news-details

সংস্কার কমিশনে প্রস্তাব: সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস হবে সংবিধানের মূলনীতি

ছবি: সংগৃহীত


জাতীয় সংসদের কেবিনেট কক্ষে রবিবার পেশাজীবীদের সাথে সংবিধান সংস্কার কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, এডভোকেট শফিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআই প্রতিনিধি নাসরিন বেগম, চৌধুরী মূকিম উদ্দিন কেজে আলী, জামিল উদ্দিন মিল্টন, ইঞ্জিনিয়ার কবির হোসেন ও ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন।

এসময় সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, লেখক ফিরোজ আহমেদ এবং লেখক ও মানবাধিকারকর্মী মো. মুস্তাইন বিল্লাহ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএফইউজে কোষাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম বলেন,ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সেন্টিমেন্টকে মাথায় নিয়ে দেশের সংবিধানকে নতুন করে লিখতে হবে। বিদ্যমান সংবিধানের উপর কিছু ঘষামাজা করে সংবিধান সংশোধন শেষ করলে চলবেনা। 

তিনি বলেন,সংবিধানের মূল নীতি হবে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস।অন্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন তা এই মৌলিক নীতির সাথে সাংঘর্ষিক হলে তা বাতিল বেলে গন্য হবে।

তিনি আরো বলেন,নির্বাচন পদ্ধতি হবে দলের প্রতিকে। প্রত্যেক দল প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে সংসদে আসন পাবেন।সংসদ সদস্যদের কাজ হবে আইন প্রনয়ন করা। এলাকার উন্নয়ন কাজ করবেন অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা।বর্তমানে সব উন্নয়ন কাজের সাথে এমপির সংশ্লিষ্টতার কারনে তিনি হয়ে উঠেছেন সবচেয়ে বড় মাস্তান বা গডফাদার।সর্বোপরি ছোট-বড় সব দলের প্রতিনিধিত্ব কায়েম হবে এই পদ্ধতিতে। সবাই মিলে দেশ গঠনের পথে দেশ এগিয়ে যাবে।

তিনি প্রস্তাব করেন,সংবিধানের মূলনীতি ৪টি আছে বর্তমানে যা নীতি বা আদর্শগতভাবে পরস্পরবিরোধী।সমাজতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও জাতীয়তাবাদ এই তিনটি নীতি বাদ দিয়ে শুধু গণতন্ত্রই মূলনীতি হিসেবে রাখতে হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপর ন্যস্ত। প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। যা গত ১৫ বছর আমরা লক্ষ্য করেছি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট খুব জরুরি। কারণ দ্বি-কক্ষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটিতে 'একক ক্ষমতার বলয়' বা 'এক ব্যক্তির শাসন' চলে না। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী চাইলেই আইন প্রণয়ন ও বাতিল করতে পারেন না।’

৭০ অনুচ্ছেদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই অনুচ্ছেদের এক জায়গায় বলা আছে সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দান করলে তাদের আসন শূন্য হবে। ফলে কোনো সংসদ সদস্য চাইলেও তার দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া সম্ভব নয়। তার মানে হলো সরকারি দল যা চাইবে সংসদে তা-ই হবে!’

সাংবাদিকদের এ নেতা আরও বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় না- এই যুক্তির উপর ভিত্তি করেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম হয়েছে বাংলাদেশে। এটা সত্য যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের নির্বাচন নিয়ে খুব একটা সমালোচনা শোনা যায়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে, নিজেদের অধীনে নির্বাচন দিয়ে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। আমরা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার পূণর্বহাল চাই।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলো মুছে দিয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনীর সমালোচনা করে কাদের গণি চৌধুরী আরও বলেন, ‘এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশে আইনের শাসনের কবর রচনা করা হয়েছে। দেশের বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করার একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংশোধনীর উদ্দেশ্য একব্যক্তির নেতৃত্বের অধীনে ফ্যাসিজমকে দীর্ঘায়িত করা। তাই এই সংশোধনী বাতিল চাই।’

সংবিধানের ৭ ক ও খ অনুচ্ছেদের সমালোচনা করে তিনি বলেন,‘গণতন্ত্রকে হত্যা, সংকুচিত ও নির্বাসিত করার জন্য এই ৭ ক ও খ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একনায়কত্ব চালিয়ে নিতে এবং মানুষের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি ও কণ্ঠরোধ করতে এই বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে আঘাত করে।’

গণভোট বিষয়ে কাদের গণি বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধানটি বাতিল করে মৌলিক বিষয়ে জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান বিলোপ করে কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে।’ এসময় তিনি গণভোটের বিধান পুনর্বহালের পক্ষে মত দেন।

সাংবাদিকদের এ নেতা সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন, পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে না পারা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধনের প্রস্তাব আনেন। এসময় সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটা যেভাবে আগে ছিল, সেভাবে চাইছি।’

 


স্টাফ রিপোর্টার