নাম - ছবি : সংগ্রহীত
১। নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয় ( ভারত, ৬০০ খ্রীষ্টপূর্ব )
নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ও পুর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে গণ্য করা হয়। ৬০০ খ্রীষ্টপূর্বের দিকে সে সময়কার রাজা সকরাদিত্য প্রতিষ্ঠা করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতি ও শিক্ষার উজ্জল দৃষ্টান্ত বহন করে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল যেমন ব্যাবিলন, গ্রিস, সিরিয়া এবং চীন থেকে ছাত্ররা পড়াশুনা করতে আসতো এখানে। অর্থনীতিবিদ্যা, ব্যবসা, ভাষাশিক্ষা, দর্শনশাস্ত্র, ব্যাকরণ, চিকিৎসা, সার্জারি, সমরবিদ্যাসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তির জন্য নূন্যতম বয়স ছিলো ১৬ বছর। ১১৯৩ সালে বখতিয়ার খিলজি নালান্দা আক্রমন করে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের হত্যা করে, বইপত্র পুড়িয়ে দেয় এবং এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৬ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আবদুল কালাম নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার প্রতিষ্ঠার ধারণা দেন। বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে উত্তর ভারতের বিহার রাজ্যে নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০১৪ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
২। আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয় (মরক্কো, ৮৫৯ খ্রীষ্টাব্দ)
পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম এখনো চালু থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয় । ফাতিমা আল-ফিহরি নামের একজন মহিলা ৮৫৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
শুরুর দিকটায় শুধু ন্যাচারাল সাইন্স পড়ানো হতো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৭ সালের পরে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা চালু হয় এখানে। শুরুতে একটি সাম্প্রদায়িক মসজিদের সাথে যুক্ত শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে আইন বিজ্ঞান, ইসলামিক শিক্ষা, আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ, ইংরেজী ভাষা ও ফরাসি ভাষা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হয় এখানে।
৩। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় (মিসর, ৯৭০-৯৭২ খ্রীষ্টাব্দ)
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম অব্যহত আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো আরবি সাহিত্য, সুন্নি ইসলামি শিক্ষা এবং ধর্মীয় শিক্ষার আঁতুড়ঘর।
বর্তমান সময়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিকে কুরআন ভিত্তিক বিজ্ঞান এবং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর শিক্ষা, অপরদিকে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা নিয়ে পড়ানো হয়। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারকে ইসলামী সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় যা বর্তমানে অনলাইনে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
৪। আল-নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বাগদাদ, ১০৬৫ খ্রীষ্টাব্দ)
খাজা নিজাম-উল-মুলুক এগারো শতকের শুরুর দিকে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি খুবই জনপ্রিয় ও সফল হিসেবে সুনাম লাভ করে। তৎকালীন কবি, সাহিত্যিক ও জ্ঞানী ব্যাক্তিরা এখানে শিক্ষা দেয়া এবং জ্ঞান চর্চার জন্য আসতেন। ১০৯১ সালে নিজাম-উল-মুলুক বিখ্যাত দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক ইমাম আল-গাজ্জালিকে এর অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেন। এখানে বিনামূল্যে শিক্ষা দেয়া হতো।
মধ্যযুগের গুরুত্বপূর্ণ ফারসি কবিদের অন্যতম এবং ইরানের প্রধানতম কবি শেখ সাদি (রাঃ) আল-নিজামিয়ার ছাত্র ছিলেন। সাহিত্যের জন্য পাশ্চাত্যেও তিনি ব্যপকভাবে সমাদৃত। পরবর্তীতে বাগদাদ আক্রমণ হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।
৫। বলোগনা বিশ্ববিদ্যালয় (ইতালি, ১০৮৮ খ্রীষ্টাব্দ)
ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতালিতে ১০৮৮ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এখনও সুনামের সাথে চালু রয়েছে। শুরুর দিকেই ইউরোপের সর্বত্র থেকে পড়তে আসত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে ২৩ টি স্কুলের অধীনে প্রায় ৮৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে বলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যার মধ্যে প্রায় ৩০,০০০ শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর পর্যায়ের। ইতালিতে অবস্থিত বেশ কয়েকটি শহরে এবং আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে বলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা রয়েছে।
একটি বিশেষ জরিপে (QS World University Rankings) ২০১৭ সালে বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১৮২তম।
এনএনবিডি ডেস্ক