news-details

মিডিয়ার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হাসনাত আব্দুল্লাহ

ছবি: সংগৃহীত


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, আমি মিডিয়ার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। কারণ গত ৫ আগস্টের আগে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদফতরের (ডিজিএফআই) প্রেসক্রিপশনে মিডিয়া চলতো। গণভবনের প্রেসক্রিপশনে নির্ধারিত হতো কোন নিউজের হেডলাইন কী হবে।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে বেনার নিউজ বাংলা আয়োজিত ‘কী চাই নতুন বাংলাদেশে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দেখেছি গণভবনে গিয়ে মিডিয়া যখন প্রশ্ন করতো, তখন এমনভাবে প্রশ্ন করতো; যেন তাদের পূর্বাচলের প্লট নিশ্চিত হয়। তাদের মধ্যে একটা মূল্যের প্রবণতা ছিল। মিডিয়া এবং মিডিয়াকর্মীরা ছিল গণভবনমুখী। আমার অনুরোধ, আপনারা কখনও গণভবনমুখী হবেন না। আপনার জনগণমুখী হন। আমি প্রত্যাশা করবো, ফ্যাক্ট যেটা, আপনারা সেটা প্রচার করবেন, ৫ আগস্টের আগে প্রায় সব মিডিয়া যেটা করেনি।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনও ভয় থাকবে না। আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই, দেশ থেকে মানুষ চলে যেতে বাধ্য হবে না। সবাই বাংলাদেশি বলতে গর্ববোধ করবে। আমি চাই বাংলাদেশে কোনও দূষণ থাকবে না।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন বলেন, ‘আমরা সে রকম বাংলাদেশ চাই, যেটা গত ১৬ বছরে পাওয়া যায়নি। আমরা সেই বাংলাদেশ চাই, যেখানে বাকস্বাধীনতা থাকবে। এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি থাকবে, চাকরির জন্য কোনও রাজনৈতিক দল করতে হবে না, যে বাংলাদেশে কোনও বিভেদ থাকবে না।’

অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ বলেন, ‘আমি ঠিক সে রকম একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনও দুস্থ শিল্পী থাকবে না। আমি নতুন বাংলাদেশের প্রত্যেক এলাকায় খেলার মাঠ চাই। আর্ট অব লিসেনিংটা অন্তত জরুরি, যেখানে সবার কথা শোনা হবে, কথার মূল্যায়ন করা হবে। আমি চাই নতুন বাংলাদেশে সবার কথার এবং মতামতের মূল্যায়ন হবে। আমি ছিলাম সিসিমপুরের ইকরি। সিসিমপুরে বাঘ শেয়াল সবার যেমন স্বাধীনতা ছিল এবং দিনশেষে সবাই এক থাকতো, আমি চাই বাংলাদেশটা তেমন হোক।’

মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, ‘বিগত সময়ে বেশিরভাগ মিডিয়া সরকারের চাপে মুখ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। তবু অনেকে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সংবাদ দিয়েছে। নতুন এই বাংলাদেশে আমার অন্যতম প্রত্যাশা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।’

নতুন বাংলাদেশে কী চাই এমন প্রশ্নের জবাবে তুলি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একটা বাধ্যবাধকতা থাকবে, একজন নাগরিকের সঙ্গে তারা কী করতে পারবেন, কী করতে পারবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে আগে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের প্রথম চাওয়া জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার। নতুন বাংলাদেশে যে ভাইদের আমরা হারিয়েছি, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’

ড. মোবাশ্বার হাসান বলেন, ‘আমি সাত বছর পর দেশে এসেছি। সাত বছর আগে একটা সেলে ৪৪ দিন গুম ছিলাম। গুম থেকে মুক্তি পেয়ে আমার নিজের দেশে আমাকে শরণার্থী মনে হয়েছে। আমি আর আমার দেশে অবস্থান নিতে পারিনি। বিদেশ থেকেই ফ্যাসিবাদীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে সবাই মানবাধিকারটাকে সম্মান করবে। এই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে ছোট-বড় সবার অবদান আছে। আমি এরকম বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে কেউ যদি ভুলেও গুমের চেষ্টা করে, তাহলে জনগণ প্রতিরোধ করে তুলবে। মানবিকতা রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটা পরতে পরতে অবস্থান করবে।’

আলোচনা সভায় আরও ছিলেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, জুলাই আন্দোলনে নিহত গোলাম নাফিসের মা নাজমা আক্তার এবং নিহত জাহিদ হাসানের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন, বেনার নিউজ বাংলার সাংবাদিকরা।


এনএনবিডি ডেস্ক