নাম - ছবি : সংগ্রহীত
বীরত্ব যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস বহন করা জাতীয় স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে এ প্রজন্মের তরুণদের জানাতে হবে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে উনিশত একাত্তর- শত চাপ উপেক্ষা করে যে রাষ্ট্রের জন্ম, তার স্মৃতি সৌধটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭৮ সালে।
তারুণ্যের উচ্ছ্বল-আত্মত্যাগের অনন্য স্বীকৃতির বড় সব আন্দোলনকে ধারণ করেই তৈরি হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। যিনি এর নকশাকার ছিলেন, সেই সৈয়দ মঈনুল হোসেনও সে সময় ছিলেন ২৬ বছরের টগবগে তরুণ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৭৬ সালে স্থাপত্যবিদ্যায় সৈয়দ মঈনুল স্নাতক পাস করেন।
১৯৭৮ সালের সরকারের গণপূর্ত বিভাগ প্রথমবারের মতো স্মৃতিসৌধ তৈরির নকশা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সে বারের জমা পড়া নকশা বিচারকদের পছন্দ হয়নি। দ্বিতীয়বার নকশা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে গণপূর্ত বিভাগ। বিজয়ী নকশকারের জন্য দু'লাখ টাকা পুরস্কার নির্ধারণ করা হয়। ৫৭টি নকশা পড়েছিল সে সময়। সেখান থেকে সৈয়দ মঈনুল হোসেনের নকশাটি নির্বাচিত হয়।
সে নকশা অনুসারে নির্মিত হয়, জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেনের জবানি থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে, স্মৃতিসৌধের সাতটি খাঁজের সাতটি আন্দোলন, সংগ্রামকে প্রতিনিধিত্ব করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে নীচের খাঁজটি প্রতিনিধিত্ব করছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আর সবচেয়ে উপরের খাঁজটি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ।
এর বাইরে বাকি ৫টি খাঁজের ১৯৫৪'র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬'র শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬'র ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯'র গণঅভ্যুত্থান।
স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন মারা যাওয়ার আগে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, সব চাপ উপক্ষো করে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে বিশ্বে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে, স্বাধীন হয়েছে, সেটিই তিনি এখানে তুলে ধরেছেন। জাতির ইতিহাস একক কাঠামোয় উঠে এসেছে। জানান দিচ্ছে, তারুণ্যের অভূতপূর্ব সাড়া আর জুলুমের বিরুদ্ধে অদম্য একজাতির অনবদ্য ইতিহাস তৈরির পেছনের গৌরবগাঁথা।
বাংলাপিডিয়ায় স্মৃতিসৌধের বর্ণনায় বলা হয়েছে, অসমান উচ্চতা ও স্বতন্ত্র ভিত্তির ওপর সাতটি ত্রিভুজাকৃতির প্রাচীর নিয়ে মূল সৌধটি গঠিত। সর্বোচ্চ স্তম্ভটি সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্যের ভিত্তির ওপর, আর সর্বদীর্ঘ ভিত্তির ওপর স্থাপিত স্তম্ভটি সবচেয়ে কম উচ্চতার। প্রাচীরগুলি মাঝখানে একটি ভাঁজ দ্বারা কোণাকৃতির এবং একটির পর একটি সারিবদ্ধভাবে বসানো। কাঠামোটির সর্বোচ্চ বিন্দু বা শীর্ষ ৪৫.৭২ মিটার উঁচু। কাঠামোটি এমনভাবে বিন্যস্ত যে, ভিন্ন ভিন্ন কোণ থেকে একে ভিন্ন ভিন্ন অবকাঠামোয় পরিদৃষ্ট হয়।
এতে বলা হয়, প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে প্রবেশ করলে স্তম্ভটিকে প্রবেশদ্বারের অক্ষ বরাবরই চোখে পড়ে। কিন্তু মূল বেদীতে পৌঁছতে হলে বেশ কিছু উঁচু নিচু এলাকা, পেভমেন্ট ও একটি কৃত্রিম লেকের উপর নির্মিত সেতু পার হতে হয় এ সব কিছুই স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রামকে চিহ্নিত করছে।
স্মৃতিসৌধ আমাদের গৌরবগাঁথার বয়ান পৌঁছে দিক আগামী প্রজন্মের কাছে।
সূত্র: ইন্টারনেট
এনএনবিডি ডেস্ক