রাম্প।
নেতানিয়াহু ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক কৌশলবিদ নাদাভ শ্ট্রাউচলার বলেছেন, ট্রাম্পের নির্বাচন ইরানে ইসরায়েলের শত্রুদের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত গাজা ও লেবাননে যুদ্ধ শেষ করতে ইসরায়েলের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সম্ভবত ইরানের ওপর মনোযোগ দিতেই তিনি এমন কাজ করবেন।
ট্রাম্পের আগামী চার বছর ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইরানের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সময় হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ট্রাম্পের কড়া নজরদারিতে তেহরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ দেয়ার প্রচেষ্টা পুনরায় শুরু হতে পারে। এর ফলে ইরান বিশ্ব থেকে আরও বিচ্ছিন্ন এবং দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে সবচেয়ে দক্ষ চুক্তিকারী হিসেবে দাবি করেন। অথচ ২০১৫ সালে তিনিই ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে এতকরফা বেরিয়ে যান। দেশটির ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এমনকি দেশটির সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েও মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের প্রভাব খর্ব করতে পারেননি। সোলেইমানি তেহরানের আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের অন্যতম নেপথ্য কারিগর ছিলেন।
ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়েছে, তেল রপ্তানি বৃদ্ধি করেছে, আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সহায়তা বাড়িয়েছে এবং দুইবার ইসরায়েলে সরাসরি আক্রমণ চালিয়ে নজির স্থাপন করেছে।
তেহরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী একটি বিলবোর্ডের সামনে রাস্তা পার হচ্ছেন একজন নারী। ছবি : সংগৃহীত
তবে ইরানের সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর ওপর ইসরায়েলের আক্রমণে তেহরানের আঞ্চলিক সামর্থ্য হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতায় ইরানের প্রতিরোধ সক্ষমতা হারাতে বসেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক ও সিনিয়র উপদেষ্টা আলি ভায়েজ বলেন, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র যতটা হুমকির মুখোমুখি ততটাই নাজুক দেখাচ্ছে। একসঙ্গে এতগুলো সংকট মোকাবিলা করার মতো সীমিত ক্ষমতাই রয়েছে ৮৬ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেয়ির।
তিনি বলেন, এমন এক পরিস্থিতি হতে পারে যেখানে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই সব কাজ শেষ করতে বলবেন। অর্থাৎ নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে উত্তেজনা বাড়তে পারে। ইরান ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দুর্বল করতে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে ইসরায়েল। সবকিছু শেষ হলে ট্রাম্প এসে নিজেকে শান্তিদূত হিসেবে পরিচিত করবেন।
তবে যদি বাইডেন প্রশাসন শেষ কয়েক মাসে ইসরায়েলের উত্তেজনা বৃদ্ধির ক্ষমতায় রাশ টানার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এই পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে একটি চিঠি পাঠিয়ে গাজার মানবিক পরিস্থিতি উন্নত না করলে পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেছে, যা এই পদক্ষেপের পূর্বাভাস হতে পারে।
ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফিরতে পারেন, এমন আগাম আভাস পেয়ে তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পরও উপসাগরীয় আরব দেশগুলো তার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি তাদের জন্য ফলপ্রসূ হতে পারে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নত হয়। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে রিয়াদকে বেছে নিয়ে তিনি ইতিহাস গড়েছিলেন এবং ২০১৮ সালে সৌদি এজেন্টদের হাতে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতার মুখে পড়েন, তখনও ট্রাম্প তার পাশে ছিলেন।
বাহরাইনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য নীতির সিনিয়র ফেলো হাসান আল হাসান বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের মতো মনোভাবাপন্ন নেতাদের সঙ্গে কাজ করার এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক পরিচালনার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে। এটি অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনার ক্ষেত্রেও দেখা যায়।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে জড়িত ছিল এবং ইরানের সঙ্গে উভয় দেশের সম্পর্ক ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। কিন্তু এরপর থেকে উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের পররাষ্ট্র নীতি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করেছে। সামরিক হস্তক্ষেপ সীমিত করা ছাড়াও ইরানের মতো পুরোনো শত্রুদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের দিকে ঝুঁকেছে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহের মধ্যে বহুপাক্ষিক বিশ্বে নিজেদের মিত্র জোটে বৈচিত্র্য এনেছে এসব দেশ।
আল হাসান বলেন, ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন সম্ভাবনা রয়েছে যে ট্রাম্প সর্বোচ্চ চাপের অবস্থানে ফিরে যেতে পারেন। ইরানের সঙ্গে উন্নত সম্পর্কের কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোর ওপর সর্বোচ্চ চাপ নীতিতে সামঞ্জস্য রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও বেশি চাপ আসতে পারে।
এ ছাড়া আমেরিকার আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা নিয়ে সৌদি আরব ও আমিরাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। গত কয়েক বছরে তেল উৎপাদনকারী এই দেশগুলো চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সম্পর্ক বিস্তার করেছে।
বিশ্বের বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকসে যোগ দিতে সৌদি আরব ও আমিরাতকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। চীনের নেতৃত্বাধীন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনে (এসসিও) সৌদি আরবকে ডায়ালগ পার্টনার স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে।
রিয়াদ ও আবুধাবি তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর জন্য চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে এবং চীনের প্রভাব সীমিত করার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সৌদি আরব ও আমিরাত ক্রমবর্ধমানভাবে চীনা বিশেষজ্ঞদের ওপর নির্ভর করছে।
আল হাসান বলেন, চীনের সঙ্গে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সম্পর্ক ছেদের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন উপসাগরীয় দেশগুলোর ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করবে কিনা, এটা একটি প্রশ্ন হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে সম্ভাব্য ট্যারিফ ও বাণিজ্যযুদ্ধ উপসাগরীয় রপ্তানির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্যে অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করেন ট্রাম্প। তবে ফিলিস্তিনের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পথরেখা না হওয়া অব্দি সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ। অন্যদিকে ইসরায়েলেও এই বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি নয়।
আল হাসান বলছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টায় অনিবার্য হয়ে উঠেছে কাতার। কিন্তু এই সম্পর্ক ট্রাম্প আমলে দেশটির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি বলেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ কেমন হবে, তা নিয়ে তারা সম্ভবত খুব উদ্বিগ্ন।
সরদার একরাম